ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শীতকালে ত্বকের সুস্থতায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

এস এম গল্প ইকবাল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শীতকালে ত্বকের সুস্থতায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ

শীতকালের হিমশীতল তাপমাত্রা অথবা কনকনে ঠান্ডা বাতাস ত্বকের জন্য ভালো নয়। বিশেষ করে শুষ্কতার প্রবণতা রয়েছে এমন ত্বকের লোকদের কাছে এ মৌসুম যেন দুর্দশার অপর নাম। এসময় ত্বকের বাড়তি যত্নআত্তি না নিলে অতিরিক্ত শুষ্কতায় ত্বক ফেটে পর্যন্ত যেতে পারে।

যাদের একজিমা বা সোরিয়াসিসের মতো চর্মরোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে শীতকালীন ত্বকের যত্ন আরো বেশি গুরুত্ব বহন করে। এ প্রতিবেদনে শীতের দিনগুলোতে ত্বকের সুরক্ষায় বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ তুলে ধরা হলো।

ক্লিনজার পরিবর্তন: শীতকাল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল অথবা ডিওডোরেন্ট সোপ ব্যবহারের সময় নয়- এসব প্রোডাক্ট ত্বককে খুব শুষ্ক করতে পারে, বলেন ক্যালিফোর্নিয়ার অন্তর্গত সান্টা মনিকার ডার্মাটোলজিস্ট ক্রিস্টিন চয় কিম। আপনার ত্বকে আর্দ্রতা ফিরিয়ে আনতে ক্রিমি, হাইড্রেটিং ক্লিনজার ব্যবহার করাই তুলনামূলক ভালো।

অল্প সময় গোসল: বাইরে বেশ ঠান্ডা পড়লে লোকজন দীর্ঘসময় ধরে গরম পানিতে গোসলে ঝুঁকে পড়েন, কিন্তু এ অভ্যাস ত্বকের জন্য ভালো নয়, বলেন ফিলাডেলফিয়ার ডার্মাটোলজিস্ট নাজানিন সায়েদি। গরম পানি ত্বকের প্রাকৃতিক তেল দূর করে, একারণে ত্বক সহজেই শুষ্ক হয়ে পড়ে। এর পরিবর্তে ডা. সায়েদি কুসুম গরম পানি দিয়ে পাঁচ থেকে ১০ মিনিটের মধ্যে গোসল সেরে নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

আল্ট্রা হাইড্রেটর ব্যবহার: আপনি নিয়মিত যে তরল ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন তা শীতে ত্বকের সুরক্ষায় যথেষ্ট ভূমিকা নিতে পারে না। নিশ্চিত হোন যে আপনি ক্রিম ব্যবহার করছেন, লোশন নয়, অ্যালিউর ডটকমকে বলেন এনওয়াইসি'র ডার্মাটোলজিস্ট ডোরিস ডে। ডা. কিম বলেন,হায়ালুরোনিক অ্যাসিড ও গ্লিসারিন রয়েছে এমন ক্রিম বেছে নিন, যা ময়েশ্চারাইজারকে আরো কার্যকর করবে।

নিয়মিত ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধের জন্য ভালোমানের ময়েশ্চারাইজার কিনে মাঝেমাঝে ব্যবহার করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না, ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে তা নিয়মিত ব্যবহার করতে হয়। ত্বক বিশেষজ্ঞরা সকাল ও রাতে প্রতিদিন দু'বার ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করেন। একজিমার ক্ষেত্রে ময়েশ্চারাইজারের ব্যবহার বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

সঠিক সময়ে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার: গবেষণায় দেখা গেছে, গোসলের পরপরই ময়েশ্চারাইজিং করলে তা গোসলের পর দেরিতে ময়েশ্চারাইজার ব্যবহারের তুলনায় অনেক ভালো ফল দেয়, বলেন এনওয়াইসি’র ডার্মাটোলজিস্ট জশুশা জেকনার। আপনি ময়েশ্চারাইজার নিয়ে বাথরুমে প্রবেশ করুন এবং গোসলের পর শরীর তোয়ালে দিয়ে হালকা মোছামাত্রই এ প্রোডাক্ট প্রয়োগ করতে ভুলবেন না। আপনি নিভিয়া ইন-শাওয়ার বডি লোশন বা জেরজেনস ওয়েট স্কিন ময়েশ্চারাইজারের মতো ইন-শাওয়ার বডি লোশনও ব্যবহার করতে পারেন।

এক্সফোলিয়েট: শুষ্ক ত্বকে এক্সফোলিয়েট করলে বা ত্বকের মৃত কোষ দূর করলে আপনাকে আর সাপের মতো দেখাবে না ও ত্বকের মসৃণতা ফিরে আসবে। কিন্তু প্রতিদিন স্ক্রাবিং বা এক্সফোলিয়েটিং করলে প্রদাহ সৃষ্টি হতে পারে, যা সময় পরিক্রমায় শুষ্ক ত্বককে আরো শুষ্ক করতে পারে। একারণে সপ্তাহে একবারের বেশি এক্সফোলিয়েট করবেন না এবং স্ক্রাবের পূর্বে  ক্রিমি, হাইড্রেটিং ক্লিনজার দিয়ে ওয়াশ করলে অস্বস্তি এড়াতে পারবেন। এভাবে আপনার ত্বকের মসৃণতা পুনরুদ্ধার ও টেকসই করতে পারবেন, বলেন ডা. জেকনার।

প্রতিদিন সানস্ক্রিন: শীতকালে অবশ্যই সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে হবে, বলেন ডা. কিম। ত্বক ধ্বংসাত্মক সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি সারা বছর ধরেই বিকিরিত হয়, এমনকি মেঘাচ্ছন্ন দিনেও। একারণে ত্বক বিশেষজ্ঞরা ত্বকের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে শীতের দিনগুলোতেও সানস্ক্রিন ব্যবহার করতে ভুলেন না। ডা. কিম শীতকালীন খেলাধুলার সময় ত্বকের বাড়তি যত্ন নিতে পরামর্শ দিচ্ছেন, যেমন- ত্বককে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন প্রয়োগ করা।

ঠোঁটের যত্নে পেট্রোলিয়াম জেলি: প্রিভেনশন ডটকমের ত্বক বিশেষজ্ঞরা শীতকালে নিজের বিবেচনাতে লিপ বাম ব্যবহার না করতে পরামর্শ দিচ্ছেন। ঠান্ডা বাতাস ও ঘরের ভেতরের শুষ্ক তাপমাত্রা ঠোঁটের প্রাকৃতিক প্রতিরক্ষা বেষ্টনিকে ধ্বংস করে, এর ফলে ঠোঁট ফেটে যায়। একারণে ঠোঁটের সুরক্ষায় পেট্রোলিয়াম জেলির মতো সিম্পল সল্যুশন ব্যবহার করতে পারেন। পেট্রোলিয়াম জেলি একটি প্রতিরক্ষা আবরণ তৈরি করে, যার ফলে ঠোঁট ফেটে যায় না। এছাড়া ঠোঁট লেহন থেকেও বিরত থাকতে হবে- কারণ লালার এনজাইম ইরিটেশন বাড়িয়ে ঠোঁটে ফোলা সৃষ্টি করতে পারে, এমনকি ঠোঁট ফেটেও যেতে পারে, বলেন এনওয়াইসি’র ডার্মাটোলজিস্ট জেসিকা ওয়েজার।

ফেসিয়াল মাস্ক ব্যবহার: ওভারনাইট ফেসিয়াল মাস্ক ত্বকের উপরিভাগে একটি পারমিয়েবল সিল তৈরি করে, যার ফলে এটির নিচে থাকা যেকোনো যত্ন সামগ্রী ত্বকের সুরক্ষায় আরো বেশি কার্যকর হতে পারে, বলেন ডা. ডে। আপনি প্রথমে ত্বকে অন্যান্য হাইড্রেটর (সিরাম, অয়েল) প্রয়োগ করে এসবকিছুকে ফেসিয়াল মাস্কের ঘন আবরণে ঢেকে দিন- এতে ফেসিয়াল মাস্কের নিচে ব্যবহৃত যত্ন সামগ্রী আরো ভালোভাবে শোষিত হবে।

পোশাক সচেতনতা: পশমের সোয়েটার আপনাকে উষ্ণ রাখতে পারে, কিন্তু এ পোশাক সরাসরি ত্বকের সংস্পর্শে আসলে আপনার সংবেদনশীল ত্বক উক্ত্যক্ত হতে পারে, যার ফলে চুলকানি অনুভব করতে পারেন, বলেন নিউ ইয়র্কের অন্তর্গত মাউন্ট কিসকোর ডার্মাটোলজিস্ট ডেভিড ব্যাংক। ফেব্রিক ফ্রিকশন বা ত্বকের সঙ্গে কাপড়ের ঘর্ষণ এড়াতে পশমের পোশাক পরার আগে প্রতিরক্ষা বেষ্টনি হিসেবে সফট কটন টি শার্ট পরতে পারেন।

ত্বকের শুষ্কতা প্রতিরোধী খাবার: ত্বককে আর্দ্র ও কোমল রাখতে কেবলমাত্র ত্বকের ওপর যত্ন সামগ্রী ব্যবহার করলেই হয় না, শরীরের ভেতর থেকেও কিছু কাজ চলতে হয়। কিন্তু প্রয়োজনীয় ভিটামিন বা পুষ্টির অভাবে এ অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম ব্যাহত হতে পারে। ত্বককে কোমল ও কমনীয় রাখতে ওমেগা-৩ এর মতো ফ্যাটি অ্যাসিডের প্রয়োজন রয়েছে, বলেন ডা. ব্যাংক। আপনার ডায়েটে এসবের ঘাটতি থাকলে সপ্তাহে অন্তত দু’বার সালমনের মতো তৈলাক্ত মাছ খান অথবা প্রয়োজনে ওমেগা-৩ ক্যাপসুল সেবন করুন।

হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহার: হিউমিডিফাইয়ারের কিছু সৌন্দর্য উপকারিতা রয়েছে। ডা. ব্যাংক বলেন, রুমের বায়ুকে আর্দ্রতায় পূর্ণ করলে ত্বকের শুষ্কতা এড়ানো যায়, যার ফলে ত্বকে চুলকানি হবে না অথবা ফাটবে না। তাই আপনার ত্বককে শীতকালে মসৃণ, কোমল ও কমনীয় রাখতে ঘরের ভেতর হিউমিডিফাইয়ার ব্যবহারের কথা বিবেচনা করতে পারেন।



ঢাকা/ফিরোজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়