ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নব্বইয়ে থামলেন প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক

আন্তর্জাতিক ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ২২:০৪, ১৫ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নব্বইয়ে থামলেন প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক

জন্ম, বেড়ে ওঠা প্রত্যন্ত এলাকায় দরিদ্র পরিবারে। খামারে কাজ করতেন তিনি।পড়া-লেখার প্রতি আগ্রহের কারণে ভর্তি হয়েছিলেন স্কুলেও। তবে স্কুলের পাঠ শেষের আগেই ভর্তি হয়ে যান ট্রাক্টর চালানোর প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে। সফলতার সঙ্গে শেষ করেন প্রশিক্ষণ। হয়ে যান ট্রাক্টর চালক। সেখান থেকেই নতুন করে পথচলা শুরু। আর পিছু ফিরে তাকাতে হয়নি। হয়েছেন জাতীয় আইকন।

বলছিলাম চীনের অসাধারণ এক নারীর কথা। সেদেশের প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক হয়ে ইতিহাস গড়েছেন তিনি। ট্রাক্টরে চালকের আসনে বসা তার ছবি সম্বলিত ব্যাংক নোট ছেপেছে চীন সরকার। বিবিসি জানিয়েছে, লিয়াংজুন নামের এই নারী (৯০) সবাইকে কাঁদিয়ে সম্প্রতি না ফেরার দেশে চলে গেছেন।

লিয়াংজুনের জন্ম ১৯৩০ সালে প্রত্যন্ত হেইলং জিয়াং প্রদেশে।শৈশব-কৈশোরের অধিকাংশ সময় কেটেছে সেখানকার প্রত্যন্ত গ্রামে। স্কুলে যখন পড়ছিলেন সেসময় ১৯৪৮ সালে তার এলাকায় ট্রাক্টর চালানোর একটি প্রশিক্ষণ স্কুল চালু করে সরকার। জুন লুফে নেন সে সুযোগ। সে সময় নারীদের এধরনের পেশায় যোগদান বা কাজ করার চিন্তাই করতেন না কেউ।

স্থানীয় সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী তখন ওই প্রশিক্ষণ স্কুলে ৭০ জন ভর্তি হয়েছিলেন। তাদের মধ্যে একমাত্র জুনই ছিলেন নারী শিক্ষার্থী।অনেক পরে এক সাক্ষাৎকারে জুন বলেছিলেন, তিনি খুব ভাল ট্রাক্টর চালাতে পারতেন। আর কেউ তার মতো পারতেন না। তার এ জীবন নিয়ে কোনো অনুশোচনা নেই।

জুন যে বছর প্রশিক্ষণ স্কুলে ভর্তি হন তারপরের বছর ঐতিহাসিক ঘটনা ঘটে চীনে। ১৯৪৯ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনের প্রতিষ্ঠা করেন মাও জেদং।

এরপর লিয়াংজুন চীনা কমিউনিস্ট পার্টিতে (সিসিপি) সদস্য হিসেবে যোগদেন।পরবর্তীতে তাকে কৃষি কাজের যন্ত্র সামগ্রী সম্পর্কে ভালভাবে জানতে বেজিং পাঠানো হয়।

সেখানেপড়া-লেখা শেষে জুন তার নিজ প্রদেশে ফিরে আসেন। তাকে কৃষি যন্ত্রসামগ্রী গবেষণা প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ দেওয়া হয়।

১৯৬০ সালে চীনে কাগজের ব্যাংক নোট অর্থাৎ এক ইউয়ান মূল্যের ব্যাংক নোটে ট্রাক্টর চালানো জুনের ছবি স্থান পায়। সেসময় চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নারীদের বিশেষত যারা গ্রামীণ জনপদে শ্রমে নিয়োজিত তাদের স্বাবলম্বী করার উদ্যোগ গ্রহণ করে।

লিয়াংজুন নারী হয়েও যেভাবে ট্রাক্টর চালিয়ে স্বাবলম্বী হয়েছেন সে বিষয়টি সামনে এনে অন্য নারীদের উদ্বুদ্ধ করা হয়। তার সংগ্রাম ও আত্মপ্রত্যয়ের গল্প সে সময় চীনের পাঠ্যপুস্তকে স্থান পায়। এতে অনেক নারী অনুপ্রাণিত হন এবং ট্রাক্টর চালকের পেশা গ্রহণ করেন।

১৯৯০ সালে হারবিন পৌরসভার কৃষি যন্ত্রপাতি বিভাগের প্রধান প্রকৌশলীর দায়িত্ব থেকে অবসর গ্রহণ করেন। এর মধ্য দিয়ে অবসান ঘটে কয়েক দশকের লিয়াংযুগের।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বয়স জনিত নানা রোগে ভুগছিলেন জুন। সংবাদমাধ্যম গুলো জানায় মৃত্যুর আগে মাঝেমাঝে তিনি অচেতন হয়ে পড়তেন এবং একপ্রকার বিছানা বন্দী হয়েছিলেন। তার ছেলে ওয়াং ইয়ানবিং জানান, সোমবার শান্তিতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন লিয়াংজুন।

তার মৃত্যুর খবরে ব্যাথিত হয়েছেন অগনিত মানুষ। অনেকে তাকে নানা প্রশংসায় ভাসিয়েছেন। চীনের প্রথম নারী ট্রাক্টর চালক হিসেবে লোকজন যখন তার গল্প করতো তখন তিনি বেশ খুশি হতেন।

চীনের সামাজিক যোগাযোগসাইট ওয়েইবোতে লিয়াংজুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন অনেকে। একজন সেখানে লিখেছেন- তিনি (লিয়াং) দেখিয়েছেন পুরুষরা যা করতে পারে, নারীরাও তা ভালভাবে করতে সক্ষম।

অপর একজন লিখেছেন- ‘তিনি কঠোর পরিশ্রম করেছেন এবং তার সময়ে তিনি হিরোইন ছিলেন। গুডবাই লিয়াংজুন, স্যালুট তোমাকে।’



ঢাকা/এনএ/নাসিম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়