ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সিনিয়র সিটিজেন

শাহ মতিন টিপু || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৪:০২, ১ অক্টোবর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সিনিয়র সিটিজেন

সমাজে সর্বত্র প্রবীণদের হেলা করার অনুযোগ রয়েছে। প্রবীণ শব্দের যে অর্থগুলো রয়েছে তার একটি হচ্ছে ‘বিজ্ঞ’। এই একটি শব্দার্থ নিয়ে ভাবলেই প্রবীণরা আমাদের আপনজন হয়ে উঠতে পারে।

বিশ্ব প্রবীণ দিবস আজ। প্রবীণ এর ইংরেজি প্রতিশব্দটিও বেশ চমৎকার ‘সিনিয়র সিটিজেন’। এই শব্দটিও সমীহ জাগানিয়া।

আমাদের দেশে সাধারণত ষাটোর্ধ্ব বয়সের মানুষকে প্রবীণ বলে গণ্য করা হয়। কারণ এ বয়সের পর মানুষ দৈনন্দিন জীবিকা উপার্জনের কাজ থেকে অবসর নেয়। বাংলাদেশে সরকারি চাকরি থেকে অবসরের বয়স ৫৯ বছর। তবে বিচারপতিদের জন্য ৬৭ বছর এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কোনো কোনো পেশাজীবিদের জন্য ৫৯ বছর। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতেও ৬০ বা ৬৫ বয়সের পর একজন মানুষকে প্রবীণ বা ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হিসাবে গণ্য করা হয়। সমাজে তাদেরকে বিশেষ সম্মান ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হয়।

১৯৯০ সালে জাতিসংঘ প্রতিবছর পহেলা অক্টোবর আন্তর্জাতিক প্রবীণ দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নেয়। প্রবীণদের সুরক্ষা এবং অধিকার নিশ্চিতের পাশাপাশি বার্ধক্যের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী গণসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যেই এই দিবস।

‘বয়সের সমতার পথে যাত্রা’-এই প্রতিপাদ্যে এবছর দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্ব প্রবীণ দিবসের গুরুত্ব উপলব্ধি করে উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণী দিয়েছেন।

প্রবীণ নাগরিক সংক্রান্ত জাতীয় নীতি বা ‘ন্যাশনাল পলিসি ফর সিনিয়ার সিটিজেন্স ২০১১’তে  প্রবীণ জনসংখ্যা বিস্ফোরণের কথা বিবেচনা করা হয়েছে। পরিবর্তিত সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কথা বিবেচিত হয়েছে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে অগ্রগতির কথা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির অগ্রগতির কথা, গ্রামীণ এলাকায় প্রবীণ নাগরিকদের উচ্চহারে ছিন্নমূল হওয়ার বিষয় বিবেচিত হয়েছে। প্রবীণ পুরুষদের তুলনায় মহিলারা অনেক বেশি সংখ্যায় একাকিত্বের শিকার। ৬০ বছরের ঊর্ধ্বে সমস্ত মানুষ প্রবীণ নাগরিক। বিশেষ করে বৃদ্ধা এবং অতিবৃদ্ধ - বৃদ্ধাদের কথা চিন্তা করে এই নীতি তৈরি করা হয়েছে।

নীতিগত ভাবে এই নীতি সমস্ত বয়সের নাগরিকদের নিয়ে একটি সুসংবদ্ধ সমাজ গঠনের কথা বলে। একটি প্রথাগত ও অপ্রথাগত সামাজিক সহায়তা পদ্ধতি গড়ে তোলাতে এই নীতি বিশ্বাস করে যাতে প্রবীণদের ব্যাপারে যত্নবান হতে পরিবারগুলির ক্ষমতা বাড়ে এবং প্রবীণরা পরিবারেই বসবাস করতে পারেন। যে সব প্রবীণ নাগরিক যারা পারিবারিক বন্ধন এবং প্রজন্মগত বোঝাপড়া ও সমর্থনের উপর নির্ভরশীল, তাদের কাছে, বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলের সেই সব অসংখ্য‌ প্রবীণ মানুষের কাছে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়াই এই নীতির লক্ষ্য।

ইসলামে একজন প্রবীণের অবস্থান অত্যন্ত মর্যাদার এবং সম্মানের। তার এই বয়সে প্রাপ্য অধিকারের ব্যাপারে নির্দেশনা দিয়েছে এভাবে, ‘তোমার পালনকর্তা আদেশ করেছেন, তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করো না এবং বাবা-মায়ের সঙ্গে সদ্ব্যবহার কর। তাদের মধ্যে কেউ অথবা উভয়েই যদি তোমার জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হয়; তবে তাদের ‘উহ’ শব্দটিও বলো না এবং তাদের ধমক দিও না এবং বল তাদের শিষ্টাচারপূর্ণ কথা। তাদের সামনে ভালোবাসার সঙ্গে, নম্রভাবে মাথানত করে দাও এবং বল : হে পালনকর্তা, তাদের উভয়ের প্রতি রহম কর, যেমন তারা আমাকে শৈশবকালে লালন-পালন করেছেন।’ (সূরা বনি ইসরাইল, ১৭ : ২৩-২৪)।

পরিসংখ্যান বলছে, বর্তমান বিশ্বে প্রায় ৯০০ মিলিয়ন প্রবীণ রয়েছে যাদের বয়স ৬০ কিংবা তার ঊর্ধ্বে। এমনকি ধারণা করা হচ্ছে যে, ২০৩০ সালে এ সংখ্যা গিয়ে দাঁড়াবে ১.৪ বিলিয়ন এবং ২০৫০ সালে হবে ২ বিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। গবেষণা আরও বলছে, প্রবীণদের সংখ্যা উন্নত ও উন্নয়নশীল দেশে বাড়ছে। সংখ্যাধিক্যের এ ঊর্ধ্বগতির একটা অন্যতম কারণ হিসেবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে শিশু জন্মহার কমে যাওয়া। তাছাড়া, পাশ্চাত্যের অনুকরণে অনেক দেশ ও সমাজে পারিবারিক বন্ধন শেষ হয়ে যাচ্ছে। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে তাই একসময়ের তরুণ এবং আজকের প্রবীণরা বয়সের ভারে ন্যুব্জ হয়ে হাল ছাড়তে বাধ্য হবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু এ অবস্থা চলতে থাকলে ভবিষ্যতের বিশ্ব প্রবীণদের দেখাশোনা করার মতো পর্যাপ্ত জনগোষ্ঠী কাউকে হয়তো পাওয়া যাবে না। অধুনা বিশ্বে প্রবীণরা সবচেয়ে বর্বর যে বিষয়টির মুখোমুখি হয়েছে তা হলো ‘প্রবীণ নিবাস’ কিংবা ‘বৃদ্ধাশ্রম’। এখানে বসবাসরত প্রবীণদের জীবন ইতিহাস এবং বর্তমান অভিজ্ঞতা শুনলে অধিকাংশ ঘটনায় চোখে পানি ধরে রাখা কষ্টকর।

বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও আজ বিভিন্ন কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালিত হচ্ছে। দিবসটি উপলক্ষে সমাজসেবা অধিদফতর বর্ণাঢ্য র‌্যালি ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে। সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিটে প্রবীণ হিতৌষি সংঘ ও জরা বিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানের সামনে থেকে র‌্যালি শুরু হয়ে সমাজসেবা অধিদফতরে গিয়ে শেষ হবে।

আলোচনা সভায় সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ প্রধান অতিথি হিসেবে এবং সমাজকল্যাণ প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন।


ঢাকা/শাহ মতিন টিপু

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়