চাঁদ সোপারকে উড়িয়ে মারলেন গুলবাদিন নাইব। বল উড়ে যাচ্ছে সীমানার দিকে, বাউন্ডারি লাইন পেরিয়ে সেটা আছড়ে পড়লো সীমানার ওপারে। পাপুয়া নিউগিনির বিপক্ষে ৭ উইকেটের বড় জয়ে নিশ্চিত হলো আফগানিস্তানের সুপার এইট। একই সঙ্গে বেজে উঠলো নিউ জিল্যান্ডের বিদায় ঘণ্টা।
আজ শুক্রবার (১৪ জুন) ত্রিনিদাদের ব্রায়ান লারা স্টেডিয়ামে টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৫ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ৯৫ রানে গুটিয়ে যায় নিউগিনি। জবাব দিতে নেমে দ্রুত ৩ উইকেট হারালেও নাইব এবং মোহাম্মদ নবীর বীরত্বে ২৯ বল ও ৭ উইকেট হাতে রেখে জয়ের বন্দরে পৌছে যায় আফগানিস্তান।
লক্ষ্য খুবই ছোট। আফগানিস্তানের জন্য যা সহজেই পেরিয়ে যাওয়ার কথা। তবে রান তাড়ায় নেমে ধীরেসুস্থে শুরু করে রশিদ খানের দল। এর মধ্যে দ্বিতীয় ওভারেই ফর্মে থাকা ইব্রাহিম জাদরানকে ফিরিয়ে নিউগিনিকে আনন্দে ভাসান সেমো কামিয়া। ৭ বল খেলেও রানের খাতা খুলতে পারেননি আফগান ওপেনার।
পরের ওভারেই আফগানদের আরেক ভরসা রহমানুল্লাহ গুরবাজকে ফিরিয়ে দলকে আশার আলো দেখান আলেই নাও। এরপর দারুণ এক জুটি গড়ে তোলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাই ও গুলবাদিন নাইব। পাওয়ারপ্লে’তে ২ উইকেট হারিয়ে আফগানদের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩৯ রান।
দুজন মিলে দলকে যখন জয়ের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন, ঠিক তখনই আঘাত হানে নিউগিনি। ১৩ রান করা ওমরজাইকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন ভানুয়া। নাইবের সঙ্গে জুটি বাঁধেন অভিজ্ঞ নবী। ১০ ওভারে আফগানিস্তানের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৩ উইকেট হারিয়ে ৫৯ রান। নবী ও নাইবের অভিজ্ঞ জুটিতে ধীরে ধীরে জয়ের বন্দরে এগোতে থাকে আফগানিস্তান। দুজন মিলে দেখেশুনে ওয়ানডে স্টাইলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন।
দুজনের মধ্যে নাইব ছিলেন বেশ আক্রমণাত্মক। অন্যদিকে নবী তাকে সঙ্গ দেওয়ার কাজটা করেন। তাতে ১৫.১ ওভারেই জয়ের বন্দরে পৌছে যায় আফগানিস্তান। ৩৬ বলে ৪৭ রান করে অপরাজিত থাকেন নাইব। তার ইনিংসে ছিল ৪টি চার ও ২টি ছয়ের মার। তাকে সঙ্গ দেওয়া নবী অপরাজিত থাকেন ২৩ বলে ১৬ রান করে।
এর আগে ব্যাট করতে নেমে শুরু থেকেই আফগানিস্তানের বোলিংয়ের সামনে ধুঁকতে থাকে নিউগিনি। আইসিসির সহযোগী দেশটির ব্যাটিং লাইনে প্রথম আক্রমণটা করেন মোহাম্মদ নবী। আসাদ ভালাকে ৩ রানে ফিরিয়ে দলকে প্রথম লিড এনে দেন এই অফস্পিনার।
ফজল হক ফারুকি আক্রমণ এসেই পরপর দুই বলে দুই উইকেট তুলে নেন। প্রথম বলে ফেরান লেগা সাকাকে। এক বল খেলে রানের খাতাই খুলতে পারেননি এই ব্যাটার। এরপর ফারুকির দ্বিতীয় আঘাতের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান সেসে বাউ। নাভিন উল হক এসে ফেরান হিরিহিরিকে। ৩ বলে ১ রান করেন এই ব্যাটার। পাওয়ার প্লে’তে আরও একটি উইকেট হারিয়ে নিউগিনির সংগরহ দাঁড়ায় ৫ উইকেটে ৩০ রান।
এরপর জুটি বেঁধে কিছু একটা করার চেষ্টা করেন চাঁদ সুপার ও কিপলিন ডোরিগা। দুজন মিলে দলকে এগিয়ে নেওয়ার প্রাক্কালেই আবার আঘাত। এবার দৃশ্যপটে নূর আহমেদ। তার সঙ্গে আরেক লেগি রশিদ খানের যুগলবন্দিতে ২৬ বলে ৯ রান করে রান আউট হয়ে ফেরেন চাঁদ। ১০ ওভারে নিউগিনির সংগ্রহ দাঁড়ায় ৬ উইকেট হারিয়ে ৪৮ রান।
নরমান ভানুয়া ক্রিজে এসে ৭ বল খেলে রান আউটের শিকার হলে অল্প রানে আউটের শঙ্কা ঝেঁকে বসে নিউগিনিকে। দলের এই উইকেট হারানোর মিছিলে ক্রিজে এসেই আক্রমণ করেন আলেই নাও। করিম জানাতকে এক ওভারেই হাঁকান দুই চার। ডোরিগা আর নাও মিলে দলকে সামনে নিতে থাকেন। ১৮তম ওভারে ডোরিগা ২৭ রানে আউট হলে ভাঙে এই জুটি।
এরপর আর বেশিদূর যেতে পারেনি পাপুয়া নিউগিনি। আফগানদের দুর্দান্ত বোলিং লাইনের সাড়াশি আক্রমণে গুটিয়ে যায় একশর আগেই। এর মধ্যে দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের এক আসরে একশ বা তার নিচে অলআউটের ঘটনা ঘটলো ৯ বার, যা বিশ্বকাপের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।