ঢাকা     বৃহস্পতিবার   ০২ মে ২০২৪ ||  বৈশাখ ১৯ ১৪৩১

৮০১ প্রতিমা নিয়ে শিকদার বাড়ির চমক

আলী আকবর টুটুল || রাইজিংবিডি.কম

প্রকাশিত: ১৫:৪২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯   আপডেট: ০৫:২২, ৩১ আগস্ট ২০২০
৮০১ প্রতিমা নিয়ে শিকদার বাড়ির চমক

চারদিকের সাজ-সজ্জা, তুলির শেষ আঁচড়ের নিপুনতা, তৈরি হয়ে যাওয়া দেব-দেবীর নানা প্রতিমা। দেখে যে কারো মন জুড়াবে। এবারের দুর্গাপূজা উপলক্ষে বাগেরহাটের শিকদার বাড়িতে ৮০১টি প্রতিমা তৈরি করে চমকের আয়োজন করা হয়েছে।

বাংলাদেশে দুর্গাপূজাকে ভিন্নমাত্রা দেয় বাগেরহাটের শিকদার বাড়ি পূজামণ্ডপ। প্রতিবছর প্রতিমার সংখ্যার দিক দিয়ে দেশের সেরা বা বৃহত্তম মণ্ডপ তৈরি হয় শিকদার বাড়িতে। ভক্তবৃন্দ এই মণ্ডপকে এশিয়া মহাদেশের সবচেয়ে বড় মণ্ডপ বলে দাবি করেন। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হয়নি। এবার ৮০১টি প্রতিমা নিয়ে দেশের সব থেকে বড় আয়োজন করছে শিকদার বাড়ি পূজামণ্ডপ।

শিকদার বাড়ি মণ্ডপের প্রধান ভাস্কর বিজয় কুমার বাছাড় বলেন, ‘প্রতি বছরের মতো এবারও আমরা মানুষকে নতুন কিছু দেয়ার চেষ্টা করছি। এ বছর ৮০১টি প্রতিমার মাধ্যমে সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করছি। এর মধ্যে থাকবে মানুষ কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে। কার্তিক, গনেশ, নারদ এরা কীভাবে জন্ম নিলেন। নারায়ণ ব্রহ্মা রূপ ও চক্র পেলেন কীভাবে ইত‌্যাদি আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

তিনি আরো বলেন, ‘পুকুরের মধ্যে এবার অষ্ট সখি নিয়ে কৃষ্ণের নৌকা বিলাসের প্রতিকৃতি দেখে দর্শনার্থীরা আনন্দ পাবেন। অন্যবারের থেকে এ বছর দর্শকদের আরো বেশি ভাল লাগবে।’

চলতি বছরের ১ মে (১৮ বৈশাখ) থেকে ১৫ জন শ্রমিক নিয়ে ৮০১টি প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন প্রধান ভাস্কর বিজয় কৃষ্ণ বাছাড়। সেই থেকে আয়োজনের শেষ পর্যন্ত খুঁটিনাটি কাজ করে যাচ্ছেন তারা।

পূজা মণ্ডপে রয়েছে অতিথিদের আগমনের প্যান্ডেল ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যার জন্য মঞ্চ। এ কাজে নিয়োজিত রয়েছেন দক্ষিণাঞ্চলের বিখ্যাত মাগুরার বৈশাখী ডেকারেশন।

সাজসজ্জা বিভাগের প্রধান আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘প্রায় সাড়ে পাঁচ মাস ধরে ১৫ জন শ্রমিক মণ্ডপের বাহ্যিক সাজসজ্জার কাজ করছে। গত বছরের তুলনায় এবার দর্শনার্থীরা প্রতিমার পাশাপাশি সাজসজ্জা দেখেও মুগ্ধ হবেন।’

মণ্ডপে থাকছে চোখ ধাঁধানো আলোক সজ্জা, ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা, প্রতিদিন সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা, দর্শনার্থীদের আপ্যায়ন, সরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থার পাশপাশি নিজস্ব নিরাপত্তার ব্যবস্থাসহ নানা আয়োজন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার খানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর গ্রামের শিকদার বাড়িতে ২০১১ সাল থেকে এই বড় আয়োজনের যাত্রা শুরু হয়। সে বছর ২৫১টি প্রতিমা তৈরি করা হয়। এরপর আর কমেনি বরং বেড়েই চলেছে। সেই ধারাবাহিকতায় ২০১৭ সালে প্রতিমার সংখ্যা হয় ৬৫১টি। ২০১৮ সালে তা পৌঁছায় ৭০১টিতে। এবার সেই সংখ‌্যা দাঁড়ালো ৮০১টিতে।

আয়োজক বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লিটন শিকদার বলেন, ‘আপনারা জানেন এ বছর আমার বাবা মারা গেছেন। বাবার ইচ্ছে ছিল গেল বছরের থেকে ১০০টি প্রতিমা বেশি করা হোক। সেই অনুযায়ী বাড়িয়ে এ বছর ৮০১টি প্রতিমা তৈরি হয়েছে। এর মাধ্যমে আমরা সৃষ্টির রহস্য তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। এ বছর দর্শনার্থীরা অন্যান্য বছরের থেকে ব্যতিক্রম কিছু দেবদেবীদের প্রতিমা দেখতে পাবেন। আশাকরি দর্শনার্থীরা মুগ্ধ হবেন।’

প্রতিমা শিল্পী বিথেন বাছার, সঞ্জিত বাছার ও ইমন বাছার বলেন, ‘১৮ই বৈশাখ বিজয় দা’র সাথে এখানে এসেছি। সবাই মিলে খুবই আন্তরিকতার সাথে কাজ করছি। বিশ্রামের তেমন সময় না থাকলেও দেব-দেবীর প্রতিমা তৈরির কাজ করতে পেরে ভালই লাগছে। এত বড় মণ্ডপের কাজ এ বাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও করিনি। তাই কাজে করতে কোনো ক্লান্তি আসে না।’

বাগেরহাট পুলিশ সুপার পঙ্কজ চন্দ্র রায় বলেন, ‘বাগেরহাটের প্রত্যেকটি মণ্ডপের নিরাপত্তায় পুলিশ সদস্যরা দায়িত্বে থাকবেন। তবে শিকদার বাড়িতে পূজা উৎসবের বড় আয়োজনের কারণে সেখানে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করব। ভক্ত ও দর্শনার্থীরা যাতে নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে পূজা মণ্ডপ দর্শন করতে পারেন।’


বাগেরহাট/টুটুল/সনি

রাইজিংবিডি.কম

আরো পড়ুন  



সর্বশেষ

পাঠকপ্রিয়