ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

শূন‌্য থেকে ‘জারদৌসি’র রাণী জেসমিন

রেজাউল করিম || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:২৭, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
শূন‌্য থেকে ‘জারদৌসি’র রাণী জেসমিন

শুরুটা তার একেবারেই শূন‌্য থেকে। এক সময় মাত্র তিন হাজার টাকা বেতনের চাকরিও করতে হয়েছে। ফ্যাশন হাউস, বুটিক হাউজসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন।

এর মধ্যে ঘরে বসেই নারীদের বিভিন্ন পোষাকের ডিজাইন এবং সেলাইয়ের কাজ করতেন। কিন্তু দীর্ঘ পরিশ্রম, কাজের প্রতি একনিষ্ঠতা, মেধা আর দক্ষতার গুণে তিনি এখন একজন উদ্যোক্তা।

তার পুরোনাম জেসমিন সুলতানা (রাণী)। ফ্যাশন ডিজাইনার রাণী। চট্টগ্রাম শহরে তিনি জারদৌসি কাজের রাণী হিসেবেই অধিক পরিচিত। চট্টগ্রামের অভিজাত শপিংমল কনকর্ড খুলশী টাউন সেন্টারে রয়েছে রাণীর নিজস্ব ডিজাইনের পোশাকের শো-রুম ‘জাজতানা ফ্যাশন’। রয়েছে কারখানাও।

শূন‌্য থেকে শুরু করে চট্টগ্রাম মহানগরীতে এক তরুণ উদ্যোক্তা ও ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। তার পোষাকে নগরীর বড় বড় ফ্যাশন শোতে অংশ নেন নামি তারকা মডেলরা।

জেসমিন সুলতানা রাণী রাইজিংবিডিকে জানান, জন্মসূত্রে তিনি বাংলাদেশি হলেও পৈত্রিকসূত্রে তিনি পাকিস্তানি। জন্ম থেকে শৈশব কৈশোরে নানা প্রতিকূল পরিবেশের মধ্যেই তাকে বড় হতে হয়েছে। দারিদ্র যেমন নিত্যসঙ্গী ছিল, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ পরিস্থিতিও ছিলো প্রতিকূল।

এর মধ্যেও পড়ালেখার ফাঁকে ফাঁকে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্ঠায় ছিলেন অবিরত। বাসায় বসে বসে সেলাইয়ে কাজ করেছেন। ডিজাইন আর সৃষ্টিশীলতা যেনো জন্ম থেকেই নিয়ে এসেছিলেন। ঘরে বসেই ক্রমে শিখেছেন নানা ধরনের ডিজাইনের কাজ, পাকিস্তানি ডিজাইন, জারদৌসির কাজ। বিভিন্ন সময় কাজ করেছেন চট্টগ্রামের কয়েকটি ফ্যাশন হাউজ এবং বুটিক হাউজেও।

জেসমিন সুলতানা জানান, পারিবারিক প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে তাকে মাত্র তিন হাজার টাকা মাসিক বেতনেও চাকুরি করতে হয়েছিল। এরই মধ্যে জীবনের সঙ্গে যুদ্ধ করতে করতেই তিনি নিজেকে তৈরি করেছেন। দীর্ঘদিন তিনি নিজ বাসা থেকে জারদৌসি কাজ এবং সেলাইয়ের কাজের অর্ডার নিতেন এবং সময়মতো ডেলিভারি দিতেন।

২০১৭ সালের শেষের দিকে রাণী চট্টগ্রামের অভিজাত শপিং মল কনকর্ড খুলশী টাউন সেন্টারে নিজের ফ্যাশন হাউস ‘জাজতানা ফ্যাশন’ চালু করতে সক্ষম হন। প্রথমে এক শোরুমে তার নিজের তৈরি পোশাকের প্রদর্শনী থাকলেও অল্প কিছুদিনের মধ্যেই একই ফ্লোরে তার নিজস্ব কারখানাও চালু করেন। রাণী এখন নিজের কারখানায় নিজের ডিজাইন করা পোশাক নিজেই তৈরি করেন। তার সহযোগী হিসেবে রয়েছে একাধিক কর্মী এবং টেইলারিং মাস্টার। তবে রাণী নিজেও ডিজাইনের পাশাপাশি যাবতীয় টেইলারিং-এর কাজও করেন স্বাচ্ছন্দে।

রাইজিংবিডিকে রাণী জানান, তিনি সববয়সী নারীদের যে কোন ধরনের মননশীল, আধুনিক ডিজাইনের পোশাক তৈরির কাজ করে থাকেন। করেন শাড়ির কাজও। তার নিজের প্রতিষ্ঠান জাজতানা ফ্যাশন হাউজের প্রধান লক্ষ্য হলো সবাইকে আধুনিক মানসম্পন্ন নতুন নতুন ডিজাইন উপহার দেয়া। এছাড়া নারীরা টেইলারিং-এর কাজ নিয়ে সবসময় নানা ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হন। কোথাও মনের মতো সেলাইয়ের কাজ করাতে পারেন না। এই সমস্যার ওয়ানস্টপ সল্যুশন দিচ্ছেন জাজতানা ফ্যাশন হাউজ।

এখানে আসলেই নারীরা তাদের পছন্দের পোশাকের ডিজাইনের পাশাপাশি টেইলারিং বা সেলাইয়ের যাবতীয় কাজ করাতে পারেন মনের মতো করে। তারা পোশাকের ডিজাইনের জারদৌসি কাজ নিয়ে যাদের আতঙ্ক তারা জাজতানা ফ্যাশন হাউজের সেবা নিতে পারেন সব সময়।

নিজের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে জেসমিন সুলতানা রাণী রাইজিংবিডিকে জানান, ‘আমি একেবারেই শূন‌্য থেকে শুরু করেছি, দীর্ঘ শ্রম আর সামাজিক যুদ্ধ মোকাবেলা করে আমি নিজেকে একজন ফ্যাশন ডিজাইন হিসেবে নিজেকে তৈরি করেছি। এখন আমার তৈরি পোশাক নিয়ে প্রদর্শনী হয়। মডেলরা ক্যাটওয়াকে অংশ নেন, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া’।

নিজেকে আরো বড় ফ্যাশন ডিজাইনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে কাজ করে যাওয়ার অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন রাণী।

 

চট্টগ্রাম/রেজাউল/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়