ঢাকা     বুধবার   ০৮ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ২৫ ১৪৩১

সরকারি সুবিধা পায় না ঈশ্বরদীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

শাহীন রহমান || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০২:০৪, ১০ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সরকারি সুবিধা পায় না ঈশ্বরদীর ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী

সরকারি বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত পাবনার ঈশ্বরদী উপজেলার ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর পাঁচ শতাধিক মানুষ। গ্রামে স্কুল নেই। নেই চিকিৎসার ব‌্যবস্থা। বছরের বেশিরভাগ সময় কাজ পান না তারা। ফলে দারিদ্র‌্য পিছু ছাড়ছে না তাদের। 

ঈশ্বরদী উপজেলা সদর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে মাড়মি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লিতে শতাধিক মানুষের বাস। ওই গ্রামে গিয়ে জানা যায়, সেখানে ১৯৩২ সালে প্রতিষ্ঠিত সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি অর্থাভাবে এক বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। বিদ‌্যালয় বন্ধ থাকায় মাড়মি পল্লির অধিকাংশ শিশুর পড়ালেখাও বন্ধ। এখন তারা পরিবারের সঙ্গে মাঠে কাজ করে। কিছু শিক্ষার্থী বহুদূরের স্কুল-কলেজে পড়াশোনা করলেও অনুন্নত যোগাযোগ ব‌্যবস্থার কারণে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়।

মাড়মি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লির বাসিন্দা পৌল বিশ্বাস জানান, এই গ্রামে চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। যেকোনো ধরনের চিকিৎসাসেবা পেতে হলে কয়েক কিলোমিটার দূরে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র অথবা ঈশ্বরদী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যেতে হয়।

তিনি বলেন, প্রায় ২০০ বছর আগে নীল চাষ করতে ও এই এলাকার মানুষদের বন্য হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ থেকে বাঁচাতে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ থেকে আমাদের পূর্বপুরুষদের এনে এখানে বাস করতে বলা হয়। সে সময় এখানে ঘন বন-জঙ্গল ও বড় বড় গাছ কেটে একটি বিশাল দীঘি আবিষ্কার করেন ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর লোকরা। কিন্তু গত ২০ বছর ধরে এই দিঘিতে মাছ চাষ করেন স্থানীয় প্রভাবশালী ব‌্যক্তিরা।

ওই পল্লির ডমিনিক বিশ্বাস মাস্টার জানান, মাড়মি ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লির বাসিন্দারা বেশিরভাগই মাল পাহাড়ি সম্প্রদায়ের। সারা বছর কৃষি শ্রমিক হিসেবে কাজ করার পাশাপাশি দিঘি ও জঙ্গলে শিকার করেই তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। কিন্তু বছরের অধিকাংশ সময় বেকার থাকতে হয় তাদের। মাছ বা পশু শিকারের জায়গা নেই।

৮২ বছর বয়সী ক্লেমেন্ট বিশ্বাস বলেন, চেয়ারম্যান-মেম্বারদের কাছে এ পর্যন্ত পাঁচবার কাগজ জমা দিয়েছি। এখন পর্যন্ত বয়স্ক ভাতার কার্ড পাইনি।

গৃহবধূ রিতা বিশ্বাস বলেন, এই পল্লির নারীরা বিধবা ভাতার আবেদন করেও পায় না।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী লিজা বিশ্বাস বলে, আমি অষ্টম শ্রেণিতে বৃত্তি পেয়েছি। কিন্তু একাধিকবার আবেদন করেও প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড পাইনি।

মাইকেল বিশ্বাস, জোসেফ বিশ্বাস, মনিকা, সুব্রত বিশ্বাসসহ কয়েকজন শিক্ষার্থী জানান, সেন্ট ফিলিপস শিশু শিক্ষাকেন্দ্রটি বন্ধ হওয়ার পর থেকে তাদের লেখাপড়া এখন বন্ধ হওয়ার উপক্রম। প্রায় দুই কিলোমিটার দূরে একটি স্কুল আছে। বছরের বেশিরভাগ সময়েই তারা স্কুলে যাতায়াত করতে পারে না।

অন‌্যদিকে, ঈশ্বরদীর মুলাডুলি ইউনিয়নের বেতবাড়িয়া, পতিরাজপুর গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লিতে ৭০টি পরিবারের চার শতাধিক মানুষ বাস করেন। এই পল্লিতেও কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এই পল্লির শতাধিক শিক্ষার্থী অনেক কষ্ট করে দূরের স্কুল-কলেজে পড়ালেখা করছে। এই পল্লির নারী-পুরুষ সবাই কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

সেখানকার কৃষিশ্রমিক শারতি রানী রায় বলেন, বছরের অর্ধেক সময় কাজ থাকে, বাকি সময় বেকার থাকতে হয়। মজুরির ক্ষেত্রেও আমাদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়। এখনো ৩০০ টাকা মজুরিতে কাজ করতে হয় আমাদের।

প্রবীণ সাধন রায় বলেন, এই পল্লির সবাই বয়স্ক ভাতা, প্রতিবন্ধী ভাতা, মাতৃত্বকালীন ভাতাসহ সরকারি সব ধরনের ভাতা থেকে বঞ্চিত।

দাশুড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বকুল সরদার বলেন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লির দুই কিলোমিটার রাস্তা পাকা করার প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অন্যান্য সুবিধা সরকার দিলেও আইনি জটিলতায় ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর মানুষদের বয়স্ক ভাতার কার্ড দেয়া সম্ভব হয়নি। শিগগির সে ব্যবস্থা করা হবে।

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিহাব রায়হান বলেন, ঈশ্বরদীর দুই ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী পল্লিতে খোঁজ নিয়ে দেখব। তাদের সরকারি সুযোগ-সুবিধা দেয়ার ব্যবস্থা করা হবে।



পাবনা/শাহীন রহমান/রফিক

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ