বাংলাদেশ নিয়ে ভারতীয়দের অপপ্রচার ও সহকারী হাইকমিশনে হামলার প্রতিবাদে ঢাকা থেকে লংমার্চ নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়ায় সমাবেশ করে দেশের জন্য যে কোনো ধরনের ঝুঁকি নেওয়ার অঙ্গীকার করেছেন বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের নেতারা।
ভারতকে ইঙ্গিত করে তারা বলেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এদেশের জনগণ যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছে। স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি তারা আপোষহীন। কোনো রক্তচক্ষুকে তারা ভয় পান না।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) ঢাকা থেকে সকালে লংমার্চ নিয়ে বিকেলে আখাউড়ায় পৌঁছায় বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন। যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলে এই লংমার্চের আয়োজন করে।
আখাউড়া স্থলবন্দরের মাঠের সমাবেশে প্রধান অতিথি ছিলেন কেন্দ্রীয় যুবদলের সভাপতি আব্দুল মোনায়েম মুন্না। সেখানে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ অত্যন্ত স্বাধীনচেতা। আমরা আমাদের ভূখণ্ডের বিরুদ্ধে হওয়া যে কোনো চক্রান্তের বিরদ্ধে সবসময় সোচ্চার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য এদেশের জনগণ যে কোনো ঝুঁকি নিতে প্রস্তুত আছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতি আমরা আপোষহীন। আমরা কোনো রক্তচক্ষুকে ভয় পাই না।”
আরো পড়ুন: পিন্ডি থেকে স্বাধীনতা এনেছি, দিল্লির কাছে আত্মসমর্পণ?
তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে প্রতিবেশী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে হবে। আমরা সুস্পষ্টভাবে বলতে চাই, বাংলাদেশের বাইরে আমাদের কোনো প্রভু নেই। আমরা বন্ধু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিবেশীকে চিন্তা করি।”
তিনি আরো বলেন, “ আমরা ভারতকে একটি বার্তা দিতে চাই, আপনারা বিগত সাড়ে ১৫ বছর শেখ হাসিনার সরকারকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন। এই ফ্যাসিবাদ শেখ হাসিনা আপনাদের দেশে অবস্থান করছেন।”
শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরাতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আব্দুল মোনায়েম মুন্না। তিনি বলেন, “আমরা অবিলম্বে শেখ হাসিনাকে বিচারের আওতায় আনার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আমরা অনুরোধ জানাই, আপনারা ভারত সরকারকে বলেন, শেখ হাসিনা ও তার দোসরদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য।”
যুবদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি বলেন, “জুলাই-আগস্টে আমাদের ২০০ নেতাকর্মীসহ দুই হাজার শহীদ হয়েছেন। এদেশের প্রচলিত আইনে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে আমরা প্রত্যেকটি শহীদের হত্যার বিচার চাই। এখনো ভারতে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের যারা যারা অবস্থান করছেন, তাদের প্রত্যেককে ফিরিয়ে আনতে হবে।”
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী বলেন, “ভারত নিজেকে সবসময় গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে বিবেচনা করে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করেছি, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য বারবার তারা আহ্বান করেছে। বারবার ষড়যন্ত্র করেছে। আমরা দেখেছি, বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারবার ভারত নগ্ন হস্তক্ষেপ করেছে।”
স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী
তিনি বলেন, “ভারত সীমান্তে নিরীহ জনগণকে গুলি করে হত্যা করে। আমরা ভারতের কাছে এই সীমান্ত হত্যা বন্ধ চাই। আমাদের পানির ন্যায্য হিস্যা আপনাদের (ভারত) কাছে দাবি করছি। আমরা বাংলাদেশের মানুষ সবসময় বন্ধুসুলভ আচরণ করি। বাংলাদেশের যুব সমাজকে ধ্বংস করতে ইয়াবা-ফেনসিডিল সরবরাহ করছে ভারত।”
স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি বলেন, “আমরা পিন্ডির জিঞ্জির ভেঙেছি, দিল্লির দাসত্ব করার জন্য নয়। বাংলাদেশের যখনই কোনো বিপদ এসেছে বিএনপির কর্মীরা ঝাঁপিয়ে পড়েছে। ভারতকে বলে দিতে চাই, এই প্রতিবাদ ও লংমার্চ থেকে আপনাদের যদি শুভ বুদ্ধির উদয় না হয়, তাহলে আমরা বাংলাদেশের প্রতিটি ইঞ্চি মাটির জন্য পাহারায় থাকবো। সুতরাং, রক্তচক্ষু দেখিয়ে লাভ নেই। আগস্ট বিপ্লবে যে ফ্যাসিবাদকে উৎখাত করেছে বাংলাদেশের মানুষ, আপনি বধু বেশে বরণ করেছেন। তার জন্য তো আপনি যৌতুক চাইতে পারেন না।”
যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন বলেন, “তারা বাংলদেশের সহকারী হাইকমিশনে আগুন দিয়েছে। বাংলাদেশের পতাকা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে। ভারত সেখানে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। পুলিশ নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশের পতাকা তারা অবমাননা করেছে। ভারত আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র কিন্তু বন্ধু রাষ্ট্র হতে পারেনি।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা ভারতের কাছে তিস্তার পানি চেয়েছিলাম। তবে রাজ্য সরকারের আপত্তির কারণে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার পানি দেয়নি। আমাদের সমুদ্রসীমা থেকে তারা মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের পররাষ্ট্রনীতি কী হবে তাও তারা শিখিয়ে দিচ্ছে। সমুদ্রসীমার ওপরে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে তারা নজরদারি করছে। আমাদের আকাশের ওপর দিয়ে বিমান চলে এর টাকাও ভারত নিয়ে যাচ্ছে।”
নুরুল ইসলাম বলেন, “প্রতিবছর আমরা জামদানি ও ইলিশ পাঠায়। কিন্তু তারা আমাদের ফেলানীর লাশ উপহার দেই। ফেনসিডিল উপহার দেয়। স্বাধীনতার পর থেকে তারা আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে। ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনা পালিয়ে গিয়ে ভারতে আশ্রয় নিয়েছে। ভারতের মিডিয়া একপেশী সংবাদ পরিবেশন করে যাচ্ছে। যতই ষড়যন্ত্র করার চেষ্টা করেন, আমরা ঐক্যবদ্ধ। যে কোনো ষড়যন্ত্র দেশের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মোকাবিলা করবে।”
কেন্দ্রীয় ছাত্রদল সভাপতি রাকিবুল ইসলাম বলেন, “এ দেশে আওয়ামী লীগের কোনো অস্তিত্ব নেই। এ দেশের মানুষ ভারতের আগ্রাসী মনোভাব মোকাবিলায় ঐক্যবদ্ধ। আবারও যদি পতাকা অবমাননা হয়, তাহলে আমরা কঠোর জবাব দেব।”
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় সভাপতি এস এম জিলানী। লংমার্চের সভায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আব্দুল মান্নান, সদস্য সচিব সিরাজুল ইসলাম, সদস্য কবির আহমেদ ভূইয়াসহ কেন্দ্রীয় যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল ও ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। লংমার্চে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জের ভৈরব, হবিগঞ্জ, সিলেট, মৌলভীবাজার, ফেনী, কুমিল্লা ও চাঁদপুরসহ বিভিন্ন জেলার বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা অংশ নেন।