ঢাকা     শনিবার   ১১ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৮ ১৪৩১

বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছেন গোয়েন্দারা

মাকসুদুর রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০১:১০, ২৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাজারে নজরদারি বাড়িয়েছেন গোয়েন্দারা

রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়াচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা, এমন তথ্য পেয়ে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে নজরদারি বাড়িয়েছেন গোয়েন্দারা। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে গোপনে দাম যাচাই করে  অভিযান চালাচ্ছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

জানা গেছে, সরকারের নির্দেশে বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে ডিবি, এসবি, এনএসআইসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার লোকজন মাঠ পর্যায়ে কাজ করছেন। বিশেষ করে রমজানে ছোলা, ডাল, আদা, রসুন, তেল, চাল, সবজির বাজারে নজরদারি বেশি করা হচ্ছে। রাজধানীর শ্যামবাজার, বাবুবাজার, মৌলভীবাজার, বেগমবাজার, চকবাজার, কারওয়ানবাজার, বিভিন্ন ফলের আড়তে প্রতিদিন কী পরিমাণ পণ্য সামগ্রী আসছে, পাইকাররা কী দামে পণ্য কিনছেন, সেগুলো খুচরা পর্যায়ে কী দামে বিক্রি করছেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গোয়েন্দারা সাদা পোশাকে ক্রেতা সেজে পাইকারি বাজার থেকে খুচরা বাজার চষে বেড়াচ্ছেন।

বেগমবাজারের পাইকারি আদা বিক্রেতা নয়ন মিয়া বলেন, ‘আমরা আড়তে ২০০ থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে  আদা বিক্রি করছি। কিন্তু সেটি খুচরা বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে আমাদের করার কী আছে? করোনার কারণে পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে।’

কারওয়ানবাজারের খুচরা বিক্রেতা আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘পাইকারি বাজারে দাম বেশি নিচ্ছে। এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছি।’

আনোয়ার হোসেনের মতো অন্য দোকানদাররাও একই কথা বলেন। তারা পাইকারি বাজারে নজরদারি বাড়ানোর মত দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, করোনার প্রভাব পড়লেও দেশে খাদ্যের অভাব নেই। তারপরও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিজেদের আখের গোছানোয় ব্যস্ত রয়েছেন। অকারণে পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। এ কারণে সার্বক্ষণিক বাজার মনিটর করতে হচ্ছে। প্রতিনিয়ত তা সরকারের উচ্চ পর্যায়ে জানানো হচ্ছে।

মঙ্গলবার (২৮ এপ্রিল) বিকেলে এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিবি) অতিরিক্ত কমিশনার ও গোয়েন্দা কর্মকর্তা আব্দুল বাতেনের সঙ্গে। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বাজার মনিটরিং করার জন্য আমাদের একটি সেলের সদস্যরা রাজধানী ঢাকাসহ সারা দেশের পাইকারি ও খুচরা বাজারে ক্রেতা সেজে কাজ করছেন। অকারণে কেউ পণ্যের দাম বাড়ালে তাকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। এজন্য পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ের দামের পার্থক্য দেখা হচ্ছে। কেউ অতিরিক্ত দাম আদায়, বাজার অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করলেই তাকে আমরা আইনের আওতায় আনছি।’

একটি সূত্র জানিয়েছে, অতীতে রমজানের সময় কারা চাল, ডাল, ছোলা, তেলের দাম বাড়িয়েছিল তাদের একটি তালিকা আছে গোয়েন্দাদের কাছে। তাদেরই এখন টার্গেট করে তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এরা সংখ্যায় ১০ থেকে ১২ জন। তারা এসব নিত্যপণ্যের বাজারের অন্যতম প্রভাবশালী ব্যবসায়ী। তবে তারা সব সময় থেকে যাচ্ছে ধরাছোঁয়ার বাইরে। এবার তারা কোনভাবেই ছাড় পাবে না বলে সূত্রটি নিশ্চিত করেছে।

এদিকে, রমজান শুরু পর র‌্যাব, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, সিটি করপোরেশন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে একাধিক দল দ্রব্যের দাম নিয়ন্ত্রণে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত বিভিন্ন আড়ৎ ও দোকানকে প্রায় ৪ কোটি টাকা জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া, দণ্ড দেওয়া হয়েছে ২৫ ব্যবসায়ীকে। সর্বশেষ কারওয়ানবাজারে অতিরিক্ত দাম নেওয়ায় ১১ প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করেছে র‌্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম রাইজিংবিডিকে বলেছেন, ‘বাজারে দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে যা যা করার দরকার তার সবকিছুই করা হবে। অতি মুনাফালোভীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না।’

 

ঢাকা/মাকসুদ/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ