ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস বন্ধ করুন: প্রগতিশীল ছাত্রজোট

নিউজ ডেস্ক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১০:২৮, ১২ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজনীতি নয়, সন্ত্রাস বন্ধ করুন: প্রগতিশীল ছাত্রজোট

ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করে বুয়েটকে অবরুদ্ধ করবে বলে সন্ত্রাস-দখলদারীত্ব বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ নেয়ার দাবি জানিয়েছে প্রগতিশীল ছাত্রজোট।

শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের মধুর ‌ক‌্যান্টিনে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর এই জোটের নেতারা এ দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব‌্য পাঠ করেন প্রগতিশীল ছাত্র জোটের সমন্বয়ক সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি আল কাদেরী জয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সন্ত্রাস বন্ধে কার্যকর উদ‌্যোগ না নিয়ে এ ধরণের নিশেধাজ্ঞা বুয়েটকে অবরুদ্ধ করবে, বিরোধী মত দমনের প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করবে।

বাম ছাত্রনেতারা বলেন, ‘বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার নৃশংসতায় সারা দেশের মানুষ স্তম্ভিত। যদিও আমরা বহু আগে থেকেই গণরুম- গেস্টরুমে ছাত্র নির্যাতন বন্ধের দাবি করে আসছিলাম। দাবি করেছিলাম, সিট বন্টনে প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণের। কিন্তু সেসব কোন কিছুই কোন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কানে তোলেনি। যার ফলশ্রুতিতে প্রাণ হারাতে হল নিরীহ শিক্ষার্থী আবরারকে, ধ্বংস হয়েছে বহু শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন।’

আবরারের মৃত্যুর পর ৫ দিন ধরে বুয়েটের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ায় প্রগতিশীল ছাত্রজোটের পক্ষ থেকে অভিনন্দন জানিয়ে বলা হয়, ‘শুক্রবার বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) প্রশাসনের সাথে শিক্ষার্থীদের সভায় বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ঘোষণা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় প্রগতিশীল ছাত্র জোট এই ঘোষণার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছে। আমরা মনে করি, এটি একটি ভয়ংকর অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্ত এবং সকল ধরণের বিরোধী মত এবং তার ভিত্তিতে সংগঠিত শক্তিকে দমনের একটি হাতিয়ারমাত্র।’

এটি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে প্রতারণা উল্লেখ করে  জোটের সমন্বয়ক বলেন, ‘কার্যত বুয়েট চলে ১৯৬১ সালের অধ্যাদেশ অনুযায়ী, যে অধ্যাদেশে বুয়েটে ইতোমধ্যেই ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ। দ্বিতীয়ত, বুয়েটে গত এক দশকে ছাত্র রাজনীতি ছিলই না। শুধু ছিল রাজনীতির নামে ছাত্রলীগের চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড আর নির্যাতন। বিরোধী কোন ছাত্র সংগঠন ক্যাম্পাসে কাজ করতে গেলে নির্মমভাবে তাদের দমন করা হয়েছে। ২০১১ সালে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট বুয়েট শাখার তৎকালীন আহ্বায়ক ও সাধারণ সম্পাদক ছাত্রলীগের চাঁদাবাজির বিরোধিতা করায় তাদেরকে দফায় দফায় নির্মম আক্রমণের শিকার হতে হয়। বুয়েটে কর্মসূচীর প্রচার চালাতে গিয়ে কেন্দ্রীয় প্রগতিশীল ছাত্র জোট নেতৃবৃন্দকেও ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীদের দ্বারা লাঞ্ছিত হতে হয়েছে।’

বাম ছাত্রনেতারা বলেন, আবরার ফাহাদ হত্যাকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মত বুয়েটে দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকা ছাত্রলীগের এই একচ্ছত্র সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, অগণতান্ত্রিক আচরণ, দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে বুয়েটের শিক্ষার্থীদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভ প্রকাশ পেয়েছে। বাস্তবে বুয়েট শিক্ষার্থীদের ক্ষোভ ছাত্র রাজনীতি নয়, শাসক দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের রাজনীতির বিরুদ্ধে। ক্যাম্পাসে, হলে হলে টর্চার সেলগুলো একদিনে তৈরি হয়নি। প্রশাসনের নির্লিপ্ততা যা প্রকারান্তরে পৃষ্ঠপোষকতারই নামান্তর, সে কারণেই এই টর্চার সেল গুলো গড়ে উঠেছে এবং টিকে থেকেছে এতদিন ধরে। আমরা এর আগেও দেখেছি বিভিন্ন সময়ে এভাবেই প্রকাশ্যে সাধারণ শিক্ষার্থীদেরকে বিভিন্ন তকমা দিয়ে মারধর করার ঘটনা। এর বিরুদ্ধে প্রশাসন কখনোই কোন ব্যাবস্থা নেয়নি। এখানে শিক্ষার্থীদের তাৎক্ষণিক আবেগকে কাজে লাগিয়ে এই ঘটনার মূল উৎস যে অগণতান্ত্রিক চর্চা, সেই অগণতান্ত্রিক চর্চাকেই আড়াল করে আরো শক্তিশালী করবার আয়োজন করেছে বুয়েট প্রশাসন।’

আবরারের রাজনৈতিক বিষয়ে লেখার কারণেই যে প্রাণ দিতে হয়েছে সে কথা স্মরণ করিয়ে প্রগতিশীল ছাত্রজেোটের নেতারা বলেন, ‘নিহত আবরার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিল ভারত বাংলাদেশ সমঝোতা চুক্তি নিয়ে, যেটি একটি রাজনৈতিক বিষয়। তার রাজনৈতিক অধিকার, এই চুক্তির বিরোধিতা করা। এই খুনের জন্য দায়ী এই রাজনৈতিক অধিকারকে যারা দমন করে তারা। কিন্তু রাজনীতি নিষিদ্ধ করার মধ্য দিয়ে প্রকারান্তরে এই খুনের দায় চাপানো হল আবরারের রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে স্ট্যাটাস দেওয়ার উপরেই। এবং এই নিষেধাজ্ঞার মধ্য দিয়েই রাষ্ট্র, বিশ্ববিদ্যালয় এবং সমাজের যে কোন অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগঠিত প্রতিবাদ, যেকোন রাজনৈতিক বিষয়ে বক্তব্য, মতামত দেওয়ার অধিকার দমন করার সবচেয়ে বড় হাতিয়ার বুয়েট প্রশাসনের হাতে তুলে দেওয়া হল।’

ছাত্র রাজনীতি বন্ধের বিষয়ে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে সনি হত‌্যার পরবর্তী পরিস্থিতি তুলে ধরে নেতারা বলেন, অতীতে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের গোলাগুলিতে বুয়েট শিক্ষার্থী সাবেকুন্নাহার সনি হত্যার বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা আন্দোলন দমন করতেও বুয়েট প্রশাসন ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করেছিল। কিন্তু এর মাধ্যমে কি শিক্ষার্থীদের উপর নির্যাতন-নিপীড়ন বন্ধ হয়েছে? বরং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বা হত্যাকাণ্ডের দায় ছাত্ররাজনীতির উপর চাপিয়ে এরা সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর প্রতি ছাত্রদের অসন্তোষকে আড়াল করতে চাইছে। বেশ কিছু বিশ্ববিদ্যালয় এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজনীতি নিষিদ্ধ কিন্তু তাতে কি সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠনের সন্ত্রাসীদের দৌরাত্ম কমেছে? এই সিদ্ধান্ত তাৎক্ষণিক ভাবে চমকপ্রদ মনে হলেও এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। বদ্ধ পানিতে যেমন শ্যাওলা-কীট জন্মায়, তেমনি রাজনীতিহীন বদ্ধ পরিবেশে জন্ম নেবে কূপমন্ডুক-মৌলবাদী প্রতিক্রিয়াশীল নানা চিন্তার উপাদান।’

৪৫ বছরের দেড় শতাধিক শিক্ষার্থীকে হত‌্যার কারণ তুলে ধরে প্রগতিশীল নেতারা বলেন, ‘আমরা দেখেছি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে  জোবায়েরের লাশ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের  আবু বকর, হাফিজুর মোল্লার লাশ। গত ৪৫ বছরেই শিক্ষাঙ্গনগুলোতে খুন হয়েছে ১৫১ জন শিক্ষার্থী। ২০১০ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত হল দখল ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে খুন হয়েছে ৮ জন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে হত্যাকান্ড ৫ টি। ২০১২ সালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ দ্বারা সংঘটিত হয়েছে বহুল আলোচিত বিশ্বজিৎ হত্যাকান্ড। এই তালিকায় আরো নাম রয়েছে রুয়েট, যবিপ্রবি, শাবিপ্রবি, হাবিপ্রবিসহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়। বিচার কার্যকর হয়নি একটিরও। প্রশ্ন হচ্ছে এই যে খুন ও বিচারহীনতার সংস্কৃতি এইগুলো কি একদিনে  তৈরি হয়েছে? এই সংস্কৃতি বন্ধের পথ কোনদিকে? উৎস বা উৎপত্তি স্থান টিকিয়ে রেখে আর যাই করা হোক না কেন, এই লাশের মিছিল বন্ধ হবে না। শাসকরা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে ভয় পায়, তারা জানে এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে প্রতিরোধের শক্তি আছে তা যেকোন মুহূর্তে ক্ষমতার মসনদকে কাঁপিয়ে দিতে পারে।’

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের দপ্তর সম্পাদক সজল বাড়ৈয়ের পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের নাসির উদ্দিন প্রিন্সের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি মেহেদি হাসান নোবেল, বাসদের (মার্কসবাদী) ছাত্র সংগঠন সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের সভাপতি মাসুদ রানা এবং বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি ইকবাল কবিরসহ প্রগতিশীল ছাত্রজোটের কেন্দ্রীয় নেতারা।

 

ঢাবি/নিউজ ডেস্ক/সাজেদ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়