ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

প্রেমিকের ব্লেডে ক্ষতবিক্ষত তরুণী

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:৫২, ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
প্রেমিকের ব্লেডে ক্ষতবিক্ষত তরুণী

অভিযুক্ত জাহেদুল (বাঁয়ে) ও প্রেমিকা নাহিদা

কক্সবাজার প্রতিনিধি : নাহিদা আক্তার। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার কালারমারছড়া আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার নবম শ্রেণির ছাত্রী। সে কালারমারছড়া ইউনিয়নের অফিসপাড়া এলাকার আহমদ হোসেনের মেয়ে।

স্কুল জীবনেই উপজেলার হোয়ানক ইউনিয়নের হরিয়ারছড়া এলাকার মৌলানা লোকমান হাকিমের ছেলে জাহেদুল ইসলামের (২৬) সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ে নাহিদা (১৬)। দীর্ঘ প্রায় পাঁচ বছর প্রেমের সম্পর্ক ছিল। জাহেদের ইচ্ছে ছিল নাহিদা উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত হলে বিয়ে করে ঘর সংসার করবে।

কিন্তু প্রেমিকা নাহিদার দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করা সম্ভব ছিল না। কারণ নাহিদার পরিবার অন্যত্র বিয়ে ঠিক করে। এতে জাহেদকে বার বার চাপ সৃষ্টি করে দ্রুত বিয়ে করার জন্য তাগিদ দেয় সে।

নাহিদার পরিবারের দাবি, সর্বশেষ গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাত সাড়ে ৬টার দিকে নাহিদার বাড়ির পাশে ওতপেতে থাকে প্রেমিক জাহেদ। এ সময় নাহিদা ঘর থেকে বের হলে জাহেদ ব্লেড দিয়ে শরীরে বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে পালিয়ে যায়। এতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে নাহিদা। এ সময় এলাকাবাসীর সহযোগিতায় নাহিদাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।

বর্তমানে ওই ছাত্রী ভর্তি আছে কক্সবাজার সদর হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেল (ওসিসি) বিভাগে। সকালে এই প্রতিবেদক কক্সবাজার সদর হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসাধীন নাহিদার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু কর্তব্যরত চিকিৎসক নাহিদার সঙ্গে কথা না বলতে অনুরোধ করেন।

হাসপাতালের ওসিসির প্রোগ্রাম কর্মকর্তা মো. শাহজালাল জানান, নাহিদা বর্তমানে সুস্থ আছে। সে খাওয়া দাওয়া ও চলাফেরা করতে পারছে। তার শরীরে ব্লেড দিয়ে আঘাতজনিত পাঁচটি চিহ্ন রয়েছে।

হাসপাতালে ছাত্রীর সঙ্গে আলাপ করতে বাঁধা দেওয়া হলেও কথা হয় নাহিদার চাচি লুৎফুন্নেছা শেলীর সঙ্গে।

তিনি জানান, নাহিদা আর জাহেদের ভালবাসার সম্পর্কের বিষয়টি পরিবারের সবাই কমবেশী জানতো। ফলে নাহিদাকে বিয়ে করার জন্য জাহেদকে বলা হয়। কিন্তু জাহেদ মেয়ের এসএসসি পরীক্ষার পর বিয়ে করবে জানায়। এতে নাহিদার পরিবার মহেশখালী উপজেলার শাপলাপুরে নাহিদার বিয়ে ঠিক করে। তাই জাহেদ ক্ষুব্ধ হয়ে নাহিদার মাথা, মুখ ও পেটে ব্লেড দিয়ে আঘাত করে পালিয়ে যায়।

স্থানীয়রা নাহিদাকে উদ্ধার করে প্রথমে মহেশখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠায়। পরে গতকাল সোমবার তাকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়।

নাহিদার চাচা হেলাল উদ্দিন বলেন, এ ঘটনায় গতকাল রাতে জাহেদুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে ছয়জনের বিরুদ্ধে মহেশখালী থানায় এজাহার দায়ের করেছেন। অন্যান্য আসামি হলেন জাহেদের বাবা মৌলানা লোকমান হাকিম (৫৫), দুই ভাই মো. রাসেল (৩০) ও মো. সাইফুল ইসলাম (২৩) এবং মো. ওসমান (৪২) ও মো. রিদুয়ান নামের দুজন।

এ বিষয়ে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, নাহিদা আর জাহেদ পরস্পর আত্মীয়। তাদের দীর্ঘদিন প্রেমের সম্পর্ক ছিল। কিন্তু নাহিদার বিয়ে অন্যত্র ঠিক করায় জাহেদ ক্ষুব্ধ হয়ে নাহিদাকে এলোপাথাড়ি আঘাত করে পালিয়ে যায়।

ওসি বলেন, এ ঘটনায় নাহিদার চাচা হেলাল উদ্দিন বাদী হয়ে ছয়জনকে আসামি করে একটি এজাহার দায়ের করেছেন। যা মামলা হিসেবে নথিভুক্ত করা হয়। এখন আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

এদিকে এ ঘটনায় জাহেদের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, নাহিদার সঙ্গে আমার পাঁচ বছর সম্পর্ক ছিল এবং বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গত শনিবার নাহিদার বিয়ে অন্যত্র ঠিক হয়ে যাওয়ার খবরে সে নিজে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়। নাহিদাকে আমি জখম করি নাই।

জাহেদের বাবা মৌলনা লোকমান হাকিম বলেন, আমার ছেলে জাহেদুল ইসলাম কক্সবাজার হাসেমিয়া মাদ্রাসায় অনার্সে অধ্যায়নরত। বিষয়টি সম্পর্কে আমি অবগত ছিলাম না। পরে জানতে পারি আমার ছেলের সঙ্গে ওই মেয়ের সম্পর্ক ছিল। ওই মেয়েকে অন্যত্র বিয়ে দেওয়ার খবরে সে নিজে নিজে আত্মহত্যার চেষ্টা চালায়।

তিনি বলেন, আমার ছেলে এই ধরনের অপরাধ করে থাকলে তার শাস্তি হোক। আমি আজ সন্ধ্যায় মহেশখালী থানায় ছেলেকে নিয়ে হাজির হবো এবং পুলিশকে সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাবো।



রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/সুজাউদ্দিন রুবেল/রুহুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়