খেলাধুলা

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে সুপার এইটে শুভসূচনা ইংল্যান্ডের

আলজারি জোসেফের ব্যাক লেংথের বলটা মিড উইকেটে ঠেলেই দৌড় দেন জনি বেয়ারস্টো। যে দৌড়ের মাধ্যমে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের চলমান আসরের সুপার এইটে শুভসূচনা করলো বর্তমান চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ড। সুপার এইটে নিজেদের প্রথম ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ৮ উইকেটের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে জস বাটলারের দল।

আজ বৃহস্পতিবার (২০ জুন) সেন্ট লুসিয়ার ড্যারেন স্যামি জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ২০ ওভারে ৪ উইকেট হারিয়ে ১৮০ রান সংগ্রহ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। জবাব দিতে নেমে ফিল সল্টের বীরত্বে ১৫ বল হাতে রেখেই ৮ উইকেটের বড় জয় পায় ইংলিশরা।   

রান তাড়ায় নেমে শুরু থেকেই চড়াও হয়ে খেলতে থাকেন দুই ইংলিশ ওপেনার ফিল সল্ট ও জস বাটলার। পাওয়ার প্লে’র আগেই দলীয় রান পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন তারা। তাতে ইংল্যান্ডের হয়ে আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যেকোনো উইকেটে পঞ্চাশ রানের জুটি গড়ার দিক দিয়ে যৌথভাবে শীর্ষে ঊঠে যান বাটলার ও সল্ট। ১৩ ইনিংসে তারা মোট ৭ বার পঞ্চাশ রানের জুটি গড়েছেন।

পাওয়ার প্লে’তে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ৫৮ রান। তবে বেশিদূর যেতে পারেননি এই জুটি। অষ্টম ওভারে আক্রমণে এসেই বাটলারকে ফেরান রোস্টন চেজ। ২২ বলে ২টি চারের মারে ২৫ রান করেন ইংলিশ দলপতি। বাটলারের আউটের পর ক্রিজে আসেন মঈন আলী। ১০ ওভারে ইংল্যান্ডের সংগ্রহ দাঁড়ায় ১ উইকেট হারিয়ে ৮৩ রান। 

মঈন আলী শুরুটা ভালো করলেও ইনিংস বড় করতে পারেননি। ১০ বলে ২ চারে ১৩ রান করে আন্দ্রে রাসেলের বলে চার্লসের হাতে ক্যাচ দেন ইংলিশ অলরাউন্ডার। এরপর ফিল সল্টের সঙ্গে জুটি বাঁধেন জনি বেয়ারস্টো। ইংল্যান্ডও দলীয় একশ রান পার হয়ে যায়।

ফিল সল্ট দারুণ শুরু করলেও ধীরে ধীরে নিজেকে খোলসে বন্দি করে নেন। আক্রমণটা শুরু করেন ১৬তম ওভারে। শেফার্ডকে চার মেরে ফিফটির ঘর ছুঁয়ে আরও চড়াও হয়ে ওঠেন সল্ট। শেফার্ডের এক ওভার থেকেই তুলে নেন ৩০ রান। হাঁকান সমান ৩টি করে ছক্কা ও চার। সেই ওভারেই জয়ের আরও কাছে চলে আসে ইংলিশরা। 

এর আগে টস হেরে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা দেখেশুনে করেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের দুই ওপেনার জনসন চার্লস ও ব্রেন্ডন কিং। মার্ক উডের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে চড়াও হওয়ার ইঙ্গিত দেন চার্লস। পরের ওভারেই রিচ টিপলির ওভারে একটি করে চার ও ছক্কায় আসে ১২ রান।

খানিকবাদেই রিটায়ার্ড হার্ট হয়ে ফিরে যান কিং। ক্রিজে আসেন নিকোলাস পুরান। পাওয়ার প্লে’তে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৫৪ রান। আক্রমণের ধার বজায় রেখে চার-ছক্কা আর স্ট্রাইক রোটেশনে রানের চাকা সচল রাখেন চার্লস ও পুরান। তবে পাওয়ার প্লে’র পর কিছুটা স্লো ব্যাটিং করেন চার্লস। তাতে ১০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ দাঁড়ায় বিনা উইকেটে ৮২ রান। 

পাওয়ার প্লে’র পর থেকেই ধুঁকছিলেন চার্লস। বেশ নড়েবড়ে মনে হচ্ছিলো তাকে। স্পিনার মঈন আলী ১২তম ওভারে আক্রমণে আসতেই উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে আসেন ক্যারিবীয় ওপেনার। মঈন আলীকে উড়িয়ে মারতে গিয়েছিলেন চার্লস। তবে ব্যাটে-বলে ঠিক মিললো না। লং অনে দারুণ এক ক্যাচ নেন হ্যারি ব্রুক। 

চার্লসের বিদায়ে ক্রিজে আসেন অধিনায়ক পাওয়েল। পুরান ও পাওয়েল মিলে দলীয় রান একশর ঘর পার করেন। ধীরে ধীরে চড়াও হতে শুরু করেন দুজন। তবে এই জুটি বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি। ১৫তম ওভারের শেষ বলে লিয়াম লিভিংস্টোনকে মারতে গিয়ে মার্ক উডের তালুবন্দি হন ১৭ বলে ৫ ছক্কায় ৩৬ রান করা পাওয়েল।

এর মধ্যে অবশ্য একটি রেকর্ড ছুঁয়ে ফেলেন পাওয়েল। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে কোনো দলের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর রেকর্ডে গেইলকে ছাড়িয়ে যান এই বাঁহাতি। দেশের হয়ে বিশ ওভারের ক্রিকেটে পাওয়েলের ছক্কা এখন ৩২টি। যা ক্রিস গেইলের থেকে ১টি বেশি। ভারতের বিপক্ষে ৩৫টি ছক্কা হাঁকিয়ে সবার উপরে পুরান। 

পাওয়েলের বিদায়ে ক্রিজে আসেন আন্দ্রে রাসেল। এর খানিকবাদেই সাজঘরে ফিরে যান ৩২ বলে ৩৬ রান করা পুরান। আন্দ্রে রাসেল ভয়ংকর হয়ে ওঠার আগেই ফিল সল্টের ক্যাচ বানিয়ে তাকে ১ রানে ফেরান আদিল রশিদ। 

এরপর জুটি বাঁধেন শেরফান রাদারফোর্ড ও রোমারিও শেফার্ড। দুজনের জুটিটা শুরু হয় ধীরগতিতে। তবে রাদারফোর্ড একটু আক্রমণাত্মক হয়ে খেলেন। ইনিংসের শেষ ওভারে তাদের সামনে ছিল জোফরা আর্চারের চ্যালেঞ্জ। তাতে মোটামুটি উতরে যান রাদারফোর্ড। এক ছক্কায় আর্চারের ওভার থেকে ১২ রান তোলেন তিনি। তাতেই ভালো সংগ্রহ পায় ক্যারিবীয়রা।