ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

যেভাবে নাম লেখাবেন গিনেজ বুকে

খালেদ সাইফুল্লাহ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৪৫, ৬ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
যেভাবে নাম লেখাবেন গিনেজ বুকে

অতি ক্ষুদ্র একটি বই। কিন্তু বইটিতে নাম উঠানোর জন্য তৎপর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ। তাই তো নানা শারীরিক কসরত, জীবনপণ প্রচেষ্টা কিংবা লাখ লাখ টাকা খরচ করে অসাধ্য সাধনের চেষ্টা করছেন মানুষ। বলছি, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের কথা। যা বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের রেকর্ডসমৃদ্ধ একটি বার্ষিক প্রকাশনা।

শুরুর দিকে বইটিতে নাম উঠানোর জন্য মানুষ এত আগ্রহী ছিলেন না। এটি ছিল অন্য সব বইয়ের মতোই। যেখানে লেখকরা নানা গবেষণার মাধ্যমে নির্দিষ্ট কিছু বিষয়ের সংকলন করতেন। বইটি প্রথম প্রকাশিত হয় ১৯৫৫ সালের ২৭ আগস্ট। যমজ ভাই নরিস ও রস ম্যাকওয়ার্টার বিশ্বের রেকর্ড সৃষ্টি করা সবচেয়ে মোটা, সবচেয়ে ক্ষুদ্র, সবচেয়ে দ্রুততর ব্যক্তি। এমন কিছু রেকর্ডের সংকলন এই বই। শুরুতে বইটির আকার অতি ক্ষুদ্র ছিল। মলাট ছিল সাধারণ। বইটির প্রথম মুদ্রণ হয় ৫০ হাজার কপি। শুরুতে বিক্রেতা মাত্র ৬ কপির অর্ডার পেয়েছিলেন। এরপর দ্রুত ১০০, ১০০০ কপির অর্ডার পেয়ে যান। এভাবেই বইটি জনপ্রিয় হয়ে ওঠে।

গিনেজ মূলত একটি বিয়ারের চোলাইখানার নাম। যার সভাপতি ছিলেন স্যার হিউ বিভার। একবার পাখি শিকারের জন্য হিউ বিভারসহ বেশ কজন ধনাঢ্য ব্যক্তি একস্থানে একত্রিত হন। শিকারের উপযোগী ইউরোপের সবচেয়ে দ্রুতগতির পাখি কোনটি? এ নিয়ে তখন তাদের মধ্যে তর্ক বাধে। এসময় গিনেজের এক কর্মচারী যমজ ভাইয়ের কথা জানায়। এই দুই ভাইয়ের একজন ছিলেন অ্যাথলেট, অন্যজন সাংবাদিক। তথ্যানুসন্ধানের আগ্রহের কারণে এরা লন্ডনে একটি সংস্থা গড়ে তুলেন। স্যার হিউ এই দুই ভাইকে নানা প্রশ্ন করে তাদের উত্তর পেয়ে অভিভূত হন এবং তাদেরকে গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড তৈরির দায়িত্ব দেন।

১৯৫৫ সালে ব্রিটেনে ক্রিসমাসের সময় সবচেয়ে বেশি বিক্রিত বই ছিল এটি। মাত্র এক দশক পর এটি বিশ্বের অন্যতম বেস্ট সেলার বই হয়ে ওঠে। কিন্তু বিশ্বের যাবতীয় রেকর্ডসমৃদ্ধ এ বইয়ে নাম তুলবেন কীভাবে?

পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত থেকে কেউ যদি মনে করেন, তিনি যা করছেন ইতোপূর্বে তা কেউ করতে পারেনি, তবে সে গিনেজ বুকে নাম লেখানোর জন্য গিনেজ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন। একসময় চিঠি লিখে গিনেজ কর্তৃপক্ষকে অবহিত করতে হতো। এখন অনলাইনে গিনেজ রেকর্ডের আবেদন করা যায়। আবেদনের জন্য গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে ঢুকে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। নিজের অ্যাকাউন্ট সক্রিয় হলে লগ-ইন করতে হবে। তারপর উল্লেখিত রেকর্ডের তালিকা থেকে নিজের রেকর্ডের নাম বেছে নিতে হবে। ওই শ্রেণি না থাকলে ‘অ্যাপ্লাই ফর এ নিউ রেকর্ড টাইটেল’-এ ক্লিক করতে হবে। সেখানে একটি অনলাইন অ্যাপ্লিকেশন ফরম পূরণ করতে হবে। যদি ৫ কর্মদিবসের মধ্যে আপনার পরবর্তী নির্দেশনা পেতে চান, তবে আপনাকে ফি প্রদান করে ‘প্রায়োরিটি অ্যাপ্লিকেশন ফরম’ পূরণ করতে হবে। সাধারণভাবে এটি প্রায় ১২ সপ্তাহ পর্যন্ত সময় নিতে পারে।

গিনেজ কর্তৃপক্ষ তাদের বিশাল সংখ্যক ডাটাবেজের মধ্য থেকে আপনার আবেদনটি যাচাই বাছাই করবে। তা নির্বাচিত হওয়ার যোগ্য হলে আপনাকে পরবর্তী নির্দেশনা দেবে। অন্যথায় আপনার আবেদন বাতিল হবে। আবেদনটি গৃহীত হলে আপনার কাছে বিস্তারিত তথ্য এবং রেকর্ডের সত্যতা যাচাইয়ের প্রমাণ চাওয়া হবে। প্রমাণ যাচাইয়ের জন্য সাধারণ ক্ষেত্রে কমপক্ষে ১২ সপ্তাহ সময় নেবে। ‘প্রায়োরিটি অ্যাপ্লিকেশন’-এর ক্ষেত্রে ৫ সপ্তাহ লাগবে। এরপর আপনাকে পরবর্তী নির্দেশনা দেওয়া হবে।

১৯৫৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত গিনেজ বুক অব রেকর্ডসের ৬৪টি সংস্করণ বেরিয়েছে। বিশ্বের ১০০টি দেশে ৩৭টি ভাষায় ১০০ মিলিয়ন কপির বেশি বিক্রি হয়েছে। যা এখন পর্যন্ত বিশ্ব বাজারে বেস্ট সেলার বইয়ের মর্যাদা ধরে রেখেছে। প্রতিটি সংস্করণে তাদের ডাটাবেজ থেকে নির্বাচিত রেকর্ডের সঙ্গে নতুন রেকর্ডসমূহ যোগ হয়। এখানে ব্যক্তি, দল কিংবা কোনো দেশের কর্মকাণ্ডের সঙ্গে প্রাকৃতিক ঘটনাবলীর রেকর্ডও অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

গিনেজ বুকে বাংলাদেশের বেশকিছু রেকর্ড রয়েছে। যেমন: ২০১৪ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ একসঙ্গে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করে রেকর্ড গড়ে বাংলাদেশ, সর্বোচ্চ সংখ্যক রিকশার নগরী হিসেবে রেকর্ড করেছে ঢাকা শহর, ২০০২ সালে টেবিল টেনিসে বেশিবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় গিনেজ বুকে নাম লেখান বাংলাদেশের জোবেরা রহমান লিনু, ২০১৫ সালের ২২ নভেম্বর, মাথায় ফুটবল নিয়ে স্কেটিং জুতা পরে দ্রুত সময়ে ১০০ মিটার অতিক্রম করে গিনেজ বুকে তালিকাভুক্ত হন আব্দুল হালিম। এ কাজের জন্য তাকে পৃষ্ঠপোষকতা করে ওয়ালটন। এছাড়াও বাংলাদেশের বেশকিছু রেকর্ড গিনেজ বুকে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।

 

ঢাকা/শান্ত

রাইজিংবিডি.কম

সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়