ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

‘যত দ্রুত সম্ভব অফিস সরিয়ে নেব’

নাসির উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫১, ১২ মার্চ ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘যত দ্রুত সম্ভব অফিস সরিয়ে নেব’

নাসির উদ্দিন চৌধুরী : বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) প্রথম সহসভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ‘আদালতের রায়কে আমরা সম্মান করি, তাই যত দ্রুত সম্ভব এখান থেকে (হাতিরঝিলের জমি দখল করে নির্মিত) বিজিএমইএর অফিস সরিয়ে নেব।’

রোববার সকালে ভবন ভাঙতে বিজিএমইএর করা তিন বছর সময়ের আবেদন গ্রহণযোগ্য নয় বলে মন্তব্য করে প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বিভাগ ভবন ভাঙতে ছয় মাস সময় বেঁধে আদেশ দেন। এ বিষয়ে বিজিএমইএর প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চাইলে মুঠোফোনে রাইজিংবিডিকে এ কথা জানান তিনি।

তিনি বলেন, ‘আমরা এখানে আর থাকব না, তাই যত দ্রুত সম্ভব আমরা এখান থেকে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে মূল বিষয়টি হচ্ছে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা। বাংলাদেশের অর্থনীতির সঙ্গে এটি জড়িত। তাই আমরা ভবন ভাঙতে তিন বছর সময় চেয়েছিলাম। আদালত দিয়েছেন ছয় মাস। এখন আমরা এই ছয় মাসের মধ্যে এখান থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করব।’

কবে থেকে ভবন ভাঙার কাজ শুরু হবে- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভবন ভাঙা বা এখান থেকে অফিস সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে গতকাল (শনিবার) আমাদের একটা বোর্ড মিটিং হয়েছে। আমরা ভবন থেকে সরে যাওয়ার বিষয়ে প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছি। কিন্তু এখনো আমরা আমাদের নতুন অফিসের জন্য জায়গা ঠিক করতে পারিনি। জায়গাটা ঠিক করতে পারলেই আমরা সরে যাব এবং ভাঙার কাজ শুরু হবে।’

তবে বিজিএমইএ নাকি রাজউকের মাধ্যমে ভবনটি ভাঙা হবে, সে বিষয়ে তিনি এখনই কিছু বলতে পারবেন না বলে জানান।

একই বিষয়ে বিজিএমইএর সভাপতি সিদ্দিকুর রহমানের কাছে জানতে চাইলে আইনজীবী ও বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে আলোচনা না করে কিছুই বলতে পারবেন না বলে জানান।

এদিকে গত ৬ মার্চ সচিবালয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিজিএমইএর অফিস ভবন নির্মাণের জন্য উত্তরায় জায়গা দেওয়া হবে। সেখানে তারা দুই-তিন বছরের মধ্যেই ভবন নির্মাণ করে অফিস করতে পারবে।’ এ প্রসঙ্গে সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ‘হ্যাঁ, আশা করছি আমরা খুব শিগগির উত্তরায় জায়গা পেতে যাচ্ছি।এটা সম্ভবত উত্তরার ১৫ বা ১৬ নম্বর সেক্টরে হবে।’

প্রসঙ্গত, ১৯৯৮ সালের ২৮ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিজিএমইএ ভবনের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ভবন নির্মাণ শেষ হলে ২০০৬ সালের ৮ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন উদ্বোধন করেন সে সময়কার প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া। এরপর থেকে ভবনটি বিজিএমইএর প্রধান কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

কিন্তু রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই কারওয়ান বাজারসংলগ্ন বেগুনবাড়ি খালে বিজিএমইএ ভবন নির্মাণ করা হয়েছে উল্লেখ করে ২০১০ সালের ২ অক্টোবর একটি ইংরেজি দৈনিকে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। ওই দিনই প্রতিবেদনটি আদালতে উপস্থাপন করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ডি এইচ এম মনির উদ্দিন।

পরদিন ৩ অক্টোবর বিজিএমইএ ভবন কেন ভাঙার নির্দেশ দেওয়া হবে না, তার কারণ জানতে চেয়ে হাইকোর্ট স্বপ্রণোদিত হয়ে (সুয়োমোটো) রুল জারি করেন।

২০১১ সালের ৩ এপ্রিল বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চ তার রায়ে বিজিএমইএ ভবন ভেঙে ফেলার নির্দেশ দেন। একই সঙ্গে ভবনটি নির্মাণের আগে ওই স্থানের ভূমি যে অবস্থায় ছিল সে অবস্থায় ফিরিয়ে আনতেও নির্দেশ দেন বিজিএমইএকে।

একই বছরের ৫ এপ্রিল বিজিএমইএর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন। পরবর্তী সময়ে আপিল বিভাগ স্থগিতাদেশের মেয়াদ আরো বাড়ান।

এর দুই বছর পর ২০১৩ সালের ১৯ মার্চ হাইকোর্টের ৬৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। রায়ে ভবনটি ৯০ দিনের মধ্যে ভেঙে ফেলে ওই জমি জনকল্যাণে ব্যবহারের নির্দেশ দেওয়া হয়। একই সঙ্গে বিজিএমইএ যাদের কাছে ওই ভবনের ফ্ল্যাট বা অংশ বিক্রি করেছে তাদের টাকা তাদের দাবির এক বছরের মধ্যে ফেরত দিতেও বলেন আদালত।


রাইজিংবিডি/ঢাকা/১২ মার্চ ২০১৭/নাসির/এসএন/এএন

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়