ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

রাজসিক প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশকে জেতালেন আফিফ

ইয়াসিন হাসান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৮:৩৬, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
রাজসিক প্রত্যাবর্তনে বাংলাদেশকে জেতালেন আফিফ

ছবি : মিলটন আহমেদ

মিরপুর থেকে ইয়াসিন হাসান: প্রত্যাবর্তন তাহলে একেই বলে।  ইনজুরিতে জর্জরিত এক দলে আফিফ হোসেনের অভিষেক হয়েছিল গত বছর।   বল হাতে এক উইকেট, ব্যাট হাতে শূন্য রান।  ওই এক ম্যাচ খেলেই বাদ।  আবার ফিরলেন।  ফিরলেন এমনভাবে যেই মঞ্চে সবথেকে আলোকিত তারা তিনি।  অথচ ড্রেসিং রুমে সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহর মতো ধ্রুবতারা চেয়ে দেখে আফিফের মহাকীর্তি।

মিরপুর শের-ই-বাংলায় সাব্বির রহমান অদ্ভুতুরে শটে নিজের উইকেট বিসর্জনের পর ব্যাটিংয়ে আসেন আফিফ।  জিম্বাবুয়ের দেওয়া ১৪৫ রান তাড়া করতে নেমে বাংলাদেশের রান তখন ছয় উইকেটে ৬০।  জয়ের জন্য বাংলাদেশের প্রয়োজন ৫১ বলে ৮৫।  সেখান থেকে দলের হাল ধরলেন।  উইকেটের চারিপাশে শট খেলে করলেন পাল্টা আক্রমণ।  তাতে এলোমেলো জিম্বাবুয়ে।  বাংলাদেশ ম্যাচ জিতল অনায়েস।  আফিফের ২৬ বলে ৫২ রানের ইনিংসে ত্রিদেশীয় সিরিজের প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে তিন উইকেটে হারাল বাংলাদেশ।

ফেরার মঞ্চে আফিফ নায়ক।  পার্শ্বচরিত্রে অভিনয় করলেন মোসাদ্দেক।  দুজনের ৪৭ বলে ৮২ রানের মহামূল্যবান জুটিতে জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে বাংলাদেশ।  মোসাদ্দেকের ব্যাট থেকে আসল ২৪ বলে ৩০ রান।  আক্রমণের শুরুটা করেছিলেন আফিফ।  চারে মেরে খুলেছিলেন রানের খাতা।  এরপর শেন উইলিয়ামসনের এক ওভারে দুই চার ও এক ছক্কায় মাঠ মাতিয়ে তুলেন। ধারাবাহিক ব্যাটিংয়ে রানের চাকা সচল রাখেন এ বাঁহাতি।  মোসাদ্দেক লেগ স্পিনার বার্লকে এগিয়ে এসে পরপর দুই ছক্কা মেরে চাপ কমান।  ধাপে ধাপে বলের সঙ্গে রানের ব্যবধান কমতে থাকে।  দ্যুতি ছড়িয়ে ২৫ বলে আফিফ তুলে নেন ফিফটি।  

জয়ের থেকে ৩ রান দূরে থাকতে আফিফ যখন সাজঘরে ফিরলেন তখন পুরো স্টেডিয়াম দাঁড়িয়ে। ড্রেসিং রুমের বাইরে টিম ম্যানেজম্যান্ট দাঁড়িয়ে স্বাগত জানালেন নতুন টাইগারকে।  ড্রেসিংরুমের ভেতরে মুশফিক, সাকিব, মাহমুদউল্লাহ আগলে ধরলেন সতীর্থকে।  এমন দিনের জন্যই তো অপেক্ষা করেছিলেন আফিফ।

একটা জয়ের জন্য ছটফট করছিল বাংলাদেশ দল।  আফিফের কীর্তিতে কাঙ্খিত জয় পেলেও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে যেভাবে জিতেছে সেই জয়ে সন্তুষ্ট হওয়ার কথা সামান্যই। বিশেষ করে ব্যাটিংয়ে দলের টপ ও মিডল অর্ডার যেভাবে ভুগেছে তাতে ব্যাটিং নিয়ে অনেক প্রশ্ন উঠছে।  ছক্কা, চারে ব্যাটিং শুরুর পর লিটন ডাউন দ্য উইকেটে এসে চাতারার ইয়র্কারে বোল্ড হন।  পরের ওভারের প্রথম বলে সৌম্য জারভিসের স্লোয়ারে ক্যাচ তোলেন।  মুশফিক রহিম এক বল পর জারভিসের বাউন্সারের শিকার।  অধিনায়ক সাকিব দলের হাল ধরতে ব্যর্থ।  চাতারার বলে স্লিপে ক্যাচ তোলেন এক রানে।   

মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা চালালেন। আশা দেখালেন বড় কিছুর। কিন্তু বার্লের লেগ স্পিনে পরাস্ত ১৪ রানে। আর সাব্বির রহমান ১৫ রানে অফস্ট্যাম্পের বাইরের বলে হেলিকপ্টার শট চালালেন।  মিড উইকেটে উড়ন্ত বার্ল যে ক্যাচ নিয়েছিলেন তা মুগ্ধতা ছড়ায় পুরো গ্যালারিতে।  পরের গল্পটা পুরোটাই আফিফের।  সঙ্গী হয়ে থাকলেন মোসাদ্দেক। দুজনের ব্যাটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ছয় ম্যাচ পর জিতল বাংলাদেশ।  

বৃষ্টিতে ১৮ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে টস জিতে জিম্বাবুয়েকে ব্যাটিংয়ে পাঠান সাকিব।  তাইজুলের রাজকীয় অভিষেক।  প্রথম বলেই উইকেট ব্রেন্ডন টেলরের।  এরপর মুস্তাফিজ, মোসাদ্দেক, সাইফউদ্দিন চেপে ধরেন সফরকারীদের।  তাতে ৫১ থেকে ৬৩ পর্যন্ত যেতে জিম্বাবুয়ে হারায় চার উইকেট।  বিস্ফোরক মাসাকাদজা ২৬ বলে ৩৪ রানে ফেরেন সাইফউদ্দিনের বলে।  আরভিন ১১ রানে আউট হন মুস্তাফিজের বলে।  উইলিয়ামস ফিরতি ক্যাচ দেন মোসাদ্দেককে এবং রান আউট হয়ে মারুমা দলকে বিপদে ফেলেন এক রানে।  ৬৩ রান তুলতে পাঁচ উইকেট নেই সফরকারীদের।

সেখানে দেয়াল হয়ে দাঁড়ান বার্ল।  বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের ঝড়ে রীতিমত তোলপাড় স্কোরবোর্ড।  মাত্র ৩২ বলে পাঁচ বাউন্ডারি ও তিন ছক্কায় তোলেন ৫৭ রান।  সাকিবের এক ওভারেই বার্ল তিন ছক্কা-চারে পান ৩০ রান।  ওই এক ওভারে সাকিবের বোলিং স্পেল ছিল এরকম ৪-০-৪৯-০।  বার্লের সাথে থাকা মুতোমবোদজি ২৬ বলে করেন ২৭ রান।  দুজনের ৮১ রানের জুটিতে বাংলাদেশকে চ্যালেঞ্জিং স্কোর ছুঁড়ে দেয় জিম্বাবুয়ে। কিন্তু আফিফের রাজসিক প্রত্যাবর্তনে শেষ হাসিটা হাসা হয়নি জিম্বাবুয়ের।  হারের দুঃখ ভুলে আজই তাদের মাঠে নামতে হবে আফগানিস্তানের বিপক্ষে।  

 

রাইজিংবিডি/ঢাকা/১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯/ইয়াসিন/নাসিম 

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়