ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

প্রজনন কেন্দ্র থেকে কুমিরের ৪৩ বাচ্চা চুরি

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৫৫, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রজনন কেন্দ্র থেকে কুমিরের ৪৩ বাচ্চা চুরি

এ রকম প্যানে লালন-পালন করা হচ্ছে কুমিরের বাচ্চা

বাগেরহাট প্রতিনিধি : জেলার পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের করমজলে সরকারি বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের ৪৩টি বাচ্চা কুমির চুরির ঘটনা ঘটেছে।

কুমির চুরি বা পাচারের ঘটনায় ওই প্রজনন কেন্দ্রের মাহাবুব হোসেন নামে এক বনকর্মীকে (লস্কার) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কুমির প্রজনন কেন্দ্রে ২৭৭টি বাচ্চার মধ্যে এখন ২৩৪টি বাচ্চা রয়েছে।

এদিকে ঘটনা তদন্তে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের চাদঁপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক (এসিএফ) মেহেদীজ্জামানকে প্রধান করে এক সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

সুন্দরবনের কুমিরের বিলুপ্তপ্র্রায় লবণ পানির প্রজাতির কুমিরের প্রজনন বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের জন্য ২০০২ সালে পূর্ব সুন্দরবনের চাদপাই রেঞ্জের করমজলে প্রায় ৩২ লাখ টাকা ব্যয়ে গড়ে তোলা হয় দেশের একমাত্র এই বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রটি।

বর্তমানে করমজল কুমির প্রজনন কেন্দ্রে রোমিও নামে একটি পুরুষ, জুলিয়েট ও পিলপিল নামের দুটি মা কুমির ও ২৩৪টি বাচ্চা কুমির রয়েছে।

সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মেহেদীজ্জামান জানান, করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের দুইটি প্যান (কৃত্রিম পুকুর) থেকে কুমিরের ৪৩টি বাচ্চা চুরি বা পাচার হয়ে গেছে। ১ ফেব্রুয়ারি সকালে ওই দুইটি প্যানে থাকা কুমিরের বাচ্চা গণনা করে ৪৩টি কম পাওয়া যায়। পরে সেখানকার দায়িত্বরত কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানানোর পর ওই দিন দুপুরে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে এক সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দেন।

তিনি আরো বলেন, কোন হিংস্র প্রাণিভোগী প্রাণি যদি প্যানে ঢুকে বাচ্চাগুলোকে আক্রমণ করতো কিংবা খেয়ে ফেলতে তাহলে সেখানে হাড়, মাংস, অন্যান্য অঙ্গ-প্রতঙ্গ ও রক্ত দেখা যেত। এমন কোনো আলামত সেখানে পাওয়া যায়নি। প্রায় এক বছর বয়সি এই কুমিরের এই বাচ্চাগুলো চুরি কিংবা পাচার করে দেওয়া হয়েছে।

চীন- মিয়ানমার-লাওস ও থাইল্যান্ড সীমান্তের গোল্ডেন ট্রাংগল নামের আর্ন্তজাতিক বাজারে কুমিরের বাচ্চার চড়া মূল্য থাকায় একটি সংঘবদ্ধ চক্র এই চুরি ও পাচার কাজের সঙ্গে জড়িত রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদুল ইসলাম এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, আমরা মনে করছি সুন্দরবনের সম্পদ চুরির পেছনে বড় কোনো ষড়যন্ত্র থাকতে পারে। এটা ছোট করে দেখার কোনো কারণ নেই। চুরি যাওয়া কুমিরগুলো উদ্ধার করতে হবে। প্রয়োজনে উচ্চ পর্যায়ে কমিটি গঠন করে এর সঙ্গে যে সব গডফাদার জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে এ ধরনের প্রবণতা কমে আসবে।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাইদুল ইসলাম বলেন, বুধবার সকালে কুমিরের বাচ্চাগুলো চুরি যাবার বিষয়টি জানতে পারি। আমি ওই দিনই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিকভাবে এ ঘটনায় জড়িতসন্দেহে বন্যপ্রাণি প্রজনন কেন্দ্রের বনকর্মী (লস্কার) মাহাবুব হোসেনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।

এ ছাড়া জাকির হোসেন নামে এক অস্থায়ী কর্মচারীকে চাকুরিচ্যুত করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন পাওয়ার পর দোষিদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।



রাইজিংবিডি/বাগেরহাট/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/আলী আকবর টুটুল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়