ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বাজেটে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৩, ১১ এপ্রিল ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বাজেটে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক : ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দলিত জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে বিশেষ বরাদ্দ প্রদান এবং বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছে নাগরিক উদ্যোগ, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) ও বাংলাদেশ দলিত নারী ফেডারেশন।

মঙ্গলবার জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে সংগঠন তিনটি আয়োজিত এক সেমিনারে এ দাবি জানানো হয়। সেমিনারের আগে একই দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন  কর্মসূচিও পালন করে সংগঠন তিনটি।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন, বাংলাদেশ দলিত নারী ফেডারেশনের সভাপতি মনি রানী দাস।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে দলিত জনগোষ্ঠী প্রায় ৬৫ লাখ। এই জনগোষ্ঠী তার জন্ম ও পেশার কারণে সমাজে নানাভাবে বঞ্চনা ও বৈষম্যের শিকার। যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত এই দলিত জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে বাংলাদেশ সরকার ইতোমধ্যে বেশ কিছু প্রশংসনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তবে বাংলাদেশের দলিত জনগোষ্ঠীর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান না থাকায় জাতীয় বাজেটে বরাদ্দকৃত অর্থ এবং সরকারি সেবাসমূহ থেকে এই জনগোষ্ঠীর অধিকাংশ মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে। এ অবস্থায় আগামী ২০১৭-১৮ অর্থবছরের জাতীয় বাজেটে দলিত জনগোষ্ঠী উল্লেখ করে বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের এবং বরাদ্দের পরিমাণ বৃদ্ধির দাবি জানান বক্তারা।

এ সময় বিশিষ্ট লেখক এবং গবেষক অধ্যাপক স্বপন আদনান বলেন, এটা একটা প্যারাডক্স যে আমাদের সমাজে এখনো জাত-পাত বৈষম্য চর্চা করা হয়। দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি যে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে উঠেছে তার পেছনে মূলত জাত-পাত বৈষম্যই দায়ী। আমরা দলিত জনগোষ্ঠীর সঠিক কোনো পরিসংখ্যান সম্পর্কে জানি না। আমরা এখান থেকেই শুরুটা করতে পারি।

বেসরকারি সংস্থাগুলোর উদ্যোগে দলিত শুমারি পরিচালনা করার সুপারিশ করে তিনি বলেন,  শুমারিতে তাদের অর্থনৈতিক অবস্থা এবং সরকারি সেবা প্রাপ্তির অবস্থা অনুসন্ধান করা যেতে পারে। দলিতদের সম্প্রদায়ভিত্তিক ডাটাও এই শুমারিতে উল্লেখ করা যেতে পারে বলেও জানান তিনি।

তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক সদিচ্ছা ছাড়া দলিতদের প্রতি বঞ্চনা থেকে তাদের মুক্ত করা সম্ভব নয়। এছাড়া বাজেট ছাড়াও দলিত জনগোষ্ঠীর অনেক সমস্যা রয়েছে। তাদের অন্যতম প্রধান সমস্যা হচ্ছে তাদের ভূমিগুলো বেদখল হয়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সম্মিলিত প্রতিরোধ ও আন্দোলন গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।

নাগরিক উদ্যোগের প্রধান নির্বাহী জাকির হোসেন বলেন, সেমিনারে দলিত জনগোষ্ঠীর পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি আলোচিত হয়েছে। কিন্তু কারা এবং কী পরিমাণে তারা পিছিয়ে পড়ছে এ বিষয়টি সেভাবে আসেনি।

এ সময় তিনি কারা পিছিয়ে আছে এবং কত সংখ্যায় পিছিয়ে আছে সে বিষয়ে সঠিক পরিসংখ্যানগত তথ্যের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করাসহ সরকারি দলিলে দলিত জনগোষ্ঠীর পরিচয় ব্যক্ত করার সময় ভাষার ব্যবহারের প্রতি আরো মনোযোগী হবার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতিও দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।

দলিত জনগোষ্ঠীর স্বীকৃতির ব্যাপারে তিনি আরো বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে বিষয়টি বিভিন্নভাবে উল্লেখ করেছেন। বিএনপি ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে দলিত জনগোষ্ঠীকে তফশীলি সম্প্রদায় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ তাদের ২০০৮ সালের নির্বাচনের পূর্বে নির্বাচনী ইশতেহারে দলিত শব্দটি উল্লেখ করেছে। পরবর্তীতে বিভিন্ন অর্থবছরের বাজেটে দলিত শব্দটি উল্লেখ করা হলেও ২০১৬-১৭ অর্থবছরের বাজেটে দলিত শব্দটি বাদ দেওয়ার ফলে তাদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থ তারা ঠিকভাবে পাবে কিনা সে বিষয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। সুতরাং তাদের পরিচয়গত স্বীকৃতি খুবই জরুরি।

ডেভেলপমেন্ট সিনার্জি ইন্সটিটিউটের নির্বাহী পরিচালক মনোয়ার মোস্তফা বলেন, বাজেটের সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় পরিকল্পনায় দলিত জনগোষ্ঠীকে নিয়ে আসা বেশি জরুরি। এছাড়া দলিত জনগোষ্ঠীর প্রতি বৈষম্য লাঘবে প্রয়োজন রাজনৈতিক অভিপ্রায়। বিশেষ করে তাদের স্বীকৃতির বিষয়টির ক্ষেত্রে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান, ভূমি- এ চারটি বিষয়ে দলিত জনগোষ্ঠী এখনো অনেক পিছিয়ে।

ইসার নির্বাহী পরিচালক প্রভা রানী বাড়াইক বলেন, দলিত জনগোষ্ঠী বিশেষ করে দলিত চা জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যের অবস্থা খুবই নাজুক। তাদের স্বাস্থ্যের অধিকার নিশ্চিত করার জন্য সরকারের কোনো নির্দিষ্ট বাজেট বরাদ্দ নেই। চা জনগোষ্ঠীর আয় খুবই কম। এত কম আয়ে তাদের নিজের সংসার চালানো কঠিন। তাই স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে তাদের জন্য বাজেট বরাদ্দ দিতে হবে।

বিডিইআরএম’র সাংগঠনিক সম্পাদক ডেভিড রাজু বলেন, ২০০৮ সাল থেকে দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য বাজেট বরাদ্দের জন্য আমাদের সংগঠনটি কাজ করে যাচ্ছে। ঢাকা সিটি করপোরেশন থেকে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য আবাসন প্রকল্প শুরু হয়েছে। কিন্তু দলিত জনগোষ্ঠীর বেশিরভাগই এই ফ্ল্যাটগুলো বরাদ্দ পায়নি। গাবতলী সিটি কলোনিতে আবাসনের জন্য ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু যাদের চাকরি নেই তাদের বরাদ্দ দেওেয়া হবে না বলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। দলিত জনগোষ্ঠীর ঠিকানা নেই, যাবার জায়গা নেই। তাদের উচ্ছেদ করা হলে তারা কোথায় যাবে।

এছাড়া তিনি দলিত জনগোষ্ঠীর জন্য সরকারি চাকরিতে কোটা বরাদ্দ দেওয়ার জন্য জোর দাবি জানান।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/১১ এপ্রিল ২০১৭/নাসির/মুশফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়