ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

সুলতানি আমলের সুরা মসজিদ নিয়ে যত কথা

মোসলেম উদ্দিন || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১২:১৬, ৪ মে ২০২১   আপডেট: ১২:১৮, ৪ মে ২০২১
সুলতানি আমলের সুরা মসজিদ নিয়ে যত কথা

প্রায় ৪০০ বছর আগের তৈরি সুলতানি আমলের সুরা মসজিদ। এটি দিনাজপুর জেলার হিলি-ঘোড়াঘাট সড়কের চোরগাছা নামক স্থানে অবস্থিত। প্রতিদিন বহু দূর থেকে শত শত মানুষ আসেন নামাজ আদায় করতে। আবার আল্লাহর নামে অনেকেই মান্নত করেন এই মসজিদে। এলাকায় জনশ্রুতি রয়েছে, সুলতানি আমলে এক রাতেই মসজিদটি তৈরি হয়েছে।

সুলতানি আমলের বিরল স্থাপত্য সুরা মসজিদটি প্রধানত দুটি অংশে বিভক্ত। একটি নামাজ ঘর ও একটি বারান্দা। নামাজ ঘরের পরিমাণ ৭.৮৪ ও ৭.৮৪ মিটার এবং বারান্দা ৪.৮৪ মিটার লম্বা ও ২.১২ মিটার চওড়া। চুন-সুরকির সাহায্যে ছোট আকৃতির ইট দিয়ে নির্মিত দেওয়াল, যার প্রশস্ত ১.৮০ মিটার। নামাজ ঘরটির ছাদ অর্ধ-গোলাকৃতির গম্বুজ দ্বারা আবৃত। বারান্দায় রয়েছে এক সারিতে অনুরূপ ৩টি গম্বুজ। নামাজ ঘরের চার কোণে ৪টি ও বারান্দায় ২টি পাথরের বুরুজ রয়েছে। 

মসজিতে প্রবেশের জন্য পূর্বদিকে ৩টি ও উত্তর-দক্ষিণে একটি করে খিলান প্রবেশদ্বার রয়েছে। বারান্দার উভয় পাশেও একটি করে প্রবেশ পথ আছে। মসজিদের ভেতর কেবলা দেওয়ালে ৩টি অলঙ্কৃত পাথরের তৈরি অবতল মেহরাব রয়েছে। বাইরে দুটি সারি অলঙ্কৃত ইটের প্যানেল নকশা ও এর মধ্যবর্তী স্থানে পাথরে ডিজাইন করা নকশা রয়েছে, যা সমসাময়িক সুলতানি আমলের মসজিদ স্থাপত্য হিসেবে অনুমান করা যায়। স্থাপত্যশৈলী অনুযায়ী এটি হোসেন শাহী (ষোল শতক) আমলের নিদর্শন।

মসজিদের উত্তর দিকে একটি ঈদগা মাঠ রয়েছে, যেখানে দুই ঈদে মুসল্লিরা ঈদের নামাজ আদায় করেন। ঈদগাহের সঙ্গে দুইটি পুরনো তেঁতুলের গাছ আছে, তবে কত বয়স এই গাছের, তার সঠিক বয়স বলতে পারেন না স্থানীয়রা। মসজিদের একেবারে উত্তরে একটি বিশাল পুকুর রয়েছে, যেখানে মসজিদে মান্নত করতে আসা মানুষ অজু এবং গোসল করেন। নামাজিদের জন্য একটি অজুখানা রয়েছে। রাস্তার সঙ্গে লাগানো একটি দানবাক্স রয়েছে। রাস্তা দিয়ে পথচারীরা ও বাসের যাত্রীরা দান খয়রাত করে থাকেন।

গাইবান্ধা থেকে আসা অন্তর বাবু বলেন, ‘এই প্রথম মসজিদটি দেখতে আসলাম। মানুষের মুখে এই মসজিদের অনেক কথা শুনে আসছি। আজ এসে বুঝতে পারলাম আল্লাহর ঘরটি আসলেই দেখার মতো। এখানে এসে খুবি ভালো লাগছে, আসছি সকালে, মন চাইছে না এখান থেকে যেতে।’

ঘোড়াঘাট উপজেলার উসমানপুর গ্রামের মোস্তফা হোসেন বলেন, ‘পাশের গ্রামে আমার বাড়ি, প্রতি সপ্তাহে একদিন করে আসি। এটা আমার ছোটবেলার অভ্যাস। যখন ভালো লাগে না, তখন আমার সহধর্মীনিসহ আসি। আল্লাহর ঘর, খুবি শান্তির জায়গা।’

৮৫ বছর বয়সী স্থানীয় তাছির উদ্দিন বলেন, ‘এটি খুব পুরনো মসজিদ। বাপ-দাদার নিকট এই মসজিদ সম্পর্কে অনেক কথা শুনেছি। তারা বলতেন এই আল্লাহর ঘরটি এক রাতেই তৈরি হয়েছে। এই মসজিদে আমি বাপ-দাদাদের সঙ্গে নামাজ পড়ে আসছি, আজও নামাজ পড়ি এবং যতদিন বাঁচবো, তত দিন এখানে নামাজ পড়বো।’

মসজিদে মান্নত করতে আসা জমিলা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তিনি রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘আমি আমার ছেলের অসুস্থতার জন্য মান্নত করতে এসেছি। মানুষের মুখে শুনেছি আল্লাহর নামে কোনো উদ্দেশ্য করে মান্নত করলে সেটি সফল হয়। তাই আজ মাংস দিয়ে খিচুড়ি রান্না করে সবাইকে খাওয়াচ্ছি।’

হিন্দু ধর্মাবলম্বী শ্রী হরিদাস মহন্তকে দেখা যায় এক প্যাকেট মোমবাতি মসজিদের গেটে রাখছেন। কথা হয় হরিদাস মহন্তের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আল্লাহর ঘর মসজিদটি খুব জাগ্রত। আমার যখনই শরীরের কোনো অসুখ হয়, তখনি এই আল্লাহর ঘরে কিছু মান্নত করি ও আমি সুস্থ হয়ে যাই।’

মসজিদের খাদেম মিজানুর রহমান বলেন, ‘এই মসজিদে আমার বাব-দাদারা খাদেম ছিলেন। তাদের পর আমিও দায়িত্ব পালন করে আসছি। প্রতিদিন বহু দূর থেকে মানুষ ছুটে আসে এই মসজিদটি দেখতে। আবার অনেকেই মান্নত করে রান্নাবান্না করে সবাইকে খাওয়ায়। অনেকেই আবার টাকাসহ অন্যান্য জিনিসও দান করেন।’

সুরা মসজিদের ইমাম মতিয়ার রহমান বলেন, ‘দীর্ঘ দিন যাবত এই মসজিদে আমি ইমামতি করে আসছি। আল্লাহর ঘর মসজিদে অনেক দূর থেকে দুই রাকাত নামাজ পড়তে আসেন। অনেকেই আবার দান-খয়রাত করেন তাদের সমস্যা সমাধানের জন্য।’

দিনাজপুর/মাহি 

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়