ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘বাসি চামড়া ফ্রিও নিই না’

আসাদ আল মাহমুদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:৫৩, ১৩ আগস্ট ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘বাসি চামড়া ফ্রিও নিই না’

আসাদ আল মাহমুদ: কোরবানীর পশুর কাঁচা চামড়া বোঝাই অর্ধশতাধিক পিকআপ, ভ্যান, রিক্সা দাঁড়িয়ে আছে রাজধানীর পুরান ঢাকার পোস্তায়।

এক আড়ৎদার একটি পিকআপ থেকে একটি গরুর চামড়ার পশম টান দিলেন। উঠে গেল পশম। আড়ৎদার  বললেন, ‘গতকালের (সোমবার) চামড়া। বাসি মাল (চামড়া)  মাগনাও (ফ্রি) নিই না।’

মঙ্গলবার পোস্তা এলাকায় এ চিত্র দেখা গেছে। শুধু একটি পিকাপ নয়, এরকম ৫০টি বাহনে চামড়া রয়েছে। কিন্তু কোন আড়ৎদার এ চামড়া কিনছেন না।

আড়ৎদাররা জানান, পশু জবাইয়ের পর ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা, খাসির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যেই চামড়ায় লবণ দিতে হবে। অন্যথায় চামড়া পঁচে যায়। পঁচার লক্ষন হলো- চামড়ার পশম ধরে টান দিলে পশম উঠে যাবে। পশম উঠলে দুই পয়সাও চামড়ার দাম নেই। গতবছরও ৩৫ শতাংশ চামড়া নষ্ট হয়েছে সময় মত লবন ব্যবহার না করায়। এবার আরো বেশি নষ্ট হওয়ার আশংকা করছেন তারা।

এদিকে উপযুক্ত দাম না পেয়ে অনেকেই চামড়া রাস্তায় ফেলে দিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

কুমিল্লা থেকে পোস্তায় চামড়া বিক্রি করতে এসেছেন নুরুন নবী। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘সোমবার ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা করে ২৫০ পিস চামড়া কিনেছি। আজ ভোরে নিয়ে এসেছি। কিন্তু আড়ৎদাররা বলছেন, পঁচা চামড়া, এক টাকাও দাম নেই। সকাল থেকে চামড়া নিয়ে বসে আছি কিন্তু কেউ কিনছেন না।’

তিনি বলেন, ‘লাভের আশায় সুদে টাকা নিয়ে চামড়া কিনেছি। আমার ২ লাখ ৫০ হাজার টাকা লস। কি করবো বুঝতে পারছি না।’

মা অ্যান্ড কোং আড়তের মালিক মোহাম্মদ আব্দুল কাহহার রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘পশুর দেহ থেকে চামড়া ছাড়ানোর পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব লবন দিতে হয়। গরুর ক্ষেত্রে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা আর খাসির ক্ষেত্রে ৫ থেকে ৭ ঘণ্টার মধ্যেই চামড়ায় উপযুক্ত পরিমান লবণ দিতে হবে। অন্যথায় চামড়ায় পঁচন ধরে যায়। সময় মত লবন না দেয়ায় এ বছর অনেক চামড়া পঁচে গেছে। বাসি চামড়া নিয়ে অনেক পিকআপ এসেছে। কেউ কেনেনি এ চামড়া।

বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে চামড়ায় লবণ না দিলে চামড়া নষ্ট হয়ে যায়। এরপর যদি বৃষ্টিতে ভিজে যায় তাহলে তো পচে যাবে চামড়া।’

তিনি বলেন, ‘ট্যানারি মালিকরা বকেয়া টাকা এখনও দেয়নি। বকেয়া টাকা না পাওয়ায় চামড়া লক্ষমাত্রা অনুযাযী কিনতে পারছি না।’

বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিন আহমেদ বলেন, লবন দেয়া ছাড়া চামড়া কিনি না। আমরা সঠিক মাত্রায় লবণ দেয়া চামড়া কিনে থাকি। চামড়া ঠিক থাকলে সরকার নির্ধারিত দামেই কিনবো।’

উল্লেখ্য, এবছর গরুর কাঁচা চামড়ার মূল্য রাজধানীতে প্রতি বর্গফুট ৪৫ থেকে ৫০ টাকা, ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। খাসির কাঁচা চামড়ার মূল্য সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা এবং বকরির কাঁচা চামড়ার মূল্য সারা দেশে প্রতি বর্গফুট ১৩ থেকে ১৫ টাকা নির্ধারণ করে সরকার।

 

রাইজিংবি‌ডি/ঢাকা/১৩ আগস্ট ২০১৯/আসাদ/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়