ঢাকা     শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৪ ১৪৩১

‘হামি পুলিশ অফিসার হমুই হমু’

একে আজাদ || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ০৭:১২, ৭ মে ২০১৭   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
‘হামি পুলিশ অফিসার হমুই হমু’

এ কে আজাদ, বগুড়া : ‘বাপের ট্যাকা নাই, তাই বইলা কি বড় পুলিশ অফিসার হবার পারমু না? হামি পুলিশ অফিসার হমুই হমু। তাই ইস্কুলেত পইড়বার আচ্চি।’ বগুড়ার শিশু নূরনবী এভাবেই তার দৃঢ়তা প্রকাশ করল।

নূরনবী বগুড়া শহরের স্টেশন রোডে বস্তিতে থাকে। পরিবারের সদস্য সংখ্যা পাঁচ। তিন ভাই-বোনের মধ্যে দ্বিতীয় সে। বাবা সামছুল ইসলাম ফেরি করে ভাঙারি ব্যবসা করেন। মা আছিয়া বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করেন।

তাদের দুজনের উপার্জনে অর্ধাহারে সংসার চলে। সংসারে তিনবেলা পেট ভরে খাওয়াই জোটে না, পড়ালেখা করবে কি করে? বাবা সামছুল ইসলাম তাকে স্কুলের পোশাক কিনে দিতে না পারায় স্কুলে পাঠাতে পারেননি। কিন্তু নূরনবীর স্বপ্ন অনেক বড় পুলিশ অফিসার হওয়ার।

নুরনবীর এই স্বপ্ন পূরণে পাশে দাঁড়িয়েছে একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবী। এখন সে বগুড়ার অ্যাডওয়ার্ড পৌর পার্কের পশ্চিম পাশের আম বাগানের ঠিক মাঝখানে আলোর দিশারী নামে স্কুলটিতে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে। ওই স্কুলে শিশু থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানো হয়।

আর স্কুলটির পাঠদান চলে খোলা আকাশের তলে আম গাছের নিচে, সবুজ ঘাসে ওপর। একদল তরুণ-তরুণী স্বেচ্ছাসেবীর দল নিজস্ব অর্থায়নে স্কুলটি পরিচালনা করে থাকে। খাতা-কলম থেকে শুরু করে এক বেলা খাবার ফ্রি করে দেওয়া হয়েছে এখানে পড়তে আসা সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের।

শুধু নূরনবীই নয়, পড়ন্ত বেলায় দেখা যায় আরো অনেক সুবিধাবঞ্চিত শিশু-কিশোরদের। গাছের ছায়ায় বসে মগ্ন হয়ে আছে পড়ালেখায়। পাঠদান করান কয়েকজন তরুণ। আর বুধবার এলেই যেন তারা হয়ে ওঠে উচ্ছল, খাতা-কলম নিয়ে ছুটে আসে প্রকৃতির মাঝে আলোর দিশারী নামের ব্যতিক্রমী এই স্কুলটিতে।

স্কুলটির মূল উদ্যোক্তা স্বেচ্ছাসেবক আহসান হাবিব বিভু বলেন, ‘কোনো প্রাপ্তির কথা না ভেবে সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর পাশে দাঁড়াতে বগুড়া পৌর অ্যাডওয়ার্ড পার্কে ২০১৪ সালের অক্টোবরে পাঁচ বন্ধুকে সঙ্গে নিয়ে আলোর দিশারী স্কুল গড়ে তুলি। শুরুতে ৮-৯ জন সুবিধাবঞ্চিত শিশু নিয়ে এই স্কুলের কার্যক্রম চালু হলেও বর্তমানে ৪৫ জন শিশুকে পড়ানো হচ্ছে। আর শিক্ষক হিসেবে রয়েছেন ২৫ জন স্বেচ্ছাসেবক। তারা সবাই স্কুল অথবা কলেজের শিক্ষার্থী। তাদের বেতন ভাতা দিতে হয় না। বরং তাদের দেওয়া চাঁদার টাকায় স্কুলটির সার্বিক ব্যয় বহন করা হয়।’

আরেক স্বেচ্ছাসেবক আদিত্য কুমার বলেন, ‘সুবিধাবঞ্চিত এসব শিশুর পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি সাধারণ জ্ঞান, জীবনযাপন সম্পর্কে সচেতন করা, মাদক থেকে দূরে থাকা এবং স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন করা হয়। প্রতি বুধবার থেকে শনিবার পর্যন্ত বেলা সাড়ে ৩টায় শুরু হয়ে ৫টা পর্যন্ত চলে ক্লাস চলে। বিভিন্ন বয়সের সুবিধাবঞ্চিত ছেলে-মেয়েরা এখানে পড়তে আসে।’




রাইজিংবিডি/বগুড়া/৭ মে ২০১৭/একে আজাদ/এসএন/শাহনেওয়াজ

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়