ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

পা নিয়ে বিপদে খুলনার নজরুল

মুহাম্মদ নূরুজ্জামান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০০, ১০ জুলাই ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
পা নিয়ে বিপদে খুলনার নজরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক, খুলনা: পা নিয়ে বিপদে পড়েছেন খুলনার নজরুল ইসলাম। ডান পায়ের পাতা থেকে কোমর পর্যন্ত ফুলে অসম্ভব রকমের ভারী হয়ে আছে তার।

এর প্রভাবে শরীরের ডান দিকের অংশে বুক, কান এবং মাথাও আক্রান্ত হতে শুরু করেছে। ফলে কোন কাজকর্ম করা বা চলাফেরাও তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়ছে।

খুলনা মহানগরীর দক্ষিণ টুটপাড়া বড় খালপাড়ের ৬০/১১, ওয়েস্ট সার্কুলার রোড এই ঠিকানায় ভাড়া বাড়িতে নজরুলদের বসবাস।

নজরুল পরিবারের বড় সন্তান। পিতার নাম রুস্তম আলী। তার ছোট আরও ৫ ভাই-বোন রয়েছে। তার ওপর বৃদ্ধ মা-বাবা। জ্যেষ্ঠ সন্তান হিসেবে পরিবারের হাল ধরার কথা ছিল তার। কিন্তু ভাগ্য সহায় হয়নি। দুরারোগ্য এক বিরল ব্যাধি বাসা বেঁধেছে শরীরে।

চিকিৎসকরা বলছেন, রোগের নাম ‘ফেলারিয়াসিস’। তবে, পা ফুলে হাতির পায়ের মত দেখা যায় বলে রোগটি ‘ফাইলেরিয়া এ্যালিফেন্ট’ নামেও পরিচিত। মশা বা এ জাতীয় বিষাক্ত কোন প্রাণির কামড়ে এ রোগ দেখা দিয়েছে। তার সুস্থতার জন্য প্রয়োজন উন্নতমানের চিকিৎসা ও প্রচুর অর্থ। কিন্তু তার দরিদ্র পরিবারের পক্ষে অর্থের সংস্থান করা সম্ভব হচ্ছে না।

একদিকে নিজের অক্ষমতা, অন্যদিকে অসুস্থ্য মা-বাবার চিকিৎসা এবং ছোট ভাই-বোনের লেখাপড়া ও সংসার পরিচালনায় কোন ধরণের সহযোগিতা করতে না পারার বেদনায় জীবন ক্রমান্বয়ে দুর্বিসহ হয়ে উঠছে তার।

পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, নজরুলের বয়স যখন ৭-৮ বছর, তখন কোন বিষাক্ত প্রাণির কামড়ে হঠাৎ করেই তার ডান পায়ের পাতা ফুলতে শুরু করে। সঙ্গে ব্যাথাও। প্রথমে স্বাভাবিক মনে করে ওষুধ সেবন করলেও নিরাময় হয়নি। নিরাময় হচ্ছে, হবে- এ আশায় কেটে যায় প্রায় দশ বছর। কিন্তু ততদিনে হাঁটু পর্যন্ত ফুলে যায়। পা ভারি হতে থাকে। এক পর্যায়ে পায়ের প্রতিটি শিরায় প্রচন্ড যন্ত্রণা, পানি ঝরা, খিঁচুনি এবং বমিসহ বিভিন্ন ধরণের উপসর্গ দেখা দেয়। যে কারণে লেখাপড়া পঞ্চম শ্রেনির গন্ডির মধ্যেই সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। এ অবস্থায় রিকশার গ্যারেজে কাজ নেয় নজরুল। ভারি পা ও অসুস্থ্য শরীর নিয়ে প্রচন্ড মনোবলের সঙ্গে কখনও কখনও রিকশা চালিয়েও সংসারের হাল ধরার চেষ্টা করে সে। কিন্তু এখন আর সেটিও সম্ভব হয় না। এখন বাড়তে বাড়তে কোমর পর্যন্ত ফুলে গেছে। এছাড়া এ রোগের প্রভাবে তার বুকের ডান অংশে চাকাচাকা অনুভব হচ্ছে। ডান কানেও ঠিকমত শুনতে পাচ্ছে না। মাথায়ও প্রচন্ড যন্ত্রণা হচ্ছে।

বর্তমানে নজরুল খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসক মো. রেজাউল মোমিনের তত্বাবধায়নে থেকে চিকিৎসা গ্রহণ করছেন। অর্থাভাবে প্যাথলজি পরীক্ষা এবং ওষুধ কেনাও তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না।

যৌন ও চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো. আখতার-উজ-জামান বলেন, ‘এ রোগের নাম ‘ফেলারিয়াসিস’। তবে, পা ফুলে হাতির পায়ের মত দেখা যায় বলে রোগটি ‘ফাইলেরিয়া এ্যালিফেন্ট’ নামেও পরিচিত। মশা বা এ জাতীয় বিষাক্ত কোন প্রাণির কামড়ে মাইক্রো ব্যাক্টেরিয়ার ফলে এ রোগ হয়ে থাকে। প্রথম দিকে রি-কনসটেকটিভ সার্জারি করা সম্ভব হলে এ রোগ নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

আক্রান্ত নজরুল ইসলাম বলেন, ‘একজন সুস্থ মানুষ হিসেবে অন্য দশজনের মত তারও অনেক স্বপ্ন-আশা ছিল। কিন্তু এ রোগের কারণে ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রতিবন্ধী’র চেয়েও অসহায় জীবন-যাপন করতে হচ্ছে। অর্থের অভাবে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারেননি। তার এ অসহায়ত্ব দেখে অনেকে আশ্বাস দিয়েও এগিয়ে আসেননি।’

চিকিৎসার জন্য তিনি রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী’র সুদৃষ্টি চেয়েছেন। আবেদন জানিয়েছেন- সুস্থ্য জীবন ফিরে পেতে সামান্য সহানুভুতির।

নজরুলের বাবা রুস্তম আলী তার বড় ছেলের এ ব্যাধির বিষয়ে হতাশা ব্যক্ত করে বলেন, ‘৪ ছেলে ও ২ মেয়ে নিয়ে তাদের সংসার। এর মধ্যে ছোট দু’ ছেলে-মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। সেঝ ছেলেও হার্টের রোগী। একমাত্র মেঝ ছেলের সামান্য চায়ের দোকান থেকে উপার্জিত অর্থে এতবড় সংসার চলছে।’

ছেলের চিকিৎসার সহায়তার জন্য তার মা হনুফা বেগমও প্রধানমন্ত্রীসহ সমাজের বিত্তবানদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।

 

রাইজিংবিডি/ খুলনা/১০ জুলাই ২০১৯/ মুহাম্মদ নূরুজ্জামান/টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়