ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

বিচারকের প্রতি খালেদা জিয়ার অনাস্থা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১৩, ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বিচারকের প্রতি খালেদা জিয়ার অনাস্থা

নিজস্ব প্রতিবেদক : জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। ন্যায়বিচার না পাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার পুরান ঢাকার বকশীবাজারস্থ কারা অধিদপ্তরের প্যারেড মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী ঢাকার তিন নম্বর বিশেষ জজ আবু আহমেদ জমাদারের আদালতে দুই মামলার শুনানিতে অংশ নিতে গিয়ে খালেদা জিয়া এ অনাস্থা জ্ঞাপন করেন।

এদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত। একইসঙ্গে বিচারকের প্রতি অনাস্থা জানিয়ে মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদনও নামঞ্জুর হয়।

জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট এবং জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় আত্মপক্ষ সমর্থনের শুনানি করতে বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টায় আদালতে হাজির হন খালেদা জিয়া। এরপর মামলা কার্যক্রমের শুরুতেই বিচারক খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি শুরু করেন। এ সময় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার আইনজীবী আব্দুর রেজ্জাক খান ও ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন মামলাটি পুনঃতদন্তের বিষয়টি আগে নিষ্পত্তি করার আবেদন করেন। বেশ কিছুক্ষণ সময় সেই বিষয়ের ওপর শুনানি চলে। এক পর্যায়ে আদালত সেই বিষয়টি নিষ্পত্তি না করে খালেদার জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি শুরু করতে গেলে খালেদা জিয়ার আইনজীবীরা ন্যায়বিচার পাবেন না জানিয়ে অনাস্থা জ্ঞাপন করে মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার আবেদন করেন। মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার বিষয়ে শুনানি চলা অবস্থায় আদালত বেলা দেড়টায় এক ঘণ্টার বিরতিতে যান।

খালেদা জিয়া সেই সময় আদালতে বসেছিলেন। বিরতির সময় খালেদা জিয়া চা, বিস্কুট ও কিছু ফল দিয়ে দুপুরের খাবার শেষ করেন।

এরপর বেলা আড়াইটায় মামলার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। বিরতির পর মামলার কার্যক্রম মুলতবি রাখার বিষয়ে শুনানি শেষে বিচারক সেই আবেদনটি নামঞ্জুর করেন।

এরপর বিচারক আবারো খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানিতে তার বিরুদ্ধে সাক্ষীরা যে অভিযোগ করে সেটি  পড়ে শোনান। প্রায় ঘণ্টাখানেক সময় ধরে বিচারক খালেদা জিয়াকে অভিযোগ পড়ে শোনান।

এরপর বিচারক খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি দোষী না নির্দোষ?’

জবাবে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমার আইনজীবীরা আপনার প্রতি অনাস্থা জানিয়েছেন। আমিও আপনার প্রতি আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা জানাচ্ছি। তা সত্ত্বেও জোরজবরদোস্তি ৩৪২ ধারায় আমাকে পরীক্ষা করছেন। আমি আমার আইনজীবীদের সঙ্গে পরামর্শ করে আমার বক্তব্য প্রদান করব। এজন্য আমার যুক্তিসঙ্গত সময় প্রয়োজন।’

এরপর বিচারক তাকে আবারো প্রশ্ন করেন, ‘আপনি দোষী না নির্দোষ?’

খালেদা জিয়া তখন বলেন, ‘আমি এখন কোনো বক্তব্য দেব না। আপনি সময় দিন, তখন আপনি যে প্রশ্ন করবেন আমি সব প্রশ্নেরই উত্তর দেব। আমি এখন এর বেশি আর বক্তব্য দেব না।’

তখন বিচারক বলেন, ‘কথা না বললে স্বাক্ষর করবেন কীভাবে?’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘সময় দেবেন, সেই দিনই স্বাক্ষর দেব। আমাকে সময় দেবেন, নথি দেবেন। হইচই এর জন্য আমি কিছু শুনতে পারিনি। আপনার প্রতি অনাস্থা দিয়েছি। আমাকে সময় দেন তখন আমি আমার বক্তব্য দেব।’

এরপর বিচার আবারো খালেদা জিয়াকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি দোষী না নির্দোষ?’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘আমি যখন বক্তব্য দেব, তখন আপনি যে প্রশ্ন করবেন সব প্রশ্নের উত্তর দেব। আমি এখন বক্তব্য দেব না। আপনি আমাকে সময় দেবেন, আমি সময় চেয়েছি। তখন আমি আমার বক্তব্য দেব।’

এরপর বিচারক জিজ্ঞাসা করেন, ‘আপনি সাফাই সাক্ষী দেবেন?’

বক্তব্যে সব কথা বলবেন বলে জানান খালেদা জিয়া।

আর কিছু বলবেন কি না, বিচারকের এমন প্রশ্নে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আপনার কাছে সময় চেয়েছি, সময় দেবেন। যেন আমি আমার বক্তব্য ঠিকমতো দিতে পারি।’

এসব প্রশ্নই খালেদা জিয়ার পক্ষে আত্মপক্ষ শুনানির প্রশ্ন হিসেবে বিচারক নথিতে লিপিবদ্ধ করেন বলে জানান দুদকের আইনজীবী মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমেই খালেদা জিয়ার আত্মপক্ষ শুনানি হয়ে গেছে।’ তবে এটা মানতে নারাজ খালেদা জিয়ার আইনজীবী।

এরপর বিচারক আগামী ৯ ফেব্রুয়ারি মামলার এক আসামি শরফুদ্দিন আহমেদ পক্ষে সাফাই সাক্ষীর জন্য দিন ধার্য করেন।

বিকেল সোয়া ৪টার দিকে খালেদা জিয়া আদালত থেকে বের হয়ে বাসার উদ্দেশ্যে যান।

প্রসঙ্গত, এতিমদের জন্য বিদেশি থেকে আসা ২ কোটি ১০ লাখ ৭১ হাজার ৬৭১ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাটি দায়ের করে দুদক। ২০০৮ সালের ৩ জুলাই রমনা থানায় এই মামলাটি দায়ের করা হয়।

২০০৯ সালের ৫ আগস্ট দুদক আসামিদের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে।

অভিযোগপত্রে খালেদা জিয়া, তার বড় ছেলে তারেক রহমান, প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল ও ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের প্রাক্তন সচিব ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ভাগ্নে মমিনুর রহমানকে আসামি করা হয়।

আসামি তারেক রহমান সরকারের নির্বাহী আদেশে দেশের বাইরে আছেন। মাগুরার প্রাক্তন এমপি কাজী সালিমুল হক কামাল ওরফে ইকোনো কামাল, ব্যবসায়ী শরফুদ্দিন আহমেদ জামিনে আছেন। ড. কামাল উদ্দিন সিদ্দিকী ও মমিনুর রহমান মামলার শুরু থেকেই পলাতক। আদালত ২০১৪ সালের ১৯ মার্চ খালেদা জিয়াসহ অপর আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।



রাইজিংবিডি/ঢাকা/২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭/মামুন খান/সাইফুল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ