ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

যেন নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা

মামুন খান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:২১, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেন নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা

যাত্রাবাড়ী মোড়ের চিত্র (ছবি : মামুন খান)

যেন নিয়ম ভাঙার প্রতিযোগিতা চলছে। ইচ্ছেমতো যাত্রী ওঠানো ও নামানো হচ্ছে। ছোট-বড় গাড়ির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রিকশাও চলছে মূল সড়কে। চলন্ত বাসেও যাত্রী উঠছে-নামছে। ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পার হচ্ছে মানুষ। যে যার মতো ছুটছেন, হ-য-ব-র-ল অবস্থা।

রোববার সকালে রাজধানীর ব‌্যস্ততম এলাকা যাত্রাবাড়ী মোড়ে এমন চিত্র চোখে পড়ে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে পুলিশের আন্তরিকতা থাকলেও মানুষের চাপে তা সম্ভব হচ্ছে না বলে দাবি করেন সেখানে দায়িত্ব পালনরত একজন সার্জেন্ট।

ফুটওভারব্রিজ না থাকায় যেখানে-সেখানে যে যার মতো সড়ক পার হচ্ছেন। এতে ঘটছে দুর্ঘটনাও। আবার দেখা যায়, মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে অনেকে রাস্তা পার হচ্ছেন। উল্টোপথে চলছে রিকশা। ট্রাফিক সিগন্যালের দিকে কারো খেয়াল নেই। এমন একটি গাড়িও দেখা গেল না যার চালক সিটবেল্ট বেঁধেছেন। এটি শুধু আজকের নয়, প্রতিদিনের চিত্র।

সড়কের একাংশ দখল করে দাঁড়িয়ে আছে বাস, লেগুনা আর রিকশা। আরেক অংশ দখল করে ব্যবসা করছেন হকাররা। এতে প্রশস্ত সড়ক সরু পথে পরিণত হয়েছে।  ফুটপাত ঢাকা পড়েছে হকারদের পণ্যের নিচে। হাঁটার জায়গা না থাকায় সড়কের মাঝখান দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের।

সকাল ১০টায় অফিসগামী হাজারো মানুষের ভিড় জমে যাত্রাবাড়ী মোড়ে। দিনের অন্য সময়ের চেয়ে এই চিত্র একেবারে ভিন্ন। যাত্রীর তুলনায় বাস কিংবা লেগুনা কম থাকায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে ঠাসাঠাসি করে গন্তব্যে পৌঁছাতে সীমাহীন কষ্ট সইতে হয়। যাত্রাবাড়ী থেকে গুলিস্তান কিংবা মতিঝিলের ভাড়া ৫ টাকা হলেও এই সময়টায় ১০-১৫ টাকা দিতে হয়। ভাড়া বেশি দিয়ে চরম দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় যাত্রীদের। বিশেষ করে, নারী এবং শিশুরা চরম দুর্ভোগে পড়েন। কারণ, প্রতিটি গাড়িতে এমনভাবে যাত্রী ওঠানো হয় যে, পা রাখার জায়গা মেলে না।

 

 

এসব রুটে যেসব যানবাহন চলাচল করে সেসবের চিত্র আরো করুণ। কোনো কোনো বাসের ছাদে ছিদ্র, ইঞ্জিন আধা নষ্ট, জানালার গ্লাস ভাঙা, সিট ছেঁড়া, দরজা নড়বড়ে। এসব লক্করঝক্কর লোকাল বাস বছরের পর বছর রাজধানীর বিভিন্ন রুটে চলছে। বিশেষ করে তারাবো, শ্রাবন, বোরাক, গাবতলী লিংক, তুরাগসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের অধিকাংশ বাসের বেহাল দশা। ফলে চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন এ রুটের যাত্রীরা।

গত বছর দেশব্যাপী নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে সড়কে কিছুটা শৃঙ্খলা ফিরেছিল। সে সময় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে দেয়া হয় ১৭টি নির্দেশনা। সংসদে পাস হয় সড়ক পরিবহন আইন। কিন্তু সময়ের ব্যবধানের তার প্রতিফলন দেখা গেল না রাস্তায়। আগের মতো অবস্থা রাজধানীর সব রাস্তায়।

নির্দেশনার মধ্যে ছিল- বাসের দরজা বন্ধ রাখা ও স্টপেজ ছাড়া যাত্রী ওঠানো-নামানোয় নিষেধাজ্ঞা; বাসে দৃশ্যমান দুটি স্থানে চালক ও হেলপারের ছবিসহ নাম, চালকের লাইসেন্স নম্বর, মোবাইল নম্বর প্রদর্শন; সিটবেল্ট ব্যবহার, যেসব সড়কে ফুটওভার ব্রিজ বা আন্ডারপাস আছে সেসব স্থানের উভয় পাশে ১০০ মিটারের মধ্যে রাস্তা পারাপারে নিষেধাজ্ঞা। তবে এগুলোর কোনোটিই মানছেন না বাসচালক-মালিক কিংবা পথচারীরা।

রোববার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী-সায়েদাবাদ ঘুরে আইন না মানার মহড়া চোখে পড়ে এই প্রতিবেদকের। এদিন চলাচলরত কয়েকটি বাসে দেখা গেছে, অধিকাংশ  বাসেরই বেশিরভাগ জানালায় গ্লাস নেই। যেগুলোতে আছে, সেগুলোও ভাঙা-চোরা, বেঁধে রাখা হয়েছে দড়ি দিয়ে।

মিন্টু মিয়া প্রায় ৬ বছর ধরে বাস চালালেও সিটবেল্ট পরা তো দূরের কথা, কখনো বাসে সিটবেল্ট দেখেননি তিনি। তিনি জানান, কোনো গাড়িতেই সিটবেল্ট থাকে না। সিটবেল্ট থাকলে পরব।

প্রাইভেটকারের চালক রিপন জানান, ঢাকা শহরের গাড়ি চলে ধীরে ধীরে। সিটবেল্ট বাঁধা লাগে না।

 

 

এরকম নিয়ম না মানার প্রবণতা সবখানে। জরিমানা করেও কমানো যাচ্ছে না বিশৃঙ্খলা। যেখানে-সেখানে যাত্রীদের নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে যাত্রীদের ওঠানো হচ্ছে। এতে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।

শ্রাবন পরিবহনের একটি বাসে আসা যাত্রী আব্দুর রাজ্জাক রাইজিংবিডিকে বলেন, সাইনবার্ড থেকে বাস ছাড়ার পরেই দেখি, চলন্ত অবস্থায় সিট নড়ছে। যেকোনো মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে। হেলপারকে বলায় তার মন্তব্য ছিল, আমরা কী করব? বাসের মালিক যে গাড়ি দেবে, সে গাড়িতেই আমাদের ডিউটি করতে হবে।

তারাবো পরিবহনের কর্মকর্তা আব্দুর রহমান সব অভিযোগ অস্বীকার করে রাইজিংবিডিকে বলেন, তারাবো পরিবহনের যে বাসগুলো চলছে, সেগুলো খুবই ভালো। আমাদের কোনো স্টাফ অভিযোগ দেয়নি।

ঢাকা মহানগর ট্রাফিক পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, সায়েদাবাদ-গুলিস্তান-সাইনবোর্ড রুটের অধিকাংশ বাসের অবস্থা খারাপ। কোনো বাসের জানালা নেই, চলতি পথে নষ্ট হচ্ছে। আবার চাকা পাংচার হয়ে রাস্তায় পড়ে আছে। এদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়াসহ আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।


ঢাকা/মামুন খান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়