ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

করোনা: ধস নেমেছে পর্যটনে

আব্দুল্লাহ আল নোমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৬:২৪, ১৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
করোনা: ধস নেমেছে পর্যটনে

প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাস দ্রুত ছড়ানোর কারণে আতঙ্ক বিশ্বজুড়ে। এ ভাইরাসের মহামারি ঠেকাতে বাংলাদেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে, স্থগিত করা হয়েছে মুজিববর্ষের অনুষ্ঠানও।  করোনাভাইরাসের প্রভাব পড়েছে সিলেটের পর্যটনে। পর্যটনের ভরা মৌসুমেও ফাঁকা প্রকৃতি কন্যা সিলেট। বিদেশি পর্যটক নেই, নেই দেশি পর্যটকও। যে কারণে ফাঁকা পড়ে আছে হোটেল-মোটেলগুলোও। একারণে আর্থিক বিপর্যয়ের মুখে পড়ার শঙ্কায় রয়েছেন পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।

তারা বলছেন, এখন সিলেটে পর্যটনের ভরা মৌসুম। এ সময়ে হোটেল-মোটেলে রুম পাওয়া দুষ্কর হয়ে যেতো। আসতেন অনেক বিদেশি পর্যটকও। তবে করোনাভাইরাসের কারণে বিদেশি পর্যটক আসা বন্ধ রয়েছে। আর আতঙ্কের কারণে দেশের অভ্যন্তরের বিভিন্ন এলাকা থেকেও পর্যটকরা আসছেন না। এ কারণে হোটেল-মোটেলে প্রভাব পড়েছে। বর্তমানে সবকটি হোটেলই পর্যটকশূন্য বলে জানিয়েছেন তারা।

তারা জানান, ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে বেশিরভাগ হোটেলের কক্ষ অগ্রিম বুকিং ছিল। কিন্তু করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ায় পর্যটকরা আসছেন না, যে কারণে বুকিং ক্যান্সেল (বাতিল) করে নিয়েছেন। শুক্রবার সিলেটের কোনো হোটেলেই কক্ষ পাওয়া যায় না, কিন্তু গত শুক্রবারে বেশিরভাগ হোটেলই ছিল ফাঁকা। দরগাহ এলাকার কয়েকটি হোটেলে কয়েকজন স্থানীয় বোর্ডার ছিলেন, যারা মূলত মাজার জিয়ারত করতে আসা ভক্ত।

ফাইভ স্টার মানের হোটেল রোজভিউ এর স্বত্বাধিকারী আহাদ উদ্দিন বলেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে মন্দা সময় পার করছেন তারা। গত সপ্তাহ ধরে তাদের হোটেলে কোনো বিদেশি পর্যটক আসেননি। আর যারা অগ্রিম হোটেল বুকড করেছিলেন, তারাও তা বাতিল করে নিয়েছেন। 

নাজিমগর রিসোর্টের ব্যবস্থাপক খায়রুল আনাম বললেন, এ বছর মৌসুমের শুরুর দিকে সিলেটে পর্যটকের ঢল নামে। কিন্তু করোনাভাইরাসের প্রভাবে সপ্তাহ ধরে পর্যটনে ধস নেমেছে। বিদেশিরা  আসছেন না। আর স্থানীয়রাও আতঙ্কের কারণে বেড়াতে বের হচ্ছে না। তার রিসোর্টেও অনেকে অগ্রিম বুকিং বাতিল করে দিয়েছেন বলেও জানান তিনি। 

সিলেটের পর্যটন নিয়ে কাজ করে সিলেট ট্যুরিজম ক্লাব। এই ক্লাবের তথ্যমতে, প্রতিমাসে সিলেটে প্রায় ২ শতাধিক বিদেশি পর্যটক ঘুরতে আসেন। তবে করোনাভাইরাসের প্রভাবে এ মাসের বিদেশি পর্যটক একজনও আসেননি। সংগঠনের সভাপতি হুমায়ুন কবির লিটন বলেন, করোনার প্রভাবে পর্যটকশূন্য হয়ে পড়েছে সিলেট। বিদেশিরা যেমন আসছেন না, দেশি পর্যটকও নেই। এ কারণে বেশিরভাগ স্পট পর্যটকশূন্য বলে জানালেন তিনি। 

সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ ধলাই নদের জিরো পয়েন্টের ‘সাদাপাথর’ এ প্রতিদিন কয়েক সহস্রাধিক পর্যটক বেড়াতে আসতেন। সেখানে এখন হাতে গোনা পর্যটক আসছেন, আর তারা সকলে স্থানীয় বলে জানিয়েছেন কোম্পানীগঞ্জ ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি আবিদুর রহমান। এছাড়া জাফলং, বিছানাকান্দি, লালাখালসহ সিলেটের অন্যসহ পর্যটন এলাকায়ও পর্যটকদের আগমন নেই বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।

সিলেট হোটেল অ্যান্ড গেস্ট হাউস ওনার্স গ্রুপের সভাপতি সুমান নূরী চৌধুরী জানালেন, করোনাভাইরাসের প্রভাবে পর্যটন ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্তদের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয়েছে। ব্যবসা একেবারেই খারাপ। অন্য বছর এই সময়ে সবকটি হোটেলে সাধারণত ৮০ ভাগ বোর্ডার থাকতেন। তবে এবার তা ১০ ভাগের নিচে নেমে এসেছে। এ পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ব্যবসায়ীরা বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি। 

করোনাভাইরাসের প্রভাব কেবল সিলেটই নয়; সারা দেশের পর্যটন শিল্পসহ ব্যবসা বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে বলে মন্তব্য করেছেন ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রি (এফবিসিসিআই) পরিচালক খন্দকার সিপার আহমদ। এ অবস্থার উন্নতি না হলে ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলেও জানান তিনি।


সিলেট/নোমান/বকুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়