খেলাধুলা

ডানপিটে সোহানের নেতৃত্বে নতুন মোড়কে ‘বাংলাদেশ’

বড্ড ডানপিটে ছেলে তার। এজন্য নাসিবুল হাসান সান্নুর ভয় যেমন হতো, তেমনি গর্বও হতো। ভয় হতো— ছেলে কখন কি করে ফেলেন! আর গর্ব হতো ছেলের অসীম সহসিকতার কথা ভেবে।

কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করে নিজের মন যা বলে তা করতে পারার যে দক্ষতা, তা কাজী নুরুল হাসান সোহানকে অন্য সবার থেকে আলাদা করেছে। দেশের ৪৯তম টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটার হিসেবে সোহানের অভিষেক হয়েছিল নিজের বিভাগীয় শহর খুলনাতে। আজ দেশের অষ্টম টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক হিসেবে সোহানের যাত্রা শুরু হলো জিম্বাবুয়ের হারারেতে।

২০১৬ সালে মাশরাফির হাত থেকে পেয়েছিলেন টি-টোয়েন্টি ক্যাপ। সেদিন সাকিব, মুশফিক, মাহমুদউল্লাহ, তামিম সবাই ছিলেন। ছয় বছর পর আজ হারারেতে সোহানের হাত ধরে নতুন বাংলাদেশ ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হলো। যেখানে নেই পূর্বসূরীর কোনো ছায়া।

মাশরাফি বিন মুর্তজা নেই প্রায় সাড়ে ৫ বছর; সেই ২০১৭ সালের এপ্রিল থেকে। তামিম ইকবালও ২০২০ সালের মার্চ থেকে নেই। দুজনই এই ফরম্যাট থেকে অবসরে। মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের এ ফরম্যাটে খেলার ইচ্ছা থাকলেও টিম ম্যানেজমেন্ট তাদের নিয়ে ভাবছে না। নতুনের আহ্বানের ডাক দিচ্ছেন নীতি নির্ধারকরা। সাকিব আল হাসান স্বদর্পে টিকে থাকলেও এই সিরিজে বিশ্রামে।

ফলে সোহান অ্যান্ড কোং মাঠে নেমেছে একেবারেই নতুন মোড়কে। সোহানের বাবা ছিলেন ফুটবলার। ছেলে হলেন ক্রিকেটার। এখন অধিনায়কও। ছেলের হাতে নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেখতে পেরে বুক ফুলিয়ে গর্ব করছেন নাসিবুল হাসান সান্নু, ‘আমার পরিবারের জন্য আজ আনন্দের দিন। সোহান বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক হয়েছে। নিজের ছেলে বলে বলবো না, ওর অসীম সাহসিকতা আজ ওকে এখানে নিয়ে এসেছে। আমি নিশ্চিত করে বলতে পারি, সবার সমর্থন পেলে ও খুব ভালো অধিনায়ক হবে।’

আক্রমণাত্মক ক্রিকেট সোহানের ব্র্যান্ড অব ক্রিকেট। ঘরোয়া ক্রিকেট এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যখন সুযোগ পেয়েছেন নিজেকে মেলে ধরেছেন আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে, বিস্ফোরক ইনিংসে। সাফল্য-ব্যর্থতা চক্রের মতো। কখনো সফল হবে, কখনো ব্যর্থ। কিন্তু সঠিক মনোভাব প্রদর্শনে ট্রু স্পোর্টসম্যানশিপের আদর্শ সাফল্য নিহিত। সোহান সেই পতাকা উচিয়ে ধরেছেন বারবার।

সোহানের থেকে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় আছেন স্থানীয় দুই কোচ সোহেল ইসলাম ও নাজমুল আবেদীন ফাহিম। নাজমুল আবেদীন বলেছেন, ‘ঘরোয়া ক্রিকেট আর আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের একটা গ্যাপ থাকে। সেটা সোহান কখনোই বুঝতে দেয়নি। যে কোনো ম্যাচ এতো সিরিয়াস হয়ে খেলে যেটা একজন ক্রিকেটারের সততা প্রকাশ করে। আমার প্রত্যাশা ওর হাত ধরে বাংলাদেশ ভালো কিছু পাবে।’

শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবে সোহান ও সোহেল ইসলাম একই সঙ্গে কাজ করেছেন। শিষ্যকে নিয়ে তাই সোহেলের উচ্ছ্বাসটাও ছিল বাড়তি, ‘আমাদের দলের অধিনায়ক ইমরুল থাকলেও মূল কাজগুলো সোহানই করেছিল। তাতে ইমরুলের কাজটা আরও সহজ হয়ে গিয়েছিল। শেখ জামালকে প্রথম শিরোপা জেতাতে বড় ভূমিকা ছিল তার। নেতৃত্বের প্রশ্নে সোহান বরাবরই দারুণ। লিড দিতে পছন্দ করে। এটা খুবই ভালো। আর ম্যাচের সেন্স ভালো। আমি তার থেকে ভালো কিছুর প্রত্যাশায় আছি।’

তিন ম্যাচের জন্য আপাতত দায়িত্ব পেয়েছেন সোহান। সামনে সাকিবের হাতে এই নেতৃত্বভার যেতে পারে। তবে এ তিন ম্যাচ তার জন্য বড় পরীক্ষা। এখানে ভালো করলে সামনে তাকে নিয়ে বড় পরিসরে চিন্তা করতে বাধ্য হবে টিম ম্যানেজমেন্ট, নীতি নির্ধারকরা।