ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নদী ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে তানিয়াদের শিক্ষার অধিকার

ছাইফুল ইসলাম মাছুম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫২, ১৯ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদী ভাঙন কেড়ে নিচ্ছে তানিয়াদের শিক্ষার অধিকার

প্রতীকী ছবি

ছাইফুল ইসলাম মাছুম : তানিয়ার এখন বয়স ১৩ বছর। স্কুলে যায় না। পঞ্চম শ্রেণীতে পড়ার সময় বন্ধ করতে হয়েছে তার পড়াশুনা। দিন মজুর বাবা নদী গর্ভে হারিয়েছেন ভিটে মাটি। তানিয়ারা এর পর আশ্রয় নেয় তার নানা বাড়ি, নদী হানা দেয় সেখানেও। তলিয়ে যায় তার নানা বাড়ি। এভাবে সব মিলিয়ে পাঁচবার তানিয়াকে তার বসত বদলে ফেলতে হয়। এ কারণেই বন্ধ হয়ে যায় তার পড়াশুনা।

ভোলা জেলার মনপুরা উপজেলায় এ রকম তানিয়াদের গল্প আছে অগণিত। নদী খেয়ে নিচ্ছে তাদের জীবনের স্বপ্ন স্বাদ, বেঁচে থাকার মৌলিক অধিকার।

অব্যাহত নদী ভাঙনে মনপুরা দ্বীপ ক্রমেই বিলীন হয়ে যাচ্ছে নদী গর্ভে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে, ১৯৭৩ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত মনপুরা দ্বীপটি প্রায় ৩৪ বর্গ কিলোমিটার এলাকা হারায়। নদী ভাঙনের ফলে কোনো কোনো পরিবারকে ছয় থেকে সাত বার পর্যন্ত স্থান ত্যাগ করতে হয়েছে। এতে নদী ভাঙন কবলিত মানুষের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থান ভেঙে পড়ছে। পরিবারগুলোর শিশুরা হারাচ্ছে তাদের শিক্ষার অধিকার।

নদী ভাঙনের কবলে পড়ে স্থানচ্যুতি ঘটেছে বহু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের। নদী ভাঙন কবলিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্য রয়েছে হাজির হাট মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয়, চর কৃষ্ণপ্রসাদ প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনপুরা প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলাতলী প্রাথমিক বিদ্যালয়, আন্দিরপাড় সরকারি বিদ্যালয়, দাসের হাট প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাছুয়াখালী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনপুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, আন্দিরপাড় মাধ্যমিক বিদ্যালয়সহ আরো অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

এতে ভেঙে পড়ছে মনপুরা উপজেলার সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা। শিক্ষার্থীরা হয়ে পড়ছে অনিয়মিত। ঝরে পড়ছে বহু শিক্ষার্থী। বেড়ে গেছে কন্যা শিশুদের বাল্য বিবাহর হার। সেই সঙ্গে শিশু শ্রমও।

সজীব উদ্দিন (১৫)। উত্তর সাকুচিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী। সজীব জানান, দুইবার নদী ভাঙনের শিকার হয়েছেন তার পরিবার। তার পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ায়, কয়েক মাস স্কুলে যাওয়া হয়নি। পরে আবার ভর্তি হতে হয়েছে আরেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে।

হাজির হাট মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাবিহা আক্তার মীম (১৫)। মীম জানান, তিনি যখন প্রথম শ্রেণীতে পড়তেন, তখন তার স্কুল হাজির হাট মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় ও তাদের বসত বাড়ি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যায়। নতুন জায়গায় নতুনভাবে আবার পড়াশুনা শুরু করতে তাকে অনেক সমস্যায় পড়তে হয়েছে।

নদী ভাঙন কবলিত উপকূলীয় মানুষের জীবন যাত্রা নিয়ে কাজ করছেন বেসরকারি সংস্থা কোস্ট ট্রাস্ট। কোস্ট ট্রাস্টের মনপুরার স্থানীয় কর্মকর্তা আতিকুর রহমান রাইজিংবিডিকে জানান, নদী ভাঙনের কারণে প্রতি বছর মনপুরা দ্বীপের প্রায় ২৫% শিক্ষার্থীর পড়াশুনা বন্ধ হয়ে যায়। স্থায়ীভাবে নদী ভাঙন রোধ করা না গেলে, এ সংখ্যাটা আরো বাড়বে বলে তিনি আশংকা প্রকাশ করেন।

মনপুরা উপজেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মো. মিজানুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, নদী ভাঙনের কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে বড় ধরনের সমস্যা দেখা দিচ্ছে। কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদী ভাঙনের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে আগের অবকাঠামোতে ফিরিয়ে আনা সম্ভব হয়না। ফলে শিক্ষার্থীদের পরিবেশগত সমস্যা তৈরি হয়। দেখা যায়, যে স্কুলের শিক্ষার্থীরা পাকা ভবনে ক্লাশ করতো, নদী ভাঙনের কারণে ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের ক্লাশ করতে হয় খোলা মাঠে।

তিনি বলেন, সম্প্রতি এমন সমস্যায় পড়তে হয়েছে উপজেলার আন্দির পাড় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। নদী ভাঙনের শিকার হয়ে স্কুলটির শিক্ষার্থী সংখ্যাও অনেক কমে গেছে।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৯ এপ্রিল ২০১৭/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়