খেলাধুলা

শেষের রোমাঞ্চে রংপুরের শ্বাসরুদ্ধকর জয়

১২ বলে প্রয়োজন ৩ রান। হাতে ২ উইকেট। ১৯তম ওভারের দ্বিতীয় বলে আবু হায়দার রনির উইকেট হারায় রংপুর রাইডার্স। দলের নবম উইকেট হারিয়ে রংপুর শিবিরে হারের শঙ্কা জাগে। নতুন ব্যাটার হাসান বিপদ ছাড়াই ওভার শেষ করে স্ট্রাইক দেন শামীম পাটোয়ারীকে। শেষ ওভারের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে ম্যাচ টাই করেন শামীম। সাইফউদ্দিনের করা পর এই ওভারের দ্বিতীয় বল হাসানের ব্যাটের খোঁচা লেগে চার হয়! হাঁফ ছেড়ে বাঁচে রংপুর!

অথচ পাওয়ার প্লে’তে ২ উইকেট হারিয়ে তারা তুলেছিল ৭২ রান। পাওয়ার প্লে’তে প্রায় অর্ধেক রান তুলতে ৭ উইকেট হারিয়ে ম্যাচ হারতে বসেছিল রংপুর। ছড়িয়েছিল দারুণ রোমাঞ্চ। যদিও শেষ পর্যন্ত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রনি-সাকিবরা।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাটিং করতে নেমে ৯ উইকেটে ১৫১ রান করে ফরচুন বরিশাল। তাড়া করতে নেমে উইকেটের মিছিলে ১ উইকেটে জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে রংপুর। আগেই প্লে-অফ নিশ্চিত করা দলটির পয়েন্ট হলো ১৮! অন্যদিকে প্লে-অফের দৌড়ে থাকা ১১ ম্যাচে ছয় জয়ে বরিশালের পয়েন্ট ১২। তারা আছে টেবিলের তৃতীয় স্থানে।

তাড়া করতে নেমে দারুণ শুরু করে রংপুর রাইডার্স। ব্রেন্ডন কিং ফিরে এসে ঝড়ো শুরু এনে দেন। প্রথম দুই ওভারে মাত্র ১ বল পেয়েছিলেন ওপেনিংয়ে খেলতে নামা মুমিনুল হক। তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেটের পেছনে খোঁচা দিয়ে ফেরেন বিপিএলের মাঝপথে দল পাওয়া এই ক্রিকেটার। মাঠ ছাড়েন রানের খাতা খোলার আগেই।

মুমিনুল আউট হলেও কিং ঝড় থামেনি। সঙ্গে যোগ হয় সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত ব্যাটিং। ইনিংসের খাতা খোলেন দারুণ চারে। দুজনে মাত্র ২৩ বলে ৫৩ রান যোগ করে রংপুরের জয়ের ভিত গড়ে দেন। ২২ বলে ৪৫ রান করে কিং আউট হলে ভাঙে এই জুটি। এক ওভার বিরতিতে সাজঘরে ফেরেন সাকিবও। তার ব্যাট থেকে আসে ১৫ বলে ২৯ রান।

সাকিব আউট হতেই যেন ছন্দপতন ঘটে রংপুরের ইনিংসে। পরপর দুই ওভারে ফেরেন  মাহেদী হাসান (৭) ও নুরুল হাসান সোহান (২)। ৭৪ থেকে ৮৭ মাত্র, ১৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে রংপুর। সেই চাপ সামলে প্রতিরোধ গড়েন জিমি নিশাম-টম মুরস। দুজনে ২৫ বলে ৩১ রানের জুটি গড়ে ধাক্কা সামলান।

১৭ রান করে মুরস সাজঘরে ফেরেন। ১৭ বলে ২৮ রান করা নিশামও ম্যাচ শেষ করে আসতে পারেননি। জয় থেকে দল যখন ৩ রান দূরে তখন ডোয়াইন প্রিটোরিয়াস ফেরেন ১৩ রানে। প্রিটোরিয়াসের পর ক্রিজে এসে ছক্কা মারতে গিয়ে বিপদ বাড়ান আবু আবু হায়দার রনি। সেই বিপদমুক্ত করেন শামীম পাটোয়ারী-হাসান মাহমুদ। শেষ পর্যন্ত আবু হায়দার রনিকে সঙ্গে নিয়ে ম্যাচ শেষ করে আসেন শামীম। শামীম ৪ ও রনি ৪ রানে অপরাজিত থেকে মাঠ ছাড়েন।

এর আগে বরিশালের ইনিংসেও একই দশা হয়। ঝড়ো শুরুর পর হঠাৎ ছন্দপতন। বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার রনি মাত্র ১৩ বলে ৫ উইকেট নিয়ে এলোমেলো করে দেন বরিশালের ব্যাটিং অর্ডার।

১৩তম ওভারে প্রথম বল হাতে নিয়ে প্রথম ওভারে মুশফিকুর রহিম, সৌম্য সরকার ও কাইল মায়ার্সকে ফেরান রনি। পরের ওভারে তার শিকার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তৃতীয় ওভারে মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে রনি প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ফাইফারের স্বাদ পান। ৪ ওভারে মাত্র ১২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে বরিশালকে স্রেফ উড়িয়ে দেন এই পেসার।

অথচ শুরুতে তামিমের ২০ বলে ৩৩ এবং পরে মায়ার্সের ২৭ বলে ৪৬ রানে মনে হচ্ছিল বরিশালের রান চূঁড়ায় যাবে। প্রথম ১০ ওভারে প্রথমবারের মতো ১০০ রান আসায় বিশ্বাস ডানাপালা মেলেছিল। কিন্তু রনির দুর্দান্ত এক স্পেল চোখ ধাঁধিয়ে দিয়েছে সকলকে। তামিম ৩৩ রান করেন ৩ চার ও ২ ছক্কায়। শুরু থেকে রান পাওয়ায় মনে হচ্ছিল তার ব্যাটে আজ বড় কিছু আসবে।

কিন্তু বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন সাকিবের বলে আলগা শট খেলে। সেখান থেকে টম ব্যাটনন ও মায়ার্স ওভারপ্রতি ১০ করে রান তুলে ১০ ওভারে ১০০ রান তুলে নেয়। রংপুরের বোলিংয়ে তেমন প্রাণ ছিল না। কিন্তু নিশাম ব্যাটননকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙলে ও রনি ক্রিজে আসলে সব হিসেবে নিকেশ পাল্টে যায়। শেষ দিকে ওবেদ ম্যাককয় ১২ ও মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন ১০ রানে কোনোমতে দেড়’শ পেরোয় বরিশাল।