ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সরকারি কোষাগারে উদ্বৃত্ত ৮ হাজার কোটি টাকা

কেএমএ হাসনাত || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৩ মার্চ ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি কোষাগারে উদ্বৃত্ত ৮ হাজার কোটি টাকা

অর্থবছর শেষ হওয়ার তিনমাসের মধ্যে স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি তহবিলে জমা হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি তহবিলে জমা পড়েছে। এর পরিমাণ প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। চলতি সপ্তাহে আরও কয়েকটি সংস্থার অর্থ সরকারি তহবিলে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

আগামী ২৪ মার্চ (মঙ্গলবার) এ সংক্রান্ত একটি বৈঠক হবে বলে অর্থমন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে প্রতি অর্থবছর শেষ হওয়ার তিন মাসের মধ্যে স্ব-শাসিত সংস্থাগুলোর উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি তহবিলে ফেরত দিতে সরকারের বিভিন্ন সংস্থাগুলোকে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এ অর্থ বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় করা হবে। এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রণালয় থেকে ৬১টি সংস্থা চিহ্নিত করা হয়েছে।

ইতোমধ্যে ‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিশিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা আইন, ২০২০’ জাতীয় সংসদে অনুমোদন দেওয়ার পর গেজেট আকারেও ইতোমধ্যে প্রকাশ হয়েছে।

জানা গেছে, পেট্রো বাংলার তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে চার হাজার কোটি টাকা ও তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের শেয়ার বিক্রি বাবদ এক হাজার ৮৭০ কোটি ৮৮ লাখ টাকাসহ মোট ৫ হাজার ৮৭০ কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়। এরমধ্যে পেট্রোবাংলার শেয়ার বিক্রির অর্থ অনতিবিলম্বে জমা দিতে বলা হয়েছে।  এছাড়া পেট্রোবাংলার তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থের প্রথম কিস্তি হিসেবে এক হাজার কোটি টাকা গত ১০ মার্চ জমা দেওয়া হয়। বাকি তিন হাজার কোটি টাকা এপ্রিল-জুন সময়ে প্রতি মাসে এক হাজার কোটি টাকা করে সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিপিডিবি) তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ হিসেবে চলতি ২০১৯-২০ অর্থ বছরে দুই হাজার কোটি টাকা সরকারি কোষাগারে জমা দিতে হবে। এর অংশ হিসেবে ১৫ মার্চের মধ্যে ৫০০ কোটি টাকা  জমা দিতে বলা হয়। বাকি একহাজার ৫০০ কোটি টাকা এপ্রিল-জুন সময়ে সমান চার কিস্তিতে জমা দিতে বলা হয়।

আগামী ২৪ মার্চ অর্থমন্ত্রণালয়ের একজন অতিরিক্ত সচিবের সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। সে বৈঠকের আগে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের উদ্বৃত্ত তহবিলের হিসাব দাখিলের কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে কমিশনের উদ্বৃত্ত তহবিলের ৫০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের উদ্বৃত্ত তহবিলের ৬০০ কোটি টাকা জমা দিতে হবে। তবে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ৬০০ কোটি টাকার মধ্যে ১৫০ কোটি টাকা ২৫ মার্চের আগে জমা দিতে হবে। বাকি ৪৫০ কোটি টাকা এপ্রিল-জুন সময়ে প্রতিমাসে ১৫০ কোটি টাকা করে জমা দিতে পারবে।

বৈঠকে যোগ দিতে যে সব সংস্থাকে চিঠি দেওয়া হয়েছে তাদের নিজ নিজ সংস্থার বিগত ৫ বছরের হিসাব বিবরণী, চলমান  ও পরবর্তী ৩ বছরের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য অনুমোদিত উন্নয়ন প্রকল্পের তালিকা (প্রকল্পসহ বছর  ভিত্তিক আয়-ব্যয়ের হিসাব), বিগত ৩ বছরের বাস্তবায়িত আশ্রয়ন প্রকল্পের হিসাবসহ তালিকা ও প্রতিষ্ঠানের আয়-ব্যয় সংক্রান্ত অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য উপস্থাপন করতে হবে।

‘স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিশিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলের উদ্বৃত্ত অর্থ সরকারি কোষাগারে জমা আইন, ২০২০’ এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘সময়াবদ্ধ উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ এবং তাহাদের আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের মাধ্যমে একটি উন্নত দেশ গড়ার পরিকল্পনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত, সংবিধিবদ্ধ সরকারি কর্তৃপক্ষ, পাবলিক নন-ফাইন্যান্সিশিয়াল করপোরেশনসহ স্ব-শাসিত সংস্থাসমূহের তহবিলে জমাকরা উদ্বৃত্ত অর্থের সুষ্ঠু ব্যবহারের নিমিত্ত বিধান প্রণয়নকল্পে আইনটি করা হয়েছে।’

আইনে বলা হয়েছে, ‘উদ্বৃত্ত অর্থ’-এর অর্থ তফসিলভুক্ত কোনো সংস্থার বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়, নিজস্ব অর্থায়নে সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে গৃহীত উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য বাৎসরিক ব্যয় এবং বাৎসরিক পরিচালনা ব্যয়ের ২৫ শতাংশের অতিরিক্ত অর্থ।

আইন অনুযায়ী, তফসিলভুক্ত প্রতিষ্ঠান আপদকালীন ব্যয় নির্বাহের জন্য যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ অর্থ যা তাদের বাৎসরিক পরিচালন ব্যয়ের সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশের সম-পরিমাণ অর্থ অতিরিক্ত হিসেবে পৃথকভাবে সংরক্ষণ করতে পারবে।

আইনে বলা হয়েছে, যেহেতু সরকারের উন্নয়ন প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থের সংস্থান প্রয়োজন এবং যেহেতু উক্তরূপ সংস্থাসমূহ নিজস্ব তহবিল হইতে প্রয়োজনীয় ব্যয় নির্বাহের পরও উহাদের তহবিলে বিপুল পরিমাণ অর্থ উদ্বৃত্ত থাকে এবং সংস্থাসমূহের উদ্বৃত্ত অর্থের মালিকানা প্রকৃতপক্ষে জনগণের; সেই কারণে ওই অর্থ জনগণের কল্যাণ সাধনে ব্যবহার করা সমীচীন।

প্রণীত আইনে ৬১টি সংস্থাকে চিহ্নিত বা তফসিলভুক্ত করা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে- জাতীয় কারিকুলাম এবং টেক্সটবুক বোর্ড; বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড; বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ড; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, যশোর; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, রাজশাহী; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, সিলেট; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, চট্টগ্রাম; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, বরিশাল; উচ্চ মাধ্যমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, দিনাজপুর; জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়, গাজীপুর; বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়; বাংলাদেশ পল্লী উন্নয়ন একাডেমি; পল্লী উন্নয়ন একাডেমি, বগুড়া; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ; বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ মান নিয়ন্ত্রণ ও পরীক্ষা ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল; জাতীয় স্থানীয় সরকার ইনস্টিটিউট; বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন; বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন; পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ড; রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ; বাংলাশে সেরিকালচার বোর্ড; রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো; বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ; বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, রাজশাহী; বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস করপোরেশন; বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল করপোরেশন এবং সহযোগী প্রতিষ্ঠান; বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন; পেট্রোবাংলা; বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন; ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ; বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশন; বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন; বাংলাদেশ বনশিল্প উন্নয়ন করপোরেশন; বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন; বাংলাদেশ চা বোর্ড; বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন করপোরেশন; বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ; চট্টগ্রাম ওয়াসা; ঢাকা ওয়াসা; বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড; পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড; চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ; মোংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান পরিবহন কর্তৃপক্ষ; বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশন; বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড; বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ও বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ রেগুলেটরি কমিশন।

সূত্র জানায়, এতদিন এসব প্রতিষ্ঠানে বিপুল অংকের উদ্বৃত্ত তহবিল রাখা হতো। সেসব তহবিল অনেক ক্ষেত্রে সংস্থাগুলো নিজেদের মত খরচ করেছে। নতুন এ আইন অনুযায়ী উদ্বৃত্ত ওই তহবিল থেকে ২৫ শতাংশ অর্থ সরকারি তহবিলে ফেরত দিতে হবে।

 

ঢাকা/হাসনাত/এসএম

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়