ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নজরুলের কষ্ট- নজরুলের স্বপ্ন

আবু বকর ইয়ামিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:১৬, ১৯ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নজরুলের কষ্ট- নজরুলের স্বপ্ন

আবু বকর ইয়ামিন : ভোর ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে কাজ শুরু হয় তার| শেষ হয় রাত ১০টায়। তখন পড়তে বসে সে। যদিও সারাদিনের কর্মক্লান্তিতে চোখজুড়ে রাজ্যের ঘুম। কিন্তু উপায় নেই। ঘুমিয়ে পড়লেতো চলবে না। তাকে যে সফল হতেই হবে। তাই প্রচণ্ড কষ্ট হলেও থেমে থাকেনি তার সাধনা। আর তার ফসল ৪ দশমিক ৫৮।

বলছিলাম নজরুল ইসলামের কথা। ক্যান্টিনে দিন-রাত পরিশ্রম করে এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৪ দশমিক ৫৮ পেয়ে পাস করেছে সে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জিয়া হলে ক্যান্টিন বয় হিসেবে কাজ করে তার দৈনিক রোজগার মাত্র দেড়শ’ টাকা। এ টাকা থেকে নিজের পড়া লেখার খরচের পাশাপাশি বাড়িতে টাকা পাঠায়।

তবে ক্যান্টিনেই থাকা-খাওয়ার সুবিধা থাকায় রোজগারের প্রায় পুরো টাকাই সে পাঠিয়ে দেয় বাড়িতে। তা না হলে যে বাবা, মা, বোন না খেয়ে থাকবে। ওষুধ কেনা হবে না তাদের। অভাবের কারণে নজরুলের পড়া-লেখা বন্ধ হয়ে যাচ্ছিল প্রায়। কিন্তু অদম্য ইচ্ছা থেকে ক্যান্টিনে কাজ করে পড়ালেখা চালিয়ে গেছেন তিনি।

নজরুল ইসলামের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া থানায়। বাবা মা আর চার ভাই বোনের সংসার তার। বড় ভাই বিয়ে করে আলাদা হয়ে গেছেন। সম্পদ বলতে শুদু নিজেদের ভিটা-মাটি। অন্যের বর্গা জমিতে কাজ করে সংসার চালাচ্ছিলেন নজরুলের বাবা। কিন্তু দুই বছর ধরে বাবা অসুস্থ। হাত-পায়ে কাজের শক্তি পান না। তাই আয়-রোজগার বন্ধ হয়ে যায়। ধার-দেনা করে বড় মেয়েকে বিয়ে দেন।

 

বাবা অসুস্থ হওয়ায় পুরো দায়িত্ব এসে পড়ে নজরুলের কাঁধে। ছোটো কাঁধে বড় বোঝা। পরিবার থেকে এসএসসি পাস করা নজরুলের ওপর চাপ আসে পড়া-লেখা বন্ধ করে পরিবারের হাল ধরতে হবে। এর আগে ২০১৭ সালে জিপিএ ৪ দশমিক ৬০ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় পাস করেছেন তিনি। নজরুল বলেন, নানা চিন্তা করে ক্যান্টিনে কাজ নেই। কষ্ট করে এইচএসসি ফাইনাল পরীক্ষা দিয়েছি। বুধবার  ফল প্রকাশ হয়েছে। আমি জিপিএ-৪.৫৮ পেয়েছি। পরিবারের সবার চোখে আনন্দের অশ্রু।

পরীক্ষার ফলের কথা বলার সময় নজরুলে চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক খেলা করে। কিন্তু পরক্ষণেই তা আবার মিলিয়ে যায়। তার বড় চিন্তা সামনে আর পড়া-লেখা হবে কি না। অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থেকে নজরুল বলেন, ‘পরিবারের অভাবে কাজ নিয়েছি ক্যান্টিন বয় হিসেবে। দিনে ১৫০ টাকা দেয়। কাজ না করলে টাকা দেয় না। আমার থাকা খাওয়া ফ্রি। এখান থেকে যা টাকা পাই সেটা বাসায় পাঠিয়ে দিই। তাতে সংসারের কিছু আঞ্জাম হয়।’

নজরুল আক্ষেপ করে বলেন, ক্যান্টিনে অনেক চাপ। সকাল ৬টায় উঠে ১০টা পর্যন্ত কাজ করতে হয়। এরপর দুই ঘন্টা পর দুপুর ১২টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত ডিউটি। তারপর আবার সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ। তখন প্রচণ্ড ক্লান্তি থাকলেও দুই ঘন্টার মতো পড়াশুনা করি। সারাদিনের পরিশ্রমের কারণে পড়ায় মন বসে না। ঘুম চলে আসে। রাত ১২টায় ঘুমাতে যাই।

নজরুলের স্বপ্ন এখন দেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠে ভর্তি হওয়া। কিন্তু কণ্ঠে তার হতাশা। এভাবে কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার জন্য যে পড়া-লেখা, সেটি করা সম্ভব হচ্ছে না। হাতে আছে দুই থেকে তিন মাস সময়। ‘এ কয়টা মাস যদি আমি কাজ বন্ধ রেখে পড়তে পারতাম, তাহলে হয়তো আমি ভালো কিছু করতে পারতাম। কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পেলে টিউশনি করে হলেও সংসারের হাল ধরতে পারতাম। কিন্তু এ কাজ বন্ধ রাখাতো আমার পক্ষে সম্ভব না। কাজ না করলে বাবা-মা, বোন খাবে কী?’

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৮ জুলাই ২০১৯/ইয়ামিন/সাজেদ/এনএ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়