ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

হামলার প্রতিশোধ ইরান কোথায় কীভাবে নিতে পারে?

সাজেদ রোমেল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৩৫, ৩ জানুয়ারি ২০২০   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
হামলার প্রতিশোধ ইরান কোথায় কীভাবে নিতে পারে?

ইরান জেনারেল সোলাইমানিকে হত‌্যার প্রতিশোধ নিতে সরাসরি যুদ্ধে না গিয়েও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশ ইসরাইল, সৌদি আরব এবং ইরাকের মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানার ক্ষমতা রাখে।

এক্ষেত্রে ইরানের পক্ষে দেশটির অনুগত লেবাননের হেজবুল্লাহ গেরিলা, ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী এবং ইরাকের সদর বাহিনীকে নামাতে আনুষ্ঠানিক বৈঠকেরও প্রয়োজন পড়বে না। আর শক্তিশালী ও পরীক্ষিত মিত্র রাশিয়া এবং বিশ্বস্ত প্রতিবেশী সিরিয়ার এ অঞ্চলে অঘোষিত জোট সবচেয়ে বড় শঙ্কার কারণ হবে যুক্তরাষ্ট্রের জন‌্য।

তবে শুক্রবার ইরাকের বাগদাদে বিমানবন্দরে মার্কিন বিমান হামলায় ইরানের সফররত কুদস ফোরসের প্রধান নিহতের ঘটনায় সবচেয়ে উদ্বিগ্ন ইসরায়েল। দেশটির পশ্চিম তীড়ে ফিলিস্তিনের বাড়িঘর থেকে উচ্ছেদ করে সমালোচিত নেতানিয়াহু সরকার ভয় পাচ্ছে, ইরান সমর্থিত হেজবুল্লাহ, সদর বাহিনী কিংবা হুতি বিদ্রোহীদের পক্ষ থেকে হামলা হলে গাজার হামাস বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের ভেতরে ঢুকে তছনছ করে দিতে পারে।

এজন‌্য শুক্রবার মার্কিন হামলার পরপরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানেয়াহু দ্রুত গ্রিস সফর বাতিল করে দেশে ফিরেছেন। বসেছেন দেশটির শীর্ষ সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে।

নিজের বাহিনীকে তৈরি থাকার নির্দেশ মুক্তাদির আল সদরের

নিজের নামে গড়া শিয়াদের সংগঠন সদর বাহিনীকে যেকোনো  পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকতে বলেছেন শিয়া ধর্মীয় নেতা মুক্তাদির আল সদর।

শুক্রবার তিনি জেনারেল সুলাইমান ও কমান্ডার মেহেদি আল মুহান্দিসসহ ১০ জনের মৃত‌্যুতে শোক জানিয়ে এ নির্দেশ দেন।

এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, মুজাহিদিন, বিশেষ করে মেহদি আর্মি, প্রমিস ডে ব্রিগেডসহ সব দেশপ্রেমীক এবং সশৃঙ্খল দলসমূহকে আমি ইরাককে রক্ষার নির্দেশ দিচ্ছি।

হেজবুল্লাহর প্রতিরোধ যোদ্ধাদের প্রতিশোধের শপথ

লেবাননের প্রতিরোধ যোদ্ধা হেজবুল্লাহর সাধারণ সম্পাদক হাসান নাসারাল্লাহ বলেছেন, সারা বিশ্বের প্রতিরোধ যোদ্ধারা জেনারেল সোলাইমানিকে হত‌্যাকারীদের শাস্তি দেয়ার দায়িত্ব নেবে।

হামলার দিন শুক্রবারই হেজবুল্লাহর প্রধান নাসারাল্লাহ বলেন, ‘জেনারেল সোলাইমানির যে লক্ষ‌্য সেটা আমরা সম্পন্ন করব।’ তবে যে ইয়েমেনে সৌদি জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত ইরানপন্থী হুতি বিদ্রোহীদের কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। সৌদি আরবের একটি তেলখনিতে হামলা করে ব‌্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করেছিল এই হুতিরা।

সৌদি জোটের সঙ্গে লড়াইয়ে অভিজ্ঞ এই হুতি, ইসরায়েলের সঙ্গে একাধিক সংঘর্ষ এবং সর্বশেষ সিরিয়ার আসাদ সরকারের পক্ষে লড়ে সেদেশে বিদ্রোহীদের পরাজিত করার অন‌্যতম বাহিনী হেজবুল্লাহ নাকি অপেক্ষাকৃত শান্তিপূর্ণ ইরাকের সদর বাহিনী এবার কিছু ঘটাবে, তা জানা যাবে খুব শিগগিরই।

তবে সৌদি আরবসহ আরব দেশগুলো ইরানের জেনারেল হত‌্যার ঘটনায় সরাসরি হামলার দিন নিন্দা জানায়নি, পক্ষে-বিপক্ষেও মত দেয়নি। আবার ইরানের মিত্র রাশিয়া এবং বিশ্বস্ত প্রতিবেশী সিরিয়া হামলা ও হত‌্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা জানালেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্ররা হামলার স্বপক্ষে কিছু না বলে শুধু উদ্বেগ জানিয়েছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশে হামলায় ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিসহ নিহতের ঘটনায় মধ‌্যপ্রাচ‌্যে উত্তেজনা বাড়ার কথা বলছে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। ডেমোক্রেটিক প্রার্থী জো বাইডেন এবং স্পিকার নেনসি পেলোসি শুক্রবার সরাসরি এ হামলার উত্তেজনা ও সংঘাত বাড়ার শঙ্কার কথা জানিয়েছেন। ট্রাম্প বড় কোনো সংঘাতে দেশের ভেতরেও অনেক বিরোধিতার মাঝে পড়বেন, তা স্পষ্ঠ।

সে হিসেবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ‌্যম এবং বিভিন্ন পরাশক্তির প্রতিক্রিয়ায় বলা যায়, ইরানি জেনারেলকে হত‌্যা করে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্রদের নিরাপদ করার যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তা মহাভুল প্রমাণিত হতে যাচ্ছে। আবার প্রতিশোধ নিতে গিয়ে ইরানও সীমা অতিক্রম করলেও সেটাও কারো জন‌্য ভালো কিছু বয়ে আনবে বলে মনে করছে না কেউই।


ঢাকা/সাজেদ/সাইফ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়