ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রণদা প্রসাদ হত্যাকান্ডের রায়ে খুশী স্বজনরা

শাহরিয়ার সিফাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:৩৪, ২৭ জুন ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রণদা প্রসাদ হত্যাকান্ডের রায়ে খুশী স্বজনরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, টাঙ্গাইল : ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহাসহ সাতজনকে হত্যার ঘটনায় যুদ্ধাপরাধ মামলায় মাহবুবুর রহমানের ফাঁসির রায় হওয়ায় আনন্দে ভাসছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের অধিবাসীরা। এমন রায়ে খুশি শহীদ রণদা প্রসাদ সাহার পরিবারের সদস্যরা। তবে স্বাধীনতার ৪৭ বছরেরও বেশি সময় পর শুধু এমন রায়েই সন্তুষ্ট থাকতে চান না তারা। তাদের দাবি, দ্রুত এই রায় কার্যকর করে মাহবুবুর রহমানের শাস্তি দেয়া হোক।

রায়ের পর শহীদ পরিবারের সদস্য শ্যাম সুন্দর বলেন, দীর্ঘদিন পর আজ আমরা আনন্দিত। আমার বাবা, জেঠাসহ যারা শহীদ হয়েছিলেন, তাদের হত্যাকারীদের ফাঁসির রায় হয়েছে শুনে আমাদের খুব আনন্দ হচ্ছে। তবে শুধু রায়েই থেমে থাকা নয়, দ্রুত সময়ের মধ্যে রায়টি কার্যকর করার দাবি জানাচ্ছি।

ভাষা সৈনিক ও কুমুদিনী ট্রাস্টের পরিচালক প্রতিভা মুৎসুদ্দি বলেন, রনদা প্রসাদ সাহা তার জীবনে সব কিছু দিয়ে দিয়েছেন। নিজে নিজে কিছু ভোগ করেননি, সব মানুষকে দিয়ে দিয়েছেন। তিনি অসহায় এবং গরীবদেরও বিনা পয়সায় স্বাস্থ্য সেবা দিয়েছেন। রনদা প্রসাদ সাহা ও তার একমাত্র ছেলেসহ অনেককেই পাকিস্তানি দোসররা হত্যা করেছে। আমরা এর বিচার চেয়েছিলাম। আমরা অনেকেই সাক্ষ্যও দিয়েছি। আজ এই মামলার রায় হয়েছে। আর তাতে আমরা সন্তুষ্ট। তবে আমাদের দাবি দ্রুত এই রায় কার্যকর করা হোক। যাতে আর কোন অপরাধী এমন ঘৃন্য কাজে লিপ্ত হওয়ার সাহস না পায়।

বৃহস্পতিবার দানবীর রণদা প্রসাদ সাহা ও তার ছেলেসহ সাতজনকে হত্যা মামালার একমাত্র আসামী মো. মাহবুবুর রহমানের ফাঁসির আদেশ দেয় আদালত। মো. মাহবুবুর রহমান (৭০) টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের বৈরাটিয়া পাড়ার আব্দুল ওয়াদুদের ছেলে। আব্দুল ওয়াদুদ ১৯৭১ সালে মির্জাপুর শান্তিরক্ষা কমিটির সভাপতি ছিলেন। তাই দুই ছেলে মাহবুবুর রহমান ও আব্দুল মান্নান সে সময় রাজাকার বাহিনীতে ছিলেন।

রণদা প্রসাদ সাহার পৈত্রিক নিবাস টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে। সেখানে তিনি একাধিক শিক্ষা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। বিখ্যাত কুমুদিনী ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতাও তিনি।

উপ মহাদেশের প্রখ্যাত দানবীর, মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক, নারী শিক্ষা ও নারী জাগরণের অগ্রপথিক ছিলেন দানবীর রনদা প্রসাদ সাহা। আজীবন আর্ত মানবতার সেবায় কাজ করেছেন তিনি। টাঙ্গাইলসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠা করেছেন একাধিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দাতব্য চিকিৎসালয়।

মহান মুক্তিযুদ্ধে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা। তিনি তার প্রতিষ্ঠিত হাসপাতালে মুক্তিযুদ্ধের ময়দানে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা করাতেন। একারনে দানবীর রনদা প্রসাদ সাহাকে হত্যার পরিকল্পনা করে পাকিস্থানী হায়েনারা। ১৯৭১ সালের ৭ মে স্থানীয় রাজাকার মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে রাজাকাররা হত্যাযজ্ঞ চালায় গোটা মির্জাপুরে। তারা সেদিন রণদা প্রসাদ সাহাকে ধরতে আক্রমন করে তার বাড়ি ও হাসপাতালসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। তাকে ধরতে না পেরে রাজাকার বাহিনী জ্বালিয়ে দেয় কয়েকটি গ্রাম। হত্যা করে বহু বাঙ্গালীকে।

রাজাকার মাহবুবুর রহমান ৭মে মধ্যরাতে নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় রাজাকারদের সহায়তায় পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর ২০-২৫ জন সদস্যকে নিয়ে রণদা প্রসাদ সাহার বাসায় অভিযান চালায়। অভিযানে রণদা প্রসাদ সাহা, তাঁর ছেলে ভবানী প্রসাদ সাহা, রণদা প্রসাদের ঘনিষ্ঠ সহচর গৌর গোপাল সাহা, রাখাল মতলব ও রণদা প্রসাদ সাহার দারোয়ানসহ সাতজনকে অপহরণ করে নিয়ে যায়। পরে সবাইকে হত্যা করে মরদেহ নদীতে ফেলে দেওয়া হয়। এরপর তাদের মরদেহ আর পাওয়া যায়নি।

একটি ফৌজদারি মামলায় ৭০ বছর বয়সী মাহবুবুর রহমানকে গত বছর গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই বছরের ৯ জুন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।

 

রাইজিংবিডি/ টাঙ্গাইল/ ২৭ জুন, ২০১৯/ সিফাত/ সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়