ঢাকা     শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৩ ১৪৩১

সুন্দর জীবন থেকে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা সুন্দর আলম

মামুন চৌধুরী || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ৪ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
সুন্দর জীবন থেকে বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধা সুন্দর আলম

সুন্দর আলম। হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার ভাদিকারা গ্রামের মৃত রহম আলীর ছেলে তিনি। একজন গর্বিত মুক্তিযোদ্ধা।

নাম সুন্দর আলম হলেও স্বাভাবিক সুন্দর জীবন তার ভাগ‌্যে জোটেনি।

বয়সের ভারে অনেকটা নুয়ে পড়েছেন এক সময়ের যুদ্ধের মাঠ কাঁপানো এই মুক্তিযোদ্ধা। এখন জীবন যুদ্ধ চালিয়ে যেতেই হিমশিম খাচ্ছেন তিনি। অভাব অনটনে এখন তার জীবন চলে কোনোমতে। 

আলাপে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে শুরু করে জীবনের নানা প্রসঙ্গ সংক্ষেপে তুলে ধরে তিনি জানান, একাত্তরে ২৬ মার্চ থেকে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। পাক সেনারা সেসময় চারদিকে তাণ্ডব চালায়। এসব দেখতে দেখতে মনকে শক্ত করেন তিনি। অবশেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে সাড়া দিয়ে দেশের মায়ায় সিদ্ধান্ত নেন যুদ্ধে যাওয়ায়।

সুন্দর আলম বলেন, ‘পরিবারের কাছ থেকে বিদায় নিলাম। শপথ নিয়ে নভেম্বর মাসের প্রথম দিকে বাড়ি থেকে পায়ে হেঁটে তেলিয়াপাড়া গেলাম। সেখান থেকে আমাকে পাঠানো হয় ভারতের হেজামারা ট্রেনিং ক্যাম্পে।

প্রায় তিন সপ্তাহ প্রশিক্ষণ নিয়ে ৩ নম্বর সেক্টর প্রধান মেজর কেএম শফি উল্লাহর নেতৃত্বে ক্যাপ্টেন নূরুজ্জামান ও কমান্ডার ইলিয়াছ কামালের দিক নির্দেশনায় চুনারুঘাটের তেলিয়াপাড়া, বাঁশ বাগানসহ বিভিন্নস্থানে গেরিলা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে লড়াই করেছি।

পরে লাখাই উপজেলার বুল্লা বাজারে গিয়ে সহযোদ্ধারা মিলে ছয় রাজাকারকে খতম করেছিলাম। এর আগে আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে পাকসেনারা পালিয়ে যায়। ’

বিজয় নিয়ে হবিগঞ্জের পোদ্দারবাড়িতে ক্যাপ্টেন এজাজ আহমেদ চৌধুরীর কাছে অস্ত্র জমা দিয়ে বীরের ন্যায় বাড়ি ফিরে জীবিকা নির্বাহে পুরোদমে কৃষি কাজে জড়িয়ে পড়েন তিনি। অন‌্যায়ের সঙ্গে আপোস না করা এই মুক্তিযোদ্ধা সারা জীবন সাধারণভাবে জীবন নির্বাহ করেছেন। 

এখন বয়সের ভারে আর শরীর দুর্বল হয়ে পড়ায় কৃষি কাজ ছেড়ে বেকার আছেন তিনি। মুক্তিযোদ্ধা সম্মানী ভাতার যে টাকা পান, তার ওপর নির্ভর করেই সংসার চলে। এতে ছয় ছেলে- মেয়ে ও স্ত্রীসহ বড় পরিবার চালানো তার জন‌্য বেশ কঠিন হয়ে পড়ছে। অন‌্যদিকে, অর্থাভাবে মাথা গোজার ঠাঁইও সুন্দরভাবে করতে পারেননি তিনি। শেষ বয়সে এসে একখানা বাড়ির অভাবে বেশ দুর্ভোগে আছেন সুন্দর আলম।

তিনি আরো বলেন, ’বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনা ক্ষমতায় আসায় মুক্তিযোদ্ধারা সম্মান পাচ্ছেন। তিনি (শেখ হাসিনা) আমাদেরকে নানাভাবে সহযোগিতা করছেন। তাই আমরা তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ। আমরা তার সঙ্গে আছি। ’

স্ত্রীসহ ছয় ছেলে-মেয়ের বড় পরিবার নিয়ে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্য জননেত্রী শেখ হাসিনা সরকারের কাছে দুটি পাকা ঘর ও এককালীন আর্থিক সহযোগিতা কামনা করেছেন সুন্দর আলম। এতে তার জীবনের বাকি সময়টুকু সুন্দরভাবে বাঁচার পথ তৈরি হতে পারে।



হবিগঞ্জ/মামুন/বুলাকী

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়