কোন ফলে পুষ্টি নেই? এ প্রশ্নের উত্তর দেয়া সহজ নয়, কারণ আমরা যেসব ফল খেয়ে থাকি তাদের প্রত্যেকটিতে কিছু না কিছু পুষ্টি রয়েছে। কিন্তু কিছু ফলে পুষ্টির পরিমাণ এত বেশি যে এগুলো সুপারফুড হিসেবে খ্যাত হয়েছে। এসব পুষ্টি সমৃদ্ধ খাবার নিয়মিত খেলে দেহের সমগ্র স্বাস্থ্যের উন্নয়ন হয় ও রোগ থাকে বহুদূরে। এ প্রতিবেদনে সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর ১০ ফলের নাম দেয়া হলো।
* পিচ
আপনি জানেন যে কলাতে উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে, কিন্তু দুটি ছোট পিচেও ২৫০ মিলিগ্রাম এ প্রয়োজনীয় খনিজ পাবেন। এ খনিজ স্নায়ু ও পেশির স্বাস্থ্য উন্নত করে, যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব হেলথ অনুসারে। ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মলিকিউলার সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা যায়, পিচের খোসায় প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট পাওয়া যায়। যারা ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান তাদের ডায়েটে মিষ্টি যোগ করার একটি স্বাস্থ্যকর উপায় হলো পিচ।
* আনারস
মিষ্টি ও কড়া স্বাদের এ টপিক্যাল ফলটি ব্রোমিলেনে সমৃদ্ধ। ব্রোমিলেন হলো একটি প্রদাহরোধী এনজাইম যা হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে পারে বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে, বায়োমেডিক্যাল রিপোর্টসে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদন অনুযায়ী।
* আঙুর
পার্পল রঙের আঙুর হচ্ছে বিশ্বের সবচেয়ে পুরোনো ও প্রাচুর্যপূর্ণ স্বাস্থ্যকর ফল। আঙুর ব্লাড লিপিডের ওপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে, প্রদাহ হ্রাস করে ও ব্লাড প্রেশার কমায়, জার্নাল অব দ্য সায়েন্স অব ফুড অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারে ২০১৫ সালে প্রকাশিত গবেষণা অনুসারে। আঙুর হচ্ছে পটাশিয়ামেরও সমৃদ্ধ উৎস, যা মাসল ক্র্যাম্প অথবা মাংসপেশির যন্ত্রণাদায়ক সংকোচন প্রতিরোধে সহায়তা করে।
* কিউই
খসখসে বা আঁইশযুক্ত খোসার এ ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাবেন। ভিটামিন সি হচ্ছে একটি অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট যা ক্যানসার থেকে সুরক্ষিত রাখে ও চোখের স্বাস্থ্যের উন্নয়ন ঘটায়। কিউই ফলে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম, কিন্তু আঁশের পরিমাণ তুলনামূলক বেশি- একারণে ওজন কমাতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের জন্য এটি হলো আদর্শ ফল।
* আম
পুষ্টিবিদদের মধ্যে আমের জনপ্রিয়তা দিনকে দিন বেড়েই চলেছে, কারণ এ রসালো ফলে উচ্চ মাত্রায় বিটা-ক্যারোটিন পাওয়া যায়, যাকে আপনার শরীর ভিটামিন এ-তে কনভার্ট করে রোগপ্রতিরোধ তন্ত্রকে শক্তিশালী করে ও চোখের দৃষ্টি তীক্ষ্ণ রাখে। এছাড়া এক বাটি আমে ৬০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি পাবেন, যা একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিনের ৫০ শতাংশেরও বেশি।
* আপেল
একটি মাঝারি সাইজের আপেলে মাত্র ৮০ ক্যালরি থাকে, কিন্তু এতে প্রচুর কোয়ারটেচিন পাবেন- এ শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টটি মস্তিষ্কের কোষের ডিজেনারেশন বা ক্ষয়সাধন প্রতিরোধ করে (মস্তিষ্কের কোষের ক্ষয়ে অ্যালঝেইমারস রোগ হতে পারে)। হাইপারটেনশন নামক জার্নালে প্রকাশিত গবেষণা থেকে জানা গেছে, আপেল খেয়ে ব্লাড প্রেশার কমানো যেতে পারে। এছাড়া আপেলের আঁশের সঙ্গে কোলেস্টেরল লেভেল উন্নয়নের যোগসূত্র রয়েছে। ভুলেও আপেলের খোসা ফেলে দেবেন না, কারণ এ খোসাতে রোগ প্রতিরোধী কম্পাউন্ড রয়েছে, যেমন- আপেলের খোসায় বিদ্যমান ফ্লেভানয়েড হার্টের রোগের ঝুঁকি নিচে নামাতে পারে।
* ডালিম
ডালিমের রসে অ্যান্টিঅক্সিড্যান্টের মেগা ডোজ রয়েছে। এ ফলটি পটাশিয়ামেরও ভালো উৎস, যা শক্তি ধরে রাখে ও হাই ব্লাড প্রেশারকে নাগালের মধ্যে আনে। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, প্রতিদিন ডালিমের রস পানে হার্ট-রক্তনালির স্বাস্থ্যের উপকার হতে পারে ও প্রদাহ কমতে পারে। কিন্তু নিয়মিত ডালিমের রস খাওয়ার পূর্বে চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলুন, কারণ এটি প্রেসক্রিপশন ওষুধে হস্তক্ষেপ করে কার্যকারিতা খর্ব করতে পারে।
* মোসাম্বি
ভিটামিন সি এর একটি পরিচিত উৎস হলো কমলা, কিন্তু মোসাম্বিও এই ভিটামিনের সমৃদ্ধ উৎস। একটি মোসাম্বির অর্ধেকাংশ একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন সি এর প্রায় ৫০ শতাংশ সরবরাহ করে। এ ফলটিতে উচ্চ মাত্রায় আঁশ, ভিটামিন এ ও পটাশিয়ামও রয়েছে। মোসাম্বির ভিটামিন সি কোলাজেন উৎপাদনের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত, তাই এ ফলটি ক্ষতিগ্রস্ত বা তৈলাক্ত ত্বক ও চুল মেরামত করতে পারে।
* কলা
স্ন্যাক হিসেবে কলা হচ্ছে আদর্শ খাবার। কলায় উচ্চ পরিমাণে পটাশিয়াম ও আঁশ রয়েছে, যা আপনার শরীরকে দীর্ঘসময় শক্তিপূর্ণ রাখতে পারে। এ ফলে ফ্যাট বা লবণ থাকে না বলে এটি একটি স্বাস্থ্যকর স্ন্যাক। কলার পঁচন তিন থেকে পাঁচদিন বিলম্বিত করতে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করতে পারেন, এতে কলার খোসা বাদামী হলেও খাবারযোগ্য অংশটি ভালো থাকবে।
* ব্লুবেরি
ব্লুবেরিকে অনেকদিন ধরে সুপারফুড বিবেচনা করা হচ্ছে। এ মিষ্টি ফলটি ছোট হলেও শক্তিশালী, যেখানে প্রচুর পরিমাণে রোগ দমনকারী অ্যান্টিঅক্সিড্যান্ট ও ভিটামিন সি বিদ্যমান থাকে। এ ফলে অ্যান্থোসায়ানিন নামক রঞ্জকও রয়েছে, গবেষণা বলছে যে এ রঞ্জক ব্রেইনপাওয়ার বৃদ্ধি করতে পারে। একটি গবেষণায় পাওয়া গেছে, যেসব লোক বেশি পরিমাণে ব্লুবেরি খেয়েছিল তাদের গ্রুপে বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন বিকাশের হার কম ছিল। ২০১৮ সালে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব মলিকিউলার সায়েন্সে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে উল্লেখ আছে, বয়স্ক মানুষদের অন্ধত্বের প্রধান কারণ হচ্ছে বয়স-সম্পর্কিত ম্যাকুলার ডিজেনারেশন।
তথ্যসূত্র : দ্য হেলদি