মাত্র দেড় মাস আগে হিমালয় চন্দ্র ও বন্যা বোদেশ্বরী সাঁতপাকের বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। এখনো বন্যার হাত থেকে মুছে যায়নি মেহেদির রং। কিন্তু এই নবদম্পতির সব স্বপ্নই এক নিমেষে হারিয়ে গেল করতোয়া নদীর পানিতে।
গত রোববার পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলার ময়দানদীঘি খালপাড়া গ্রামের এ নবদম্পতি শারদীয় দুর্গোৎসবের মহালয়ার ধর্মসভায় যোগ দিতে বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন। আশা ছিল করোতোয়ার পানিতে স্নান করে পাপমুক্তির। কিন্তু সেই করোতোয়াই স্বামীকে কেড়ে নিয়েছে বন্যার কাছ থেকে।
নৌকা ডুবির ঘটনায় বন্যা বেঁচে ফিরলেও নিখোঁজ রয়েছেন স্বামী হিমালয়। উপস্থিত বুদ্ধি দিয়ে নিজের কাপড় খুলে প্রাণে বাঁচেন বন্যা। কিন্তু আকড়ে রাখতে পারেননি স্বামীকে। তাদের সঙ্গে থাকা হিমালয়ের মামাতো বোন আঁখিরও খোঁজ মেলেনি।
পরিবার সূত্রে জানা যায়, দেড় মাস আগে একই গ্রামের বীরেন্দ্রনাথ-সারদা রানী দম্পতির ছেলে হিমালয়ের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল বন্যার। ঘটনার দিন খুব আনন্দে ছিলেন তারা। মহালয়ার উৎসবে যোগ দিতে সেজে বাড়ি থেকে বেড় হয়েছিলেন হিমালয়-বন্যা। ফিরে এসে পূজার কেনাকাটা করার কথা ছিল তাদের।
এদিকে, ঘটনার পর থেকেই হিমালয়ের খোঁজে করতোয়ার পাশে অপেক্ষা করছেন তার দুলাভাই গ্রীবাবু। তবে রাত পেঁড়িয়ে দুপুর গড়ালেও মেলেনি হিমালয়ের খোঁজ। গ্রী বাবু বলেন, হিমালয়ের অপেক্ষায় আছি এখানে। কেউ খোঁজ দিতে পারে না। বাড়িতে বন্যা বারবার জ্ঞান হারাচ্ছে। বাড়িতে সবাই অপেক্ষা করছে। জীবিত না হোক লাশটা নিয়ে ফিরতে চাই আমি। কি হইলো এসব? ভগবান কি করল?
রোববার দুপুরে শতাধিক যাত্রী নিয়ে নৌকা ডুবির ঘটনা ঘটে। রাত ১১টা পর্যন্ত উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করে ২৫ জনের লাশ উদ্ধার করে স্থানীয়রা। সোমবার ভোর থেকে আবারো উদ্ধার অভিযান শুরু হয়। এদিন আরও অনেকের লাশ উদ্ধার হয়। মঙ্গলবার (২৭ সেপ্টেম্বর) শুরু হওয়া অভিযানে উদ্ধার করা হয় নতুন করে আরো ছয়টি লাশ।
এদিকে ঘটনার কারণ উৎঘাটনে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে নিহত প্রত্যেক পরিবারকে মরদেহ সৎকারের জন্য ২০ হাজার টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে জেলা প্রশাসন।