ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রওশনের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি, চমক হাওলাদার

মোহাম্মদ নঈমুদ্দীন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১১:৪০, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রওশনের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি, চমক হাওলাদার

জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্ঠপোষক হিসেবে রওশন এরশাদের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ফখরুল ইমাম এমপি।

শুক্রবার দলের বনানী কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়াম সভায় তিনি এ দাবি করেন।

রওশন এরশাদকে দলের সর্বোচ্চ শীর্ষনেতা হিসেবে আমৃত্যু প্রধান পৃষ্ঠপোষক করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়। নতুন পদটি গঠনতন্ত্রেও অনুমোদন দেয়া হয়। প্রধান পৃষ্ঠপোষকের মর্যাদা দেয়া হয়েছে চেয়ারম্যানের উপরে। একমাত্র তিনিই প্রয়াত চেয়ারম্যানের পরে দলীয় পতাকা বহন করবেন।  দলীয় ও পাবলিক সভাতেও তিনি চেয়ারম্যানের উপরে মর্যাদা ভোগ করবেন। তবে তার আদেশ নিষেধ চেয়ারম্যানসহ জাতীয় পার্টি মানতে বাধ্য নন। এ বিষয়টি গঠনতন্ত্রে যুক্ত করে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের ক্ষমতা বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন ফখরুল ইমাম।

প্রেসিডিয়ামের সভায় তিনি বলেন, ম্যাডাম যদি চেয়ারম্যানের উপরে মর্যাদা ভোগ করেন তাহলে তার ক্ষমতা বাড়াতে হবে। আর সেটি গঠনতন্ত্রে যুক্ত করতে হবে। প্রয়োজনে দলের গঠনতন্ত্রে চেয়ারম্যানের ক্ষমতা ২০ এর ক বিলুপ্ত করে সেখানে প্রধান পৃষ্ঠপোষকের আদেশ নিষেধ মানার বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তার সঙ্গে সুর মিলিয়ে কথা বলেন দলের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য আজম খান। তিনি বলেন, দলের গঠনতন্ত্রের ২০ ক বহাল রেখে যদি চেয়ারম্যান ও কো চেয়ারম্যানদের যৌথ নেতৃত্বে দল পরিচালিত হয় সেক্ষেত্রে এটি হবে সাংঘর্ষিক।

এ প্রসঙ্গে ফখরুল ইমাম রাইজিংবিডিকে বলেন, ম্যাডামের মর্যাদা ঠিক আছে। কিন্তু পাওয়ার বাড়াতে হবে। আমি সেটা বলেছি। ২০ এর ক এ চেয়ারম্যানের একক ক্ষমতার কথা বলা আছে। সেটা পরিবর্তন করা দরকার। তাছাড়া চেয়ারম্যান নিজেই বলেছেন দল পৃষ্ঠপোষক ও কো চেয়ারম্যানদের নিয়ে যৌথ নেতৃত্বে চলবে তাহলে ২০ এর ক ধারা থাকে কীভাবে? তিনি দলের নির্বাহী ক্ষমতা ২৯৯ থেকে আর না বাড়ানোর দাবি জানান। যদি বাড়াতে হয় সেটা যেন দশ শতাংশ হয়।

প্রেসিডিয়ামের চমক হাওলাদারের আবেগি বক্তৃতা

হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুর পর তার ছোটভাই জিএম কাদেরের নেতৃত্বে শুক্রবার বনানী কার্যালয়ে এই প্রথম দলের বিদায়ী কমিটির সর্বশেষ প্রেসিডিয়াম সভায় চমক সৃষ্টি করেছেন সাবেক মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার।

স্ত্রী নাসরিন জাহান হাওলাদার রত্না আমিনকে সঙ্গে নিয়ে প্রেসিডিয়ামে যোগ দেন তিনি। দলের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদের অবদান ও তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করে আবেগি বক্তৃতা দেন প্রেসিডিয়াম সভায়। তার সক্রিয় উপস্থিতি জানান দিয়ে বনানী কার্যালয়ে তার অনুসারী নেতাকর্মীরা হাওলাদারের নামে স্লোগানও দেন।

প্রেসিডিয়াম সভায় এরশাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে দলের ঐক্য কামনা করে হাওলাদার বলেন, প্রয়াত চেয়ারম্যান ও সাবেক রাষ্ট্রপতির রেখে যাওয়া জাতীয় পার্টিকে সামনে এগিয়ে নিতে তার স্বপ্নপূরণে আমি আজ হাজির হয়েছি। জাতীয় পার্টি শুধু আমার আপনার না, তৃণমূল নেতাকর্মী সবার। জিএম কাদেরের নেতৃত্বে ভেদাভেদ ভুলে সবাই মিলে আমরা জাতীয় পার্টিকে এগিয়ে নেব। আমাদের প্রয়াত চেয়ারম্যানও বলেছিলেন, তার অবর্তমানে জাতীয় পার্টি যেন বিভক্ত না হয়, শক্তিশালী হয়, সুসংগঠিত হয়, সেজন্য আমরা সবাই এক আছি। সবাইকে নিয়ে জাতীয় পার্টি এগিয়ে যাবে। আশা করছি জাতীয় পার্টি সবার সহযোগিতায় নতুন যাত্রা শুরু করবে, দিন দিন শক্তিশালী হবে এবং আগামীতে মনজিল মকসুদে পৌছাঁবে।

তিনি বলেন, দলের চেয়ারম্যান হিসেবে আমরা জিএম কাদের ও মহাসচিব হিসেবে মসিউর রহমান রাঙ্গাকে সমর্থন জানিয়েছি। দলের প্রেসিডিয়ামের সদস্যরাও আমার সঙ্গে একমত হয়েছেন।

জানা গেছে, রুহুল আমিন হাওলাদারের আবেগি বক্তব্যে স্বাগত জানান উপস্থিত প্রেসিডিয়াম সদস্যরা। জাতীয় পার্টিতে ঐক্যের উপর গুরুত্ব দিয়ে অভিন্ন সুরে কথা বলেন দীর্ঘদিন পর প্রেসিডিয়ামে যোগ দেয়া দলের জ্যেষ্ঠ নেতা ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ অনেকেই।

জাপায় পদের বহর, বিরোধিতায় কাজী মামুন

২৮ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় কাউন্সিলে জাতীয় পার্টির নতুন কমিটি যুক্ত হবে নতুন অনেক পদ। দলের প্রধান পৃষ্ঠপোষক, সাতজন কো-চেয়ারম্যান, ৮ জন অতিরিক্ত মহাসচিব, উপদেষ্টার কলেবর বৃদ্ধিসহ পদের বহর জাতীয় পার্টিতে। দলের ৫১ সদস্যের প্রেসিডিয়াম, বড় আকারের ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টার বহর তো আছেই।

শুক্রবার অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম সভায় এমন বিশাল পদের বহরের বিরোধিতা করে নেতাকর্মীদের প্রশংসা কুড়িয়েছে জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী মামুনুর রশীদ।

সভায় তিনি বলেন, দেশের প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ, বিএনপিসহ বড় রাজনৈতিক দলে এমন বিশাল পদের বহর নেই। এত প্রেসিডিয়াম, এত ভাইস চেয়ারম্যান ও উপদেষ্টাও নেই। এসব শুনলে মানুষ হাসে, দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।

তিনি বলেন, জাতীয় পার্টিকে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সঙ্গে তাল মিলিয়ে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ২১ সদস্যে নামিয়ে আনা হোক। এটা স্ট্যান্ডার্ড প্রাকটিস হবে। প্রয়োজনে আমাদের অন্য জায়গায় দিন, আমরা কাজ করবো। কো চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্তির দাবি জানান তিনি। বলেন, দলের প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ তার প্রয়োজনে পরিবারের সদস্যদের সম্মান দিতেই এই পদ দুটি সৃষ্টি করেছিলেন। তার সম্মান রক্ষার্থে হলেও এই কো চেয়ারম্যান পদ বিলুপ্ত করা দরকার। কো চেয়ারম্যান মূলত অনেকটা ভাইস চেয়ারম্যানের মর্যাদার। তাছাড়া দলে এত কো চেয়ারম্যান হলে নেতাদের মান মর্যাদা বলতে কিছুই থাকবে না। কাজী মামুন অতিরিক্ত মহাসচিব পদেরও বিরোধিতা করে বলেন, এই পদ দরকার নেই। আমাদের অনেক যুগ্ম মহাসচিব আছেন। তারা কাজ পায় না, তাদের কাজে লাগান। বরং অতিরিক্ত মহাসচিব পদ সৃষ্টি করে দলে পদের বহর বাড়ানো হচ্ছে। তিনি জাতীয় পার্টিকে একটি মর্যাদাবান রাজনৈতিক দলে পরিণত করতে চেয়ারম্যান ও মহাসচিবসহ নীতি নির্ধারণী ফোরামের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।

এ প্রসঙ্গে কাজী মামুন জানান, বৈঠকে আমি পদের এসব বহরের বিরোধিতা করেছি। তবে আমি বলেছি, এরশাদের স্ত্রী হিসেবে রওশন এরশাদকে সর্বোচ্চ সম্মান দিতে হবে। এরশাদ পরিবারকে কখনো জাতির কাছে হেয় করা যাবে না। এতে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়।


ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ