চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ সংসদীয় আসনের উপ-নির্বাচনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীর বিপক্ষে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থীরা। দুই আসনে স্বতন্ত্র তিনজন বিদ্রোহী প্রার্থী আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের দুই প্রার্থীর সঙ্গে প্রতীদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ইতোমধ্যে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা জেলায় এসে নৌকার পক্ষে প্রচার-প্রচারণা করছেন। এছাড়াও যারা নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করছে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থ্যা নেওয়ার হুশিয়ারি দিয়েছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী জিয়াউর রহামনের বিরুদ্ধে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন সিংহ প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ আলী সরকার। তিনি রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য। এছাড়াও এই আসনেই খুরশিদ আলম নামের মাথাল প্রতীকের আরেক প্রার্থী আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী। তিনি গোমস্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য। যদিও এই আসনে বিদ্রোহী প্রার্থীর আলোচনার মূল কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন মোহাম্মদ আলী সরকার।
অন্যদিকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে নৌকার প্রার্থী ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল ওদুদের বিপরীতে ভোটে দাঁড়িয়েছেন বহিষ্কৃত জেলা যুবলীগের সভাপতি ও আপেল মার্কার প্রার্থী সামিউল হক লিটন। এই আসনে ভোটারদের কাছের আলোচনার মূলকেন্দ্রে তিনিই। এর আগে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পৌরসভার নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে ভোট করায় দলীয় পদ খোয়ান সাবেক যুবলীগ নেতা লিটন।
চাঁপাইনবাবগঞ্জের দুটি আসনের উপ-নির্বাচনে মানুষের মধ্যে আগ্রহ না থাকলেও নির্বাচনে অংশ নেওয়া প্রার্থীদের প্রচার প্রচারণার কমতি নেই। তবে কিছু দলীয় প্রার্থী ঘটা করে ভোটারদের কাছে না গেলেও এই ৩ স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) নিয়মিত প্রচার প্রচারণায় অংশ নিচ্ছেন। ভোটারদের দিচ্ছেন নানা উন্নয়ন কাজের প্রতিশ্রুতি আর শুনাচ্ছেন উন্নয়নের পরিকল্পনা।
কিন্তু আসন দুটির ভোটাররা কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে অনীহা করলেও কে-হবে আগামীর সংসদ সদস্য এই আলোচনাতে ওই বিদ্রোহীদের নামও শোনা যাচ্ছে।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এসএস কামাল হোসেন বলেন, ‘দলের সব নেতা-কর্মীদের নৌকার পক্ষে কাজ করতে হবে। দলের পদ পদবি নিয়ে কেউ নৌকার বিরুদ্ধে কাজ করলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রয়োজনে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হবে।’
চাঁপাইনবাবাগঞ্জ-৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা সামিউল হক লিটনকে উদ্দেশ্য করে বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খাঁন নিখিল বলেন, ‘ এখানে অন্য যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন, সেখানে আমারই সহকর্মী আছেন। এই সহকর্মী জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি ছিলেন। পৌরসভার নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে তিনি ভোটে দাঁড়িয়েছিলেন। নৌকার বিরুদ্ধে যাওয়ার জন্য তাকে সংগঠন থেকে অব্যাহতি দিতে বাধ্য হলাম। তার লক্ষ্য- উদ্দেশ্য লোভ, তাই তিনি আবারও নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়িয়েছেন।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) মোহাম্মদ আলী সরকার বলেন, ‘ এই এলাকার মানুষের সঙ্গে থাকবো বলে দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলাম। কোনো কারণে দলীয় মনোনয়ন পাইনি। মনোনয়ন দাখিল করেছি, নির্বাচনও করবো। এই এলাকার লোকজন যদি মনে করে থাকবো, না পছন্দ করলে থাকবো না। রাজশাহী জেলা পরিষদে আমি একায় নির্বাচন করেছিলাম, সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছিলাম।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের উপ-নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী (আওয়ামী লীগ বিদ্রোহী) সামিউল হক লিটন বলেন, ‘একজন রাজনৈতিক নেতার বড় সম্পদ হলো জনগণ। জনগণদের চাপেই আমাকে এই নির্বাচনটা করতে হচ্ছে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে। জনগণ যদি আমার পাশে না থাকে তাহলে আমার লাভ নেই একজন নেতা হিসেবে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জনগণের সাড়া পেয়েছি। আশা করছি এই সাড়া অব্যাহত থাকবে।’
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ আসনে মোট ভোটার ৪ লাখ ৫ হাজার ৪৫০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ১ হাজার ১৭০ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৪ হাজার ২৮০ জন। ১৮০টি ভোট কেন্দ্রের ১২৩০টি ভোট কক্ষ আছে।
অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনে মোট ভোটার রয়েছেন ৪ লাখ ১১ হাজার ৪৯৫ জন। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ২ লাখ ৮ হাজার ৮৮৩ জন ও নারী ভোটার ২ লাখ ৫ হাজার ৬১২ জন। এই আসনে ১৭২টি ভোট কেন্দ্রের ভোট কক্ষ আছে ১২৪০টি। প্রসঙ্গত, সংসদীয় আসন চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ (সদর) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য হানুরুর রশীদ ও চাঁপাইনবাবগঞ্জ-২ (নাচোল-গোমস্তাপুর-ভোলাহাট) থেকে বিএনপির সংসদ সদস্য আমিনুল ইসলাম পদত্যাগ করায় আসন দুটি শূন্য ঘোষণা করা হয়। এই আসন দুটিতে তফশীল অনুযায়ী আগামী ১ ফেব্রুয়ারি সকাল সাড়ে ৮টা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণ করা হবে।