'কয়েকদিন আগে বনানীর একটি ক্লাবে গিয়ে ভাংচুর করেছেন পরীমনি। সেলিব্রেটি হয়ে অন্যদের ভিকটিমাইজড করছেন পরীমনি। নাসির উদ্দিন এবং অমিও ভিকটিমাইজড।'
বুধবার (২৩ জুন) ঢাকার সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট রাজিব হাসান নায়িকা পরীমনিকে ধর্ষণ ও হত্যা চেষ্টার অভিযোগে সাভার থানায় দায়ের করা মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ (৬৫) এবং তুহিন সিদ্দিকী অমির (৩৩) পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। রিমান্ড শুনানিতে একথা বলেন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা।
গত ১৫ জুন বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় নাসির উদ্দিন এবং অমির সাত দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। ওই মামলায় রিমান্ড শেষে বুধবার পরীমনির মামলায় তদন্ত কর্মকর্তা সাভার থানার ইন্সপেক্টর মো. কামাল হোসেন তাদের ১০ দিন করে রিমান্ড আবেদন করেন।
চীফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের পুলিশ পরিদর্শক মেজবাহ উদ্দিন রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘পরীমনি প্রথম শ্রেণির একজন অভিনেত্রী। গত ৯ জুন তাকে এই দুই আসামিসহ অন্যরা মারধর করে। তাকে জোর করে মদ পান করায়। কেন মদ পান করালো, অন্য কোনো উদ্দেশ্যে ছিল কি না জানার জন্য রিমান্ডের প্রয়োজন।’
সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত ঢাকার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর শেখ হেমায়েত হোসেন ও রিমান্ড আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, ‘এজাহারে এই দুইজনের নাম আছে। ঘটনার সাথে আরও অজ্ঞাতনামারা জড়িত আছে। তাদের গ্রেপ্তারের লক্ষে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন। আর আসামিরা এ অপরাধ থেকে মুক্তি পেলে সমাজে এ ধরনের অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। সমাজকে এ ধরনের অপরাধ থেকে মুক্ত করতে তাদের বিচার হওয়া দরকার।'
নাসির উদ্দিন ও অমির পক্ষে ঢাকা বারের সভাপতি আব্দুল বাতেন, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান মামুনসহ কয়েকজন রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন শুনানি করেন। ঠাকুর ঘরে কে রে, আমি কথা খাই না একথা দিয়েই শুরু করেন মিজানুর রহমান মামুন। সেলিব্রেটি হলেই আমাকে রাত ১২ টার পর ক্লাবে যেতে হবে কেন, এমন প্রশ্ন রাখেন মিজানুর রহমান মামুন। তিনি বলেন,‘এরকম হলে তো আরও অনেক কিছুই হতে পারে। ধর্ষণ বা হত্যা চেষ্টার মামলা হলে তো ডিএনএ, ফরেনসিক টেস্ট করা দরকার। আসামিদের সিমটোম নিক তারা চেষ্টা করেছেন কি না। তাছাড়া আজ যারা আসামি তারা কি কম সেলিব্রেটি। পরীমনি সেলিব্রেটি ভালো কথা, উনার জায়গায় উনি থাকুক। আসামিদের মিডিয়া ট্রায়াল চলছে। এর রেজাল্ট কি হবে আমরা জানি।’
আবদুল বাতেন বলেন,‘পরীমনি বাসা থেকে রওনা হন স্বেচ্ছায়। ১২ টার পর তো ক্লাব বন্ধ হয়ে যায়। আর নাসির কেন তাকে রেপ করতে যাবেন? এজাহারে অমির বিরুদ্ধে কোনো বক্তব্য নাই। কেন তাকে রিমান্ডে পাঠাবেন।’
তিনি বলেন,‘ শাবানা, ববিতা, রোজিনাও নায়িকা ছিলেন। তাদের আমরা শ্রদ্ধা করি। তারা কোনো ক্লাবে যাননি। তিনি কেন রাত ১২ টার পর ক্লাবে যাবেন। আসামিরা ভালো মানুষ। বিপদে পড়ে গেছেন। হয়রানী করতে মামলা দেয়া হয়েছে। রিমান্ড বাতিল চেয়ে তাদের জামিন চাচ্ছি।’
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী শেখ হেমায়েত হোসেন বলেন,‘পরিকল্পিতভাবে তাদের বোট ক্লাবের উদ্দেশ্যে নিয়ে গেছে। তাদের উদ্দেশ্যে ছিল খারাপ কান্ড ঘটানো। তাদের রিমান্ড মঞ্জুর করা হোক।'
উভয়পক্ষের শুনানি শেষে আদালত প্রত্যেকের ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
এর আগে ১৫ জুন বিমানবন্দর থানায় দায়ের করা মাদক মামলায় নাসির উদ্দিন মাহমুদ এবং তুহিন সিদ্দিকী অমির ৭ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
গত ১৪ জুন দুপুরে সাভার থানায় পরীমনি মামলাটি দায়ের করেন। মামলা দায়েরের পর অভিযানে নামে মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। ওইদিনই নাসির ইউ আহমেদসহ পাঁচজনকে উত্তরার একটি বাসা থেকে আটক করে ডিবি পুলিশ। অভিযানে ওই বাসা থেকে বিপুল পরিমাণ মদ-বিয়ার ও ইয়াবা জব্দ করা হয়। বিমানবন্দর থানায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন।