ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নদীগর্ভে সাইক্লোন সেন্টার, আশ্রয় হবে কোথায়?

রাহাত সাইফুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৫৬, ৯ নভেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নদীগর্ভে সাইক্লোন সেন্টার, আশ্রয় হবে কোথায়?

উপকূলের মানুষ নদীর সঙ্গে প্রতিনিয়ত যুদ্ধ করেন। বেড়িবাঁধ না থাকায় সামান্য জোয়ারেই প্লাবিত হয় গ্রামাঞ্চল। অর্থনৈতিক দৈন্যে এসব অঞ্চলের বেশিরভাগ কাঁচা ঘরবাড়ি। বন্যা, জলোচ্ছ্বাস, ঘূর্ণিঝড়ের পানিতে প্লাবিত হয় উপকূলীয় অঞ্চল। এসময় একমাত্র ভরসা আশ্রয়কেন্দ্র। হাজার হাজার মানুষ এসে ঠাঁই নেয় আশ্রয়ন কেন্দ্রগুলোতে। কিন্তু সেই আশ্রয়কেন্দ্রই আশ্রয়হীন হয়ে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে মাস দুয়েক আগে। ‘বুলবুল’-এ চালিতাবুনিয়ার মানুষ কোথায় আশ্রয় নিবে? এমন প্রশ্ন নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করছেন রাঙ্গাবালীর উপজেলার বাসিন্দারা।

চালিতাবুনিয়া ১৯৯০ সালে ইউনিয়নে রূপান্তরিত হয়। এখানে প্রায় ১০ হাজার মানুষ বসবাস করছেন। এখানে নেই কোন উন্নত মানের হাসপাতাল। কেউ যদি হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন, তখন চিকিৎসা নেয়ার জন্য যেতে হয় গলাচিপা উপজেলায়। যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ট্রলার। গলাচিপা শহরে আসতে প্রথমে নৌকাযোগে যেতে হয় পানপট্টি, সেখান থেকে গাড়িযোগে। আর যদি আবহাওয়া খারাপ থাকে, তখন আর ট্রলার বা নৌকা নিয়ে যাওয়া যায় না। ঝড়-তুফান হলে এই নদী খুব ভয়াবহ রূপ ধারণ করে। যাওয়ার আর কোন বিকল্প পথ থাকে না। প্রকৃতির কাছে এখানকার মানুষ খুবই অসহায়।

এই ইউনিয়নের তিনদিকে নদী। একদিকে সাগর। চারদিক থেকে অব্যাহত ভাঙ্গন গিলে খাচ্ছে ছোট্ট এই গ্রামটি। ভাঙ্গনে আয়তনে যেমন কমছে ইউনিয়নটি, তেমনি কমছে জনসংখ্যা। অন্যদিকে বাড়ছে উদ্বাস্তু। আয়তন ও জনসংখ্যায় এমনিতেই চালিতাবুনিয়া ইউনিয়ন সবচেয়ে ছোট। তার ওপর গত চার-পাঁচ দশক ধরে চলছে অব্যাহত ভাঙ্গন। ইউনিয়নটির দক্ষিণে বিস্তীর্ণ সাগর এবং অপর তিনদিক নদী দ্বারা বেষ্টিত। এর মধ্যে প্রমত্তা ডিগ্রী ও দারচিড়া নদী ক্রমে গিলে খাচ্ছে ইউনিয়নটিকে। আরেক প্রমত্তা নদী আগুনমুখার তীব্র স্রোত কোড়ালিয়ার চরে বাধা পেয়ে ডিগ্রী ও দারচিড়া নদীকে সর্বগ্রাসী করে তুলছে। আটটি গ্রাম নিয়ে গঠিত চালিতাবুনিয়া ইউনিয়নের চারটি গ্রামই পড়েছে ভয়াবহ ভাঙ্গনের কবলে। গ্রামগুলো হচ্ছে-উত্তর চালিতাবুনিয়া, বিবিরহাওলা, মরাজাঙ্গি ও গোলবুনিয়া গ্রাম। এরই মধ্যে অন্তত চারশ বাড়িঘর ও বিপুল পরিমাণ জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নতুন করে আরও অন্তত এক হাজার বাড়িঘর ও প্রতিষ্ঠান এখন ভয়াবহ হুমকির মুখে রয়েছে। বাড়িঘর বিলীন হওয়া লোকজনের একটি অংশ বেড়িবাঁধসহ রাস্তার ওপর পলিথিন টানিয়ে উদ্বাস্তু জীবন-যাপন করছে। এছাড়া ভাঙ্গনে বিলীন হয়েছে কয়েক হাজার একর ধানী জমিসহ বহু সরকারী-বেসরকারী স্থাপনা। এর মধ্যে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা সাইক্লোন সেন্টারটি দুই মাস আগে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে দিনাতিপাত করছেন চালিবুনিয়াবাসি। মরার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে আসছে ‘বুলবুল’-এর আঘাত।

চারদিকে যখন বুলবুলে আঘাতের সতর্কতা তখন এই গ্রামের মানুষ কোথায় আশ্রয় নিবেন সেটা নিয়ে ভাবছেন। স্থানীয় কয়েকটি স্কুল আর ইউনিয়ন পরিষদে প্রায় দশ হাজার মানুষের জন্য অপ্রতুল। ৫-৭ ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসে পুরো ইউনিয়ন তলিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এদিকে চারদিক নদী হওয়ার কারণে রাঙ্গাবালীর সঙ্গে স্থলপথ নেই। এখানে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম হলো লঞ্চ, ট্রলার। আতঙ্ক বিরাজ করছে মানুষের ভেতর।

আগুনমুখা ও ডিগ্রী নদীতে বালু উত্তোলন এবং চর ড্রেজিং না করায় ভাঙ্গনের তীব্রতা দিন দিন বাড়ছে। অনেক জায়গায় এখন আর বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ খুঁজে পাওয়া যাবে না। অবস্থা এমন পর্যায়ে এসেছে, নদী ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা না হলে মানচিত্র থেকে চালিতাবুনিয়া পুরোপুরি হারিয়ে যাবে।  উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, অথচ পিছিয়ে আছে দক্ষিণবঙ্গের এই ইউনিয়ন। আধুনিকতার ছোঁয়ার লেশমাত্র লাগেনি। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে ছবির মতো সুন্দর ছোট্ট এই গ্রামটিকে নদী ভাঙ্গন রোধ করে এবং অশ্রয়ন প্রকল্প নির্মাণ করে না বাঁচালে সেটি হারিয়ে যাবে চিরতরে।


ঢাকা/রাহাত সাইফুল/তারা

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়