ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

নারী ক্রিকেটে দলীয় সর্বনিম্ন রানের ১০ ইনিংস (শেষ পর্ব)

রুহুল আমিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৪:২২, ৩১ জানুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
নারী ক্রিকেটে দলীয় সর্বনিম্ন রানের ১০ ইনিংস (শেষ পর্ব)

রুহুল আমিন : পুরুষদের মতো নারী ক্রিকেটের খোঁজ খবর আমরা তেমন একটা রাখি না। পুরুষদের মতো নারী ক্রিকেটেও এই পর্যন্ত অনেক রেকর্ড হয়েছে। কিছু রেকর্ড গৌরবের, কিছু লজ্জার। রেকর্ড হচ্ছে, রেকর্ড ভাঙছে। যতদিন ক্রিকেট খেলা থাকবে ততদিন রেকর্ডের এই ভাঙা-গড়া চলবে। বিশ্ব নারী ক্রিকেটে অনেক রেকর্ডের মধ্যে ওয়ানডেতে দলীয় সর্বিনিম্ন রানের ১০ ইনিংস নিয়ে দুই পর্বের প্রতিবেদনের, আজ থাকছে শেষ পর্ব :

৬. জাপান ২৮ রান : খেলাটি ছিল ২০০৩ সালের ইন্টারন্যাশনাল ওমেন্স ক্রিকেট কাউন্সিল ট্রফির তৃতীয় ম্যাচ। নিরপেক্ষ ভেন্যু নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামে ওই বছরের ২১ জুলাই পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় জাপান। পাকিস্তান টসে জিতে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ১৮১ রানের পুঁজি করে। মজার ব্যাপার হলো পাকিস্তানের ইনিংসের সর্বোচ্চ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। জাপানি বোলাররা এই ম্যাচে অতিরিক্ত ৫৪ রান দেন। আর পাকিস্তানের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন কিরণ বেলুচ। জাপানি বোলারদের মধ্যে ক্যাওরি কাটো ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ২৫ রান দিয়ে দুই উইকেট নেন। বিরতির পর জাপান ১৮২ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৪ ওভারে মাত্র ২৮ রানে অলআউট হয়ে যায়। ফলে পাকিস্তান ১৫৩ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। আরঅবিশ্বাস্য হলেও সত্য যে পাকিস্তানি বোলাররাও বেশ অতিরিক্ত রান দিয়েছে। কারণ জাপানের স্কোর বোর্ডে জমা হওয়া ২৮ রানের ২০ রানই আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। ব্যাটসম্যানরা করেন মাত্র ৮ রান। সর্বোচ্চ দুইজন ব্যাটসম্যান ৩ রান করে করেন। জাপানের রান তোলার গড় ছিল দশমিক ৮২। জাপানি ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যাগুলো হলো ৩, ৩, ১, ০, ১, ০, ০, ০, ০, ও০।যিনি অপরাজিত ছিলেন তিনিও ০ রানেই অপরাজিত ছিলেন। পাকিস্তানের বোলারদের মধ্যে সাজ্জিদা শাহ একাই জাপানের ইনিংস ধসিয়ে দেন। তিনি ৮ ওভার বল করে ৫ মেডেনসহ ৪ রান দিয়ে ৭ উইকেট নেন। এ ছাড়া খুরশীদ জেবিন ১০ ওভার বল করে ৮ মেডেনসহ ২ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন।

৭. নেদারল্যান্ডস ২৯ রান : ১৯৮৮ সালের শেল বাইসেনটেননিয়াল ওমেন্স বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচ ছিল এটি। ওই বছরের ২৯ নভেম্বর অস্ট্রেলিয়ার পার্থের উইলেট্টন স্পোটর্স ক্লাব মাঠে অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস। ম্যাচটি ছিল ৬০ ওভারের। অস্ট্রেলিয়া টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৬০ ওভারে ১ উইকেট হারিয়ে ২৮৪ রান করে। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে সর্বোচ্চ ১৪৩ রান করে অপরাজিত থাকেন লিন্ডসে রীলার। এ ছাড়া রুথ বাকস্টেইন ১০০ রান করে রান আউট হন। বিরতির পর নেদারল্যান্ডস ২৮৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে যায়। তারা ২৫ ওভার ১বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ২৯ রান করতে সক্ষম হয়। ফলে ২৫৫ রানের বিশাল ব্যাবধানে অস্ট্রেলিয়া ম্যাচ জিতে নেয়। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে সর্বোচ্চ ১২ রান করেন আনিতা ফন লায়ার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল ৮। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যাগুলো হলো ০, ০, ২, ০, ০, ০, ৩ ও ০। একজন শূন্য রানে অপরাজিত ছিলেন। নেদারল্যান্ডসের রান তোলার গড় ছিল ১ দশমিক১৫। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে ক্যারেন ব্রাউন ৮ ওভার বল করে ৬ মেডেনসহ ৪ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন। এ ছাড়া লেন ফুলস্টন নেন ৩ উইকেট।



৮. নেদারল্যান্ডস ৩৬ রান :২০১১ সালের আইসিসি বিশ্বকাপ কোয়ালিফায়ারের গ্রুপ পর্বের ম্যাচ ছিল এটি। সাভারের বিকেএসপি মাঠে ওই বছরের ১৮ নভেম্বর দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস। দক্ষিণ আফ্রিকা টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৬৯ রান করে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৬৫ রান করেন অধিনায়ক মিগনন ডু প্রেজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৩ রান আসে ক্রি-জেলডা ব্রিটসের ব্যাট থেকে। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে এস্থার ডিল্যাঞ্জ ১০ ওভার বল করে ১ মেডেনসহ ৪৫ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। বিরতির পর ২৭০ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৬ ওভার ৩ বলে মাত্র ৩৬ রানে অলআউট হয় নেদারল্যান্ডস। ফলে ২৩৩ রানের ব্যাবধানে ম্যাচ জিতে দক্ষিণ আফ্রিকা। নেদারল্যান্ডসের পক্ষে সর্বোচ্চ ১১ রান করে অপরাজিত থাকেন এস্থার ল্যান্সার। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছতে পারেননি। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যাগুলো হলো ২, ০, ৬, ৬, ০, ১, ০, ০, ০ ও ৪। তারা ২ দশমিক ১৮ গড়ে রান তুলছিল। দক্ষিণ আফ্রিকা এই ম্যাচে মাত্র দুইজন বোলারকে ব্যবহার করে। এর মধ্যে শাবনিম ইসমাইল ৮ ওভার ৩ বল করে ৩ মেডেনসহ ১০ রান দিয়ে ৬ উইকেট নেন। আর মোছলাইন ড্যানিয়েলস ৮ ওভার বল করে ২৫ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন।



৯. ভারত ৩৭ :
খেলাটি ছিল ১৯৮১ সালে নারী ক্রিকেট বিশ্বকাপের ষষ্ঠ ম্যাচ। ১৪ জানুয়ারি নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড কর্নওয়াল পার্কে অনুষ্ঠিত এই ম্যাচে কিউইদের মুখোমুখি হয় ভারত। ম্যাচটি ছিল ৬০ ওভারের। নিউজিল্যান্ড টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ৫৮ ওভার ৫ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৮০ রান করতে সক্ষম হয়। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ২২ রান করেন নিক্কি টার্নার। ভারতের বোলারদের মধ্যে ডায়ানা ইদুলজি ১১ ওভার ৫ বল করে ৭ মেডেনসহ ১০ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। বিরতির পর ৮১ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ৩৫ ওভারে ৩৭ রানে অলআউট হয় ভারত। ফলে নিউজিল্যান্ড ৪৩ রানে ম্যাচ জিতে নেয়। ভারতের পক্ষে সর্বোচ্চ ১০ রান করে অপরাজিত ছিলেন রাজেশ্বরী দোলাকিয়া। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যাগুলো হলো ৩, ১, ৬, ৭, ১, ৫, ০, ০, ০ ও ০। ভারতের রান তোলার গড় ছিল ১ দশমিক শূন্য ৫। নিউজিল্যান্ডের জ্যাকি লর্ড একাই ভারতের ইনিংসে ধস নামান। তিনি ৮ ওভার বল করে ২ মেডেনসহ ১০ রানে ৬ উইকেট নেন। এ ছাড়া স্যু ব্রাউন ৭ ওভার বল করে ৬ মেডেনসহ ৩ রান দিয়ে ২ উইকেট নেন।



১০. নেদারল্যান্ডস ৪০ রান :
১৯৯৩ সালের বিশ্বকাপের ১৬তম ম্যাচ ছিল এটি। ওই বছরের ২৫ জুলাই নিরপেক্ষ ভেন্যু ইংল্যান্ডের লিন্ড ফিল্ড ক্রিকেট ক্লাব মাঠে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হয় নেদারল্যান্ডস। ৬০ ওভারের এই ম্যাচে নেদারল্যান্ডস টসে জিতে ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ৫৪ ওভার ২ বল খেলে সবকটি উইকেট হারিয়ে মাত্র ৪০ রান করতে সক্ষম হয়। নেদারল্যান্ডসের ৪০ রানের মধ্যে আরিত্তে ফন নোর্টউইজ্ক একাই করেন ২২ রান। দলের আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটায় পৌঁছাতে পারেননি। এমনকি দলের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬ রান আসে অতিরিক্ত খাত থেকে। তারা দশমিক ৭৩ গড়ে রান তোলে। দলের অন্য ব্যাটসম্যানদের রান সংখ্যাগুলো হলো ০, ৩, ১, ০, ২, ৫, ০, ০ও ০। একজন ১ রানে অপরাজিত ছিলেন। নিউজিল্যান্ডের বোলারদের মধ্যে জেনিফার টার্নার ১১ ওভার ২ বল করে ৭ মেডেনসহ ৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন।



আর জুলিয়ে হ্যারিস ১২ ওভার বল করে ৯ মেডেনসহ ৫ রান দিয়ে ৩ উইকেটন নেন। বিরতির পর ৪১ রানকে তাড়া করতে নেমে কোনো উইকেট না হারিয়ে ১৩ ওভার ২ বলে জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায় নিউজিল্যান্ড। ফলে ১০ উইকেটে ম্যাচ জেতে নিউজিল্যান্ড।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৩১ জানুয়ারি ২০১৭/রুহুল/আমিনুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ