ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’ : অনিরাপদ শহর

সুজাউদ্দিন রুবেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৩৩, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
বেপরোয়া ‘কিশোর গ্যাং’ : অনিরাপদ শহর

কক্সবাজার প্রতিনিধি : জেলা শহরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান-অলিগলিতে বখাটে ও কিশোর গ্যাংস্টারের উপদ্রব বেড়েছে। একারণে প্রতিনিয়ত যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন ছাত্রীরা। যৌন হয়রানির মুখে অনেক ছাত্রী পড়াশোনা ছাড়তেও বাধ্য হচ্ছেন। শুধু যৌন হয়রানি নয়, কিশোর গ্যাংস্টাররা অপরাধ কর্মকাণ্ডে বেপরোয়া হয়ে উঠায় অনিরাপদ হয়ে উঠেছে শহরের অলিগলি।

দীর্ঘদিন ধরে শহরে কিশোর গ্যাং কালচার চলে আসছে। তবে সম্প্রতি বখাটে বা গ্যাং কালচার মারাত্মকভাবে বেড়ে গেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে দিনভর বখাটেরা আড্ডায় মেতে উঠে। শহরের অলিগলিতে চায়ের দোকান বা বিশেষ কিছু স্থানে অবস্থান নেয় কিশোর গ্যাং। তাদের দ্বারা প্রতিনিয়ত সংগঠিত হচ্ছে নানা অপরাধ। বিশেষ করে মোটরসাইকেল ছিনতাই, ইয়াবা ছিনতাই, খুচরা ইয়াবা বিক্রি ও সেবন, জিম্মি রেখে টাকা আদায়সহ ভয়ংকর সব অপরাধ করে বেড়ায় কিশোর গ্যাং বা সন্ত্রাসী গ্রুপ।

বখাটেপনা বা কিশোর গ্যাং অপরাধ দিনদিন বেড়ে যাওয়ায় চরম উদ্বেগ তৈরি হয়েছে শহরে। তাদের বিরুদ্ধে সামাজিকভাবে প্রতিরোধ করার উপায় না থাকায় অভিভাবকরা চরম শঙ্কিত।

অবশেষে বখাটেপনা এবং কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে মাঠে নেমেছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। শনিবার কক্সবাজার শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে বখাটে ও কিশোর গ্যাংয়ে জড়িত ১৮ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ।

গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক মানস বড়ুয়া রাইজিংবিডিকে জানান, ‘শনিবার শহরের সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির সামনে অভিযান চালিয়ে ১৮ জনকে আটক করা হয়। তারা বখাটে ও গ্যাং কালচারে লিপ্ত রয়েছে।’

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একটি সূত্র জানায়, শহরের কিশোর গ্যাং কালচারে জড়িতদের ইতোমধ্যে শনাক্ত করা হয়েছে। আর যারা কিশোর গ্যাংস্টারদের শেল্টার দেয় অর্থাৎ গডফাদারদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে। তাদের বিষয়ে গোয়েন্দা প্রতিবেদনও তৈরি হয়েছে। কিশোর গ্যাং এবং তাদের গডফাদারদের আইনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

 

 

সূত্রমতে, শহরে এলাকা ভেদে ভিন্ন ভিন্ন কিশোর গ্যাং হলেও তাদের মূল ভিত্তি এক জায়গায়। বেশিরভাগ কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র রাজনীতির সাথে জড়িত এক ব্যক্তি। কিশোর গ্যাংস্টারদের দিয়ে ইয়াবা ছিনতাই, বিক্রি এবং মোটরসাইকেল ছিনতাইয়ের কাজ করায় ওই ব্যক্তি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগের স্তুপ হয়েছে গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে।

ওই ভাই তথা গডফাদারের ছত্রছায়ায় কিশোর গ্যাং এ জড়িত কিশোরেরা শহরজুড়ে নারীদের যৌন হয়রানিতে মেতে উঠেছে। তাদের যৌন হয়রানির কারণে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন স্কুল-কলেজে পড়ুয়া ছাত্রীরা।

নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড পরিচালনা এবং যৌন হয়রানি করার জন্য কিশোর গ্যাংগুলো অবস্থান করে সরকারি মহিলা কলেজ ও সৈকত বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামনে, কেন্দ্রীয় ঈদগাহ ময়দান জামে মসজিদের সামনে, গোলদীঘির পশ্চিমপাড়ে, বাহারছড়ার বিভিন্ন স্থানে, বৌদ্ধমন্দিরের সামনে, বার্মিজ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে, ভোলা বাবুর পেট্টোল পাম্পের পূর্বপাশে কথিত মইত্যার দোকানে, বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমির সামনে, কালুরদোকান, পাহাড়তলী রাস্তার মাথায়, কচ্ছপিয়া পুকুরের পাড়ে, টেকপাড়ার বিভিন্ন অলিগলিসহ বেশকিছু চিহ্নিত স্থানে অবস্থান করে।

এই কিশোররা সংঘবদ্ধ হওয়ায় অনেকেই মনে করেন, এদের পেছনে কোনো গডফাদার বা প্রভাবশালী কেউ রয়েছে। ফলে কেউ এদের বিরুদ্ধে কথা বলার সাহস পান না। প্রকৃতপক্ষে সচেতন মহলের ধারণা সঠিক, সত্যি সত্যি এরা গডফাদারের আর্শিবাদপুষ্ট।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি রাইজিংবিডিকে বলেন, এমন কোন স্থান নেই যেখানে বখাটের উৎপাত নেই। আগে তারা ইভটিজিং এবং কিছু ছিঁচকে অপরাধের সাথে যুক্ত ছিল। কিন্তু কিশোর গ্যাং কালচার নাম দিয়ে এখন তারা ইয়াবা বিক্রি, পাচার, সেবনে জড়িয়ে পড়েছে। অনেক কিশোর গ্যাং দিনদুপুরে মোটরসাইকেল ছিনতাই করছে। খুনোখুনিতেও জড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। তারা যখন তখন যা মন চায় করে বসছে। কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে তিনি কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।

এব্যাপারে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন রাইজিংবিডিকে জানান, কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে কঠোর অবস্থানে পুলিশ। কোনভাবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে এসব অপরাধ গ্রহণযোগ্য নই। এব্যাপারে প্রতিদিনই অভিযান অব্যাহত থাকবে। এছাড়াও কিশোর গ্যাং কালচার বন্ধে জেলা গোয়েন্দা পুলিশ স্পেশালি কাজ করছে।


রাইজিংবিডি/কক্সবাজার/১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯/সুজাউদ্দিন রুবেল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়