ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর দাবিতে সোচ্চার আইনজীবীরা

মেহেদী হাসান ডালিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৩:০৭, ১৯ এপ্রিল ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর দাবিতে সোচ্চার আইনজীবীরা

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে দীর্ঘদিন ধরে সুপ্রিম কোর্টসহ দেশের সব আদালত বন্ধ রয়েছে।  পরিস্থিতি কতদিনে স্বাভাবিক হবে, কবে খুলবে আদালত তা এখনও সবার অজানা। এ অবস্থায় ভার্চুয়াল বা অনলাইনে কোর্ট চালু করার দাবিতে সোচ্চার হয়ে উঠেছেন আইনজীবীরা।

তারা বলছেন, ‘সংবিধানে দেওয়া নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করতে অনলাইনে কোর্টের কার্যক্রম চালু রাখা সময়ের অনিবার্য দাবিতে পরিণত হয়েছে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের হাইকোর্টে  ভার্চুয়াল কোর্টের কার্যক্রম পরিচালনার ঘটনাকে উদাহরণ হিসেবেও টানছেন অনেকে।’

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘বিচার বিভাগকে ডিজিটালাইজেশন করার লক্ষ্যে সরকারের একটি বড় প্রকল্প চলমান রয়েছে। সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে এই সংকটময় মুহূর্তে অনলাইনে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য দ্রুত একটি সিস্টেম দাঁড় করানোর দরকার।’

ছোট পরিসরে হলেও অনলাইনে আদালতের কার্যক্রম চালু করা অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। কেননা ভায়োলেশন, ক্রাইমতো থেমে নেই।  তাই আদালতের কার্যক্রম থেমে থাকতে পারে না। আদালত বন্ধ থাকায় নাগরিকরা সংবিধানে প্রদত্ত আইনের আশ্রয় লাভের অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  এটা সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের লঙ্ঘন বলে মন্তব্য করেন তিনি।

রাশনা ইমাম বলেন ‘করোনা পরিস্থিতির মধ্যেও ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের হাইকোর্ট অনলাইনে মামলা শুনানি করে জরুরি বিষয়ে আদেশ দিয়েছেন, দিচ্ছেন।  প্রধান বিচারপতি চাইলে ছোট পরিসরে জরুরি বিষয় শোনার জন্য আদালতের কার্যক্রম চালু করতে পারেন।  প্রধান বিচারপতির সে ক্ষমতা আছে।  হাইকোর্ট রুলসেও তাকে সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে ‘

এদিকে অনলাইনে হাইকোর্ট বেঞ্চ গঠন করে করোনা সংক্রান্ত জরুরি আদেশ দিতে প্রধান বিচারপতির কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন দুই আইনজীবী।

ব্যারিস্টার আব্দুল হালিম ও অ্যাডভোকেট ইশরাত হাসানের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘করোনার সংক্রমণন রোধে সরকারিভাবে ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।  যেহেতু দেশে কোনো জরুরি অবস্থা জারি করা হয়নি সেহেতু স্বল্প পরিসরে হলেও আদালতের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়া জরুরি। কেননা, বাংলাদেশ সংবিধানে দেশের নাগরিকদের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। সরকার এসব অধিকার বাস্তবায়নে ব্যর্থ হলে সংবিধান অনুসারে উচ্চ আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার সুযোগ রয়েছে। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে দেশের উচ্চ আদালত একেবারেই বন্ধ থাকায় নাগরিকরা আইনের আশ্রয় অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।  সাংবিধানিক বিবেচনায় অনলাইনের মাধ্যমে হাইকোর্টের এক বা একাধিক বেঞ্চ পরিচালনার অনুরোধ জানিয়েছেন তারা।’

সুপ্রিম কোর্টের বারের সভাপতি অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিন রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি মনে করি সীমিত পরিসরে ভার্চুয়ালভাবে আদালতের কার্যক্রম চালু করা প্রয়োজন।  জরুরি বিষয় বিশেষ করে করোনা সংক্রান্ত বিষয় শুনানি ও আদেশের জন্য এটা প্রয়োজন।  আইনজীবী সমিতির পক্ষ থেকে আমরা এরইমধ্যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ভারত ও পাকিস্তানের আদলে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর জন্য প্রধান বিচারপতির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে।  তিনি বলেন,যদিও আমাদের দেশের আইনে অনলাইনে আদালতের কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়টি নেই। তবে সরকার এই পরিস্থিতিতে  অনলাইনে আদালত চালুর বিষয়টি আইনে পরিণত করতে পারেন।’

এ বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের বারের সম্পাদক ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল বলেন, ‘ভার্চুয়াল বা অনলাইন কোর্ট চালুর ক্ষেত্রে যদিও হাইকোর্ট রুলসে কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে। তবে প্রধান বিচারপতি নির্দেশনা জারি করে জরুরি বিষয়গুলোর শুনানির জন্য বিচাপতিদের অ‌্যাসাইন করতে পারেন বলে আমি মনে করি।’

তিনি বলেন, ‘প্রধান বিচারপতিকে ভারত ও পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে ভার্চুয়াল কোর্ট চালুর বিষয়ে অনুরোধ করেছি। তিনি অত্যন্ত সহানুভুতিশীল। প্রধান বিচারপতি বলেছেন, অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে তিনি এ বিষয়ে আলোচনা করবেন।’

ভার্চুয়াল কোর্ট চালু নিয়ে প্রধান বিচারপতিকে চিঠি দেওয়ার বিষয়ে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার ও মুখপাত্র সাইফুর রহমান রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘অনলাইনে কোর্ট চালু করে জরুরি বিষয়ে আদেশ দিতে দুই আইনজীবীর চিঠি আমরা পেয়েছি। চিঠি পর্যালোচনা করা হচ্ছে। চিঠির বিষয়বস্তু প্রধান বিচারপতিকে জানানো হবে।’


ঢাকা/মেহেদী/জেডআর

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়