কয়েকটি পরিবেশবাদী সংগঠনের পক্ষ থেকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবনে বার বার অগ্নিকাণ্ডের দায় বনবিভাগকেই নিতে হবে বলে মন্তব্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৭ মে) সকালে মোংলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে পরিবেশবাদী সংগঠন ‘ধরিত্রী রক্ষায় আমরা’ (ধরা), ‘সুন্দরবন রক্ষায় আমরা’ ও ‘পশুর রিভার ওয়াটারকিপার’-এর আয়োজনে ‘বার বার আগুনের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনঃ দায় কার, করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে বক্তারা এ মন্তব্য করেন।
সকাল সাড়ে ১১টায় সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য রাখেন পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের আহ্বায়ক নূর আলম শেখ। সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধরার অধ্যক্ষ সেলিম, কমলা সরকার, হাছিব সরদার, সুন্দরবনের জেলে সমিতির সভাপতি বিদুৎ মন্ডল, পশুর রিভার ওয়াটারকিপারের স্বেচ্ছাসেবক নাজমুল হক ও শেখ রাসেল।
নূর আলম শেখ বলেন, ‘বার বার সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ডের ফলে সামগ্রিকভাবে পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। বড় গাছসহ লতাগুল্ম মারা যাচ্ছে। প্রাণীকূলের আবাস ও প্রজননস্থল ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বন্যপ্রাণীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। বনের শৃংখলা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রভাব পড়ছে বনের প্রাণীকূলের খাদ্যচক্রে। চরম আঘাত আসছে সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রের উপরে। অসৎ বন কর্মকর্তাদের যোগসাজশে মুনাফালোভী মাছ ব্যবসায়ীরা বারে বারে সুন্দরবনে আগুন লাগাচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে জেলে সমিতির সভাপতি বিদ্যুৎ মন্ডল বলেন, ‘প্রকৃত জেলেরা সুন্দরবনে কখনও আগুন লাগাতে পারে না। কতিপয় মুনাফালোভী অসৎ মাছ ব্যবসায়ী ও অসাধু বন কর্মতারা মিলে সুন্দরবনে আগুন লাগিয়ে থাকে। অগ্নিকাণ্ডের সঙ্গে যারাই জড়িত থাকুক, আইনের আওতায় এনে তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।’
কিছু সংখ্যক জেলে শুষ্ক মৌসুমে সুন্দরবনের নিচু এলাকায় শুকনো লতাপাতা, গুল্মে আগুন ধরিয়ে জ্বালিয়ে দেন। এতে বর্ষার সময় নদীর পানি ঢুকলে ওই এলাকায় তাদের জাল পাততে সুবিধা হয়। এছাড়া মৌয়ালরা মধূ সংগ্রহে চাক থেকে মৌমাছি তাড়াতে আগুন জ্বালায়। এতেও সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড ঘটে।
শনিবার (৪ মে) বিকেলে সুন্দরবনের আমরবুনিয়ায় আগুন লাগার খবর পায় সুন্দরবন পূর্ব বনবিভাগ। খবর পাওয়ার পর বনবিভাগ, ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়। এ দিন সন্ধ্যা নামায় অগ্নিনির্বাপন ব্যবস্থা শুরু করতে পারেনি বনবিভাগ। রোববার (৫ মে) সকালে ফায়ার সার্ভিস, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বন বিভাগের নিজস্ব ফায়ার ইউনিট আগুন নির্বাপন শুরু করে। এতেও আগুন নিয়ন্ত্রণে আসছিল না।
সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে সবার সম্মিলিত চেষ্টায় জোরেসোরে আগুন নেভানোর কাজ শুরু হয়। দুপুর নাগাদ আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে বলে ঘোষণা করে ফায়ার সার্ভিস ও বনবিভাগ। তবে পুরোপুরি নিভে যায়নি। এরমধ্যে সন্ধ্যার আগ-মুহূর্তে ঝুম বৃষ্টি নামে। পরে আগুন নিভে যায়।
লিখিত বক্তব্যে নূর আলম শেখ জানান, প্রতি হেক্টর সুন্দরবনের প্রতিবেশ সেবার আর্থিকমূল্য ৪৫৬ থেকে ১ হাজার ৯২ মার্কিন ডলার। এই হিসাবে বছরে সুন্দরবন ২৭ কোটি থেকে ৭১ কোটি মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ প্রতিবেশসেবা দিয়ে থাকে।
সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে সুন্দরবনে অগ্নিকাণ্ড বন্ধে সুপারিশ পেশ করা হয়।
সুপারিশের মধ্যে রয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে ও অগ্নিকাণ্ড বন্ধে বনবিভাগসহ অন্যান্য আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্য, সুন্দরবন গবেষক ও বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় জনগণ ও নাগরিক এবং পরিবেশ সংগঠনের প্রতিনিধিদের নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন; সুন্দরবনে ওয়াচ টাওয়ার নির্মাণ; বনের মধ্যে অবাধ যাতায়াত বন্ধ; অপরিকল্পিত খাল খনন বন্ধ; মৌয়ালদের প্রশিক্ষণ; সুন্দরবন রক্ষায় স্থানীয় জনসাধারণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টি ইত্যাদি।
এ ছাড়া সুন্দরবন রক্ষায় ড্রোন ক্যামেরা, সিসিটিভি ক্যামেরা, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়।