ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সাক্ষরতার সুবর্ণ জয়ন্তী

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৩:৪৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সাক্ষরতার সুবর্ণ জয়ন্তী

শাহ মতিন টিপু : ‘অতীতকে জানব, আগামীকে গড়ব’ এই প্রতিপাদ্যে আজ বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস উদযাপিত হচ্ছে। অবশ্য দিবসটির আন্তর্জাতিক প্রতিপাদ্য হচ্ছে ‘একুশ শতাব্দীর জন্য শিক্ষা’।
 
সাক্ষর শব্দের আভিধানিক অর্থ অক্ষরজ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি। এখন সাধারণ অর্থে সাক্ষর বলতে পড়া, লেখা ও হিসাব করায় দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে মনে করা হয়। সাক্ষর ব্যক্তি যেন মাতৃভাষায় সহজে লেখা পড়তে ও বুঝতে পারে, মনের ভাব শুদ্ধ ভাষায় বলতে ও লিখতে পারে। দৈনন্দিন হিসাব-নিকাশ করতে ও লিখে রাখতে পারে। বিগত পঞ্চাশ বছরে বাংলাদেশে সাক্ষর ও সাক্ষরতার সংজ্ঞায় নানা পরিবর্তন ও বিবর্তন হয়েছে।

বাংলাদেশে ‘সাক্ষরতা’ শব্দের প্রথম উল্লেখ দেখা যায় ১৯০১ সালে আদম শুমারির সরকারি প্রতিবেদনে। তবে সাক্ষরতার সংজ্ঞা সময়ের ব্যাপ্ত পরিসরে বিবর্তিত হয়েছে। ১৯০১ সালে তা ছিল মাতৃভাষার নাম স্বাক্ষর করতে পারার ক্ষমতা। ১৯৫১ সালে স্পষ্ট ছাপার অক্ষরে লেখা যে কোনো বাক্য পড়তে পারার ক্ষমতা। ১৯৬১ সালে যে বুঝে কোনো ভাষা পড়তে পারত, সে-ই ছিল সাক্ষর।

১৯৭৪-এ যে কোনো ভাষা পড়তে এবং লিখতে সক্ষম ব্যক্তিকে সাক্ষর হিসেবে গণ্য করা হতো। ১৯৮১ সালে কোনো ভাষায় চিঠি লিখতে পারার ক্ষমতা থাকলে তাকে সাক্ষর বলা হতো। ১৯৮৯ সালে তা হয় মাতৃভাষায় কথা শুনে বুঝতে পারা, মৌখিক ও লিখিতভাবে তা ব্যক্ত করার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন হিসাব করার এবং লিপিবদ্ধ করে রাখার ক্ষমতালাভ।

বর্তমানে সাক্ষরতার পরিধি শুধু মাতৃভাষা চর্চা ও হিসাব-নিকাশ আয়ত্ত করার মধ্যে সীমিত নেই। কম্পিউটার সাক্ষরতা, আর্থিক সাক্ষরতা, সাংস্কৃতিক সাক্ষরতার মতো বিভিন্ন নাগরিক প্রসঙ্গ সর্বোপরি উন্নত জীবনের জন্য অপরিহার্য মানসম্মত দক্ষতা অর্জন, দেশাত্মবোধ, সামাজিক ও নৈতিক মূল্যবোধ তৈরির সোপান হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে। একই সঙ্গে সাধারণভাবে সব দেশে সব সমাজে ক্রমেই এ বোধ বিস্তৃত হয়েছে ও হচ্ছে যে, সাক্ষর মানুষ লক্ষ্যহীন, কর্মহীন, অসামাজিক, অমানবিক হতে পারে না।

জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার ঘোষণায় (১০ ডিসেম্বর ১৯৪৮) ২৬নং ধারায় শিক্ষা বিষয়ে বলা হয়েছে :

ক. প্রত্যেকেরই শিক্ষালাভের অধিকার রয়েছে। অন্ততপক্ষে প্রাথমিক ও মৌলিক পর্যায়ে শিক্ষা অবৈতনিক হবে। প্রাথমিক শিক্ষা হবে বাধ্যতামূলক। কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষা সাধারণভাবে লভ্য থাকবে এবং উচ্চতর শিক্ষা মেধার ভিত্তিতে সবার জন্য সমভাবে উন্মুক্ত থাকবে।

বাংলাদেশের সংবিধানের ১৭ অনুচ্ছেদে বলা আছে : ক. রাষ্ট্র একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সব বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য; খ. সমাজের প্রয়োজনের সঙ্গে শিক্ষাকে সঙ্গতিপূর্ণ করার জন্য এবং সেই প্রয়োজন সিদ্ধ করার উদ্দেশ্যে যথাযথ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও সদিচ্ছা প্রণোদিত নাগরিক সৃষ্টির জন্য ; গ. আইনের দ্বারা নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নিরক্ষরতা দূর করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
 
তেহরানে ১৯৬৫ সালে অনুষ্ঠিত বিশ্ব কংগ্রেসের সুপারিশে ১৯৬৬ সাল থেকে প্রতিবছর ৮ সেপ্টেম্বর দেশে দেশে দিনটি পালিত হয়ে আসছে। এবার দিবসটির সুবর্ণ জয়ন্তী । দিবসটি উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা বের হয়ে ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে গিয়ে শেষ হয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দিবসের কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন। বাংলাদেশ বেতার অনুষ্ঠানটি সরাসরি সম্প্রচার করবে। যথাযথ আনুষ্ঠানিকতায় দিবসটি উদযাপনের জন্য বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও সংগঠন নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে।

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে সভায় ইউনেস্কো মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভার বার্তা পাঠ করা হবে। দিনভর কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে র‌্যালি, আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, প্রদর্শনী।

দিবসটি উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ‘সাক্ষরতা অর্জনের মাধ্যমে শুধু লেখাপড়া নয়, মানুষের জ্ঞান সচেতনতা ও দক্ষতা বৃদ্ধি পায়, যা সুস্থ সমাজ ও উন্নত দেশ গঠনে কার্যকর ভূমিকা রাখে।’ তিনি বলেন, ‘সরকার দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে সকলের জন্য শিক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’

আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবসের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে প্রদত্ত বাণীতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আসুন, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমে দেশের সাক্ষরতার হার শতভাগে উন্নীত করি। দেশের প্রতিটি নাগরিককে মানবসম্পদে পরিণত করি। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ক্ষুধা, দারিদ্র্য ও নিরক্ষরতামুক্ত ‘সোনার বাংলা’ গড়ে তুলি।

শিক্ষার হার ৭১ শতাংশে উন্নীত হয়েছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাড়ে সাত বছর আগে এই হার ছিল ৪৫ শতাংশ। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তার সরকার আইসিটি ভিত্তিক মানসম্মত শিক্ষার ওপর গুরুত্বারোপের মাধ্যমে এসডিজি লক্ষ্য অর্জনের বিষয়ে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছে।’

জাতিসংঘ মহাসচিব বান কি মুনও শিক্ষা খাতের বিষয়ে এসডিজির লক্ষ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করে এ  উপলক্ষে  প্রদত্ত বাণীতে  বলেন, ‘বৈশ্বিক সুবিধাদির জন্য এসডিজির লক্ষ্য সকলের জন্য মানসম্মত শিক্ষা ও জ্ঞানের সুযোগ তৈরি।’

 

 



রাইজিংবিডি/ঢাকা/৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬/টিপু/উজ্জল

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়