ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সহসাই সঙ্কট কাটছে না রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর!

নিজস্ব প্রতিবেদক || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:০৫, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সহসাই সঙ্কট কাটছে না রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলগুলোর!

খুলনাসহ দেশের রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকলগুলোতে দিন দিন সংকট আরো ঘণীভূত হচ্ছে। এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্কট সহসাই কাটছে না।

ফলে একদিকে শ্রমিক আন্দোলন দানা বেঁধে উঠছে, অন্যদিকে রাষ্ট্রায়ত্ব প্রতিষ্ঠানগুলো দেনার দায়ে নাজুক অবস্থার মুখে এসে দাঁড়িয়েছে।

সূত্র মতে, খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে মোট দায়-দেনার পরিমাণ এক হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি, বেতন, পিএফ, গ্রাচ্যুইটি, পাটের দেনা, ব্যাংকসহ অন্যান্য খাতে এসব দেনা বহন করছে পাটকলগুলো। দেনার কারণে শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন পরিশোধ করতে হিমশিম খাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অন্যদিকে, উল্লিখিত পাটকলগুলোতে প্রায় ২৭০ কোটি টাকার পাটপণ্য মজুদ থাকলেও তা বিক্রি করতে পারছে না তারা।

এদিকে, আর্থিক সংকটে থাকা পাটকলগুলোর শ্রমিক-কর্মচারীরা বকেয়াসহ ১১ দফা দাবি আদায়ে রাজপথে রয়েছে। ১৭ নভেম্বর থেকে কর্মসূচি পালন করছে তারা। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ অনশন কর্মসূচির ঘোষণাও রয়েছে শ্রমিকদের।

অন্যদিকে সারাদেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলের শ্রমিক-কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের মজুরি ও বেতন বাবদ ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে সরকার। ১৪ নভেম্বর পর্যন্ত খুলনা অঞ্চলের নয় পাটকলের শ্রমিক ও কর্মচারীদের ৪৪ কোটি ৬৭ লাখ ৭৯ হাজার টাকা বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে। যা বুধবার থেকে শ্রমিকরা পেতে শুরু করেছেন।

এর মধ্যে খুলনার ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক-কর্মচারীরা পাচ্ছেন ১০ কোটি ৮৭ হাজার টাকা, প্লাটিনাম জুট মিলের ১০ কোটি ৩৯ লাখ ৬৩ হাজার টাকা, খালিশপুর জুট মিল ৪ কোটি ৩৮ লাখ ৪৭ হাজার টাকা, স্টার জুট মিল ৭ কোটি ৭ লাখ ৩৭ হাজার টাকা, দৌলতপুর জুট মিল ৭৮ লাখ ৬৯ হাজার টাকা, আলীম জুট মিল ২ কোটি ১৯ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, কার্পেটিং জুট মিল ১ কোটি ২৭ লাখ ৯৯ হাজার টাকা, জেজেআই জুট মিল ৪ কোটি ৩৫ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, ইস্টার্ণ জুট মিল ৩ কোটি ৩১ লাখ ২৫ হাজার টাকা।

পাটকলগুলোর সূত্রে জানা যায়, খুলনার রাষ্ট্রায়ত্ত ক্রিসেন্ট, প্লাটিনাম, খালিশপুর, দৌলতপুর, স্টার, আলীম, ইস্টার্ণ ও যশোরের জেজে আই ও কার্পেটিং জুট মিলের বেতন বাবদ ১৪ কোটি ২৫ লাখ ৭১ হাজার টাকা, মজুরি বাবদ ৪৮ কোটি ১৪ লাখ ৩৬ হাজার টাকা, পিএফ বাবদ ৯২ কোটি ৬৮ লাখ ৪৬ হাজার টাকা, ২৩৫ কোটি ৪৯ লাখ ৬৪ হাজার টাকা, পাটের দেনা বাবদ ১৭৩ কোটি ৭০ লাখ ৫ হাজার টাকা, ব্যাংকের কাছে ৫৬২ কোটি ১৯ লাখ ৮৬ হাজার টাকা এবং অন্যান্য খাতে ৬৯ কোটি ৮৪ লাখ ৮৭ হাজার টাকা দেনা রয়েছে। সব মিলিয়ে মিলগুলোর দায়-দেনার পরিমাণ ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা। এর বিপরীতে পাটকলগুলোতে ২৭০ কোটি ৯৬ লাখ টাকা মূল্যের ৩০ হাজার ২০৭ মেট্রিক টন পণ্য মজুদ থাকলেও তা বিক্রি না হওয়ায় শ্রমিক ও কর্মচারীদের মজুরি ও বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না।

প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, আমাদের ১০ সপ্তাহের মজুরি পরিশোধ করা হবে। যার মধ্যে ব্যাংকে ৫ সপ্তাহের মজুরি এসেছে। ২/১ দিনের মধ্যে আরও ৫ সপ্তাহের মজুরিও পরিশোধ করা হবে।

প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, পাটকলগুলো আর্থিক সংকটে থাকায় শ্রমিকরা কাজ করেও নিয়মিত মজুরি পাচ্ছে না। তবে বুধবার থেকে সরকারি বরাদ্দকৃত টাকা থেকে প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহের মজুরি প্রদান করা হচ্ছে। যা শ্রমিকরা পেতে শুরু করেছে। ১১ দফা দাবি আদায়ে কর্মসূচি অব্যাহত রয়েছে। আগামী ১০ ডিসেম্বর থেকে আমরণ গণঅনশন চলবে।

ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ সাবেক সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন বলেন, শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি ও বেতনের টাকা পরিশোধ করা হচ্ছে। তবে আন্দোলন কর্মসূচি অব্যাহত থাকছে। মূলতঃ পিপিপি এবং মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের জন্য কমর্সূচি দিয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটি।

স্টার জুট মিলের প্রকল্প প্রধান রইজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, মিলের শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহ আর কর্মচারীদের দুই মাসের বকেয়া মজুরি ও বেতন পরিশোধ করা হচ্ছে। যা বুধবারেই ব্যাংক একাউন্টে চলে গেছে। তবে কর্মকর্তাদের পাওনা টাকা এখান থেকে দেয়া হচ্ছে না। মজুদকৃত পণ্য বিক্রয়ের টাকা থেকে কর্মকর্তাদের বেতন পরিশোধ ও পাট ক্রয় করার নির্দেশনা রয়েছে।

বিজেএমসির খুলনা জোনের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা বনিজ উদ্দিন মিয়া জানান, খুলনা অঞ্চলের পাটকলগুলোর সার্বিক তথ্য বিজেএসসিতে প্রেরণ করা হয়েছে। পাওনা সাপেক্ষে পর্যায়ক্রমে দেনা পরিশোধ করা হবে।

 

খুলনা/নূরুজ্জামান/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ