সারা বাংলা

সবার চোখ ছিলো হিরো আলমের দিকে

সকাল পৌনে ৮টা। বগুড়া সদরের এরুলিয়া উচ্চ বিদ্যালয় স্কুল মাঠে কেবলমাত্র কয়েকজন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও  কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী অবস্থান। ভোটের বুথগুলোর দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিরা মোটামুটি প্রস্তুত। ভোট শুরু হবে সকাল সাড়ে ৮টায়। এর আগেই এক এক করে স্থানীয় এবং জাতীয় পত্রিকা, টেলিভিশন এবং অনলাইন মিডিয়ার গণমাধ্যমকর্মীরা হাজির কেন্দ্রটিতে। সবার চোখ উপ-নির্বাচনে বগুড়া দুই আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী হিরো আলমের দিকে। 

হিরো আলমের নিউজ কাভারের জন্য বগুড়ার স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী বাদেও ঢাকার কয়েকটি হাউজ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বগুড়ায় পাঠানো হয়েছে। হিরো আলম গণমাধ্যমকর্মীদের অনেককেই কথা দিয়েছিলেন তিনি সকাল সাড়ে ৮টাতেই কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট দেবেন। 

কিন্তু ৯টা বেজে গেলেও কেন্দ্রে উপস্থিত হননি হিরো আলম। তার  একজন এজেন্টকে কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলেন, হিরো আলম কি করছেন? কখন আসবেন। ওই এজেন্ট বললেন, ভাই রওনা দিয়েছেন। আসতেছেন। কিন্তু পৌনে এক ঘণ্টাতেও দেখা নেই হিরো আলমের। এর মধ্যে কেন্দ্রের বাইরে, স্কুল গেটের সামনে সেলফিস্টিকসহ মোবাইল ওয়ালাদের জটলা দেখা গেলো। 

হিরো আলমকে ঘিরে ইউটিউবারদের জটলা

তারা পায়চারী করছেন। সবার চোখ রাস্তার দিকে। ভোট শুরু হয়েছে প্রায় ১ ঘণ্টা হলো। কেন্দ্র পুরোটাই ফাঁকা। ভোটগ্রহণে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ভোটারদের অপেক্ষা করছেন। আমরা হিরো আলমের। হঠাৎ করেই কেউ একজন বলে উঠলেন ‘হিরো আলম’ এসেছেন। একটু এগিয়ে যেতেই দেখা গেলো মোবাইল এবং ক্যামেরাম্যানরা প্রতিযোগিতা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন রাস্তার দিকে।

বগুড়া-সান্তাহার রোড। বেশ প্রশস্ত। সাদা রঙের একটা প্রাইভেটকার। আগে থেকেই একঝাক মোবাইলধারী যুবক গাড়িটিকে ঘিরে ধরেছে। পরে আরও এক এক ঝাঁক যুবক গাড়ির কাছে গেলেন। হিরো আলম গাড়ির দরজা খুলে বের হবেন, সেই জো নেই। এরপর ভিড় ঠেলে হিরো আলম শেষমেশ বের হতে পারলেন। কিন্তু সামনে এগোতে পারছিলেন না। গণমাধ্যমকর্মী এবং ফেসবুক ও ইউটিউবারদের চাপে। এসময় কয়েকজন ইউটিউবার তাকে ভোট নিয়ে বক্তব্য দিতে অনুরোধ করছিলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের মধ্য থেকে বলা হলো, বক্তব্য ভোট দেওয়ার পর। হিরো আলমও তাতে সায় দিলেন। 

হিরো আলম এগোতে চান। কিন্তু ভিড় সামলাতে কাহিল অবস্থা। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি সামাল দিতে এগিয়ে এলেন। গণমাধ্যমকর্মীদের কেউ কেউ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর লোকজনদের অনুরোধ জানালেন, কেবলমাত্র যাদের নির্বাচন কেন্দ্রে প্রবেশের অনুমতি আছে তাদের রেখে বাকিদের বের করে দিতে। এরপরেও কয়েকজন ইউটিউবার চিপা-চাপা দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলেন বুথ পর্যন্ত। জানতে পেরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের বের করে দিলেন। হিরো আলম ভোট দিলেন পৌনে ১০টায়। সাড়ে ৯টায় কেন্দ্রে হাজির হয়ে ১৫ মিনিট ভিড় সামলিয়েছেন তিনি। 

এরপর তার বক্তব্য দেয়ার পালা। মিডিয়াকর্মীরা তাকে ঘিরে ধরেছেন। মোবাইল ব্যবহারকারীদের চাপে টেলিভিশনের বড় বড় ক্যামেরা হিরো আলমকে ক্যামেরা বন্দি করতে পারছিলো না। ফলে সিদ্ধান্ত হলো হিরো আলমের কাছে দুই দফা বক্তব্য নেওয়া হবে। আগেরবার যারা বক্তব্য নিয়েছে তারা পরের বার নিতে পারবে না। কথা হলো এই। কিন্তু পরের বারও কেউ কেউ তাদের মোবাইল ফোন ধরে বসে রাখলেন। 

এদিকে ভোট শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা হয়ে গেলেও তখনও কেন্দ্রের ভোটের মাঠ ফাঁকা। কিন্তু হিরো আলমের চারপাশে অসংখ্য ভিড়। তার ইন্টারভিউ দেয়া এবং তাকে দেখতে ভিড় করেছিলেন সবাই। 

হিরো আলম বলেন, ‘ভোট সুষ্ঠু হলে তিনিই জিতবেন।’ এরপর ভিড় সামলে তিনি বগুড়া-সান্তাহার রোডে পৌঁছান। গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি স্টার্ট নিলো। আস্তে আস্তে ফাঁকা হয়ে গেলো কেন্দ্রটি। 

পরে পৌনে দুই ঘণ্টাতে ওই স্কুলের দুটি কেন্দ্রের একটিতে ভোট পড়েছে ১৮টি এবং অন্যটিতে পড়েছে ১৫০টি।