শহরে নতুন সাংবাদিক। সে কে? হইচই পড়ে গেল চারপাশে। কেউ একজন বললেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রথম সুপারস্টার, পোস্টারবয়। নামের পাশে এমন উপমা কেবল মোহাম্মদ আশরাফুলের ক্ষেত্রেই মানায়।
চোখে চোখ রেখে প্রতিপক্ষের সঙ্গে লড়াই করা, জবাব দেওয়ার যে তীব্র ভাষা- তা ছিল আশরাফুলের ব্যাটেই। ওই ব্যাকরণ, নিদারুণ সৌন্দর্য আজও বিমোহিত করে রেখেছে ক্রিকেটপ্রেমীদের।
ক্রিকেট মহলে প্রচলিত, ক্রিকেটটা খুব ভালো বোঝেন আশরাফুল। বিশ্লেষণও করেন। বিভিন্ন টক শো, বিশ্লেষণধর্মী অনুষ্ঠান কিংবা নিজস্ব মতামত বা কলামে আশরাফুল সেই ছাপ রেখেছেন। এবারের বিশ্বকাপে আশরাফুলের সেই পরিচয়কে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিলো ব্রডকাস্টার টি স্পোর্টস।
২০০৩, ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপে খেলা আশরাফুলকে ভারত বিশ্বকাপে যুক্ত করেছে টি স্পোর্টস। তাদের ব্রডকাস্ট অপারেশন্স হিসেবে ভারত বিশ্বকাপে বিশেষজ্ঞ মতামত দেবেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক। বাংলাদেশ যেখানেই খেলবে সেখানেই থাকবেন আশরাফুল।
ভিসা জটিলতার কারণে আগেভাগে ধর্মশালা পৌঁছতে পারেননি টেস্টে সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান। শনিবার সকালে শৈল শহরে পা রেখে তড়িঘড়ি করে হোটেলে ঢুকে বেরিয়ে পড়েন স্টেডিয়ামে। কারণ সকালেই বাংলাদেশ আফগানিস্তান ম্যাচ। ম্যাচের আগে নতুন পরিচয়ে অভিষেক হয়ে যায় তার। টিভির পর্দায় দেখা যায় টি স্পোর্টসের অফিসিয়াল শার্ট পরে কথা বলছেন ধর্মশালার সবুজ গালিচায়।
এরপর খেলা শুরু হলে প্রেসবক্সে বসেই উপভোগ করতে থাকেন দুই দলের ম্যাচ। ফাঁকে রাইজিংবিডির সঙ্গে কথোপকথনে উঠে আসে তার নতুন অভিজ্ঞতার রোমাঞ্চ, ‘ম্যাচটা ধরতে পারব কি না বুঝতে পারছিলাম না। কিন্তু শেষমেশ চলে আসতে পারলাম। খুব সুন্দর স্টেডিয়াম। এসেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে গেল।’
‘নতুন পরিচয় তো দারুণ লাগছে। আগে মাঠে খেলেছি। খেলাটা উপভোগ করি। খেলা নিয়ে কথা বলতে ভালোবাসি। টি স্পোর্টস যখন অফার করলো তখন থেকেই রোমাঞ্চিত ছিলাম। ক্রিকেট খেলেছি বলে ওই টেকনিক্যাল জায়গাগুলো বুঝি। নিজেকে ওই অবস্থায়, পরিস্থিতিতে রেখে বিচার-বিশ্লেষণ করে মূল্যায়ন করতে পারি। ভালো সময় যাচ্ছে। সামনের ম্যাচগুলোতেও থাকব। আশা করছি বাংলাদেশ জিতবে। সঙ্গে আমাদেরও কাজ আরও সহজ হয়ে যাবে।’- বলছিলেন আশরাফুল।
২২ গজ এখনও ছাড়েননি আশরাফুল। ঘরোয়া ক্রিকেটে নিয়মিত খেলে যাচ্ছেন। খেলার কথা ছিল ১২ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া জাতীয় ক্রিকেট লিগে। কিন্তু বিশ্বকাপে এক্সপার্ট অপিনিয়ন দিতে যুক্ত হয়ে যাওয়ায় এবারের লিগ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। ব্যাট-বলের এই মহারণটা উপভোগ করতে চান মাঠ থেকে।
আশরাফুল যেই বিশ্বকাপে বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন সেখানে ধারাভাষ্য কক্ষে ম্যাথু হেডেন, নাসির হুসেন, এউয়ন ম্যরগানরা কণ্ঠের যাদুতে মুগ্ধ করে যাচ্ছেন। বাংলাদেশের একমাত্র প্রতিনিধি হিসেবে সেখানে রয়েছেন আতাহার আলী খান। সেখানে থাকতে পারতেন মোহাম্মদ আশরাফুলও। কিন্তু ইংরেজি ভাষার দুর্বলতা তাকে পিছিয়ে দিয়েছে। তবে সামনে নতুন কিছু নিয়ে হাজির হওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিলেন না ৩৯ পেরুনো আশরাফুল।