খেলাধুলা

চিরনিদ্রায় শায়িত গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর

আরও একবার বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনে এলেন গ্র্যান্ডমাস্টার জিয়াউর রহমান। কিন্তু এবার তাকে নিয়ে আসা হলো সাদা রঙের  লাশবাহী গাড়িতে। নিথর দেহে পল্টনের জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের নিচতলায় এলেন গতকাল পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করা জিয়াউর। মাত্র পঞ্চাশে জীবনের শেষ চাল চেলে অন্তিমের পথে যাত্রা শুরু করলেন বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার।

শুক্রবার (০৫ জুলাই, ২০২৪) দাবা বোর্ডে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ খেলার সময় হঠাৎ চেয়ার থেকে পড়ে যান জিয়াউর। এরপর হাসপাতালে নেওয়া হলেও তিনি ফিরে আসতে পারেননি। আজ চিরচেনা জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে অনুষ্ঠিত হয় তার জানাজা। তার জানাজায় অংশ নিতে এবং শ্রদ্ধা জানাতে ক্রীড়াঙ্গনের অনেকেই উপস্থিত হয়েছিলেন। দাবাড়ুর কফিনে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেছে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন (বিওএ), দাবা ফেডারেশন, তায়কোয়ান্দো ফেডারেশন, বিএসজেএসহ নানা প্রতিষ্ঠান। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা শেষে জিয়াউরের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় মোহাম্মদপুরে তাজমহল রোডে। সেখানে আরেক দাবাড়ু বাবা পয়গম আহমেদের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন জিয়াউর। 

২০০২ সালে বাংলাদেশের দ্বিতীয় গ্র্যান্ডমাস্টার হন জিয়াউর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক করা জিয়াউর রহমান ক্যারিয়ার হিসেবে বেছে নেন দাবাকে। জিয়ার ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ রেটিং ছিল ২৫৭০। যেটা পেয়েছিলেন ২০০৫ সালে। যা এখনো বাংলাদেশের সর্বোচ্চ। লম্বা ক্যারিয়ারে অনেক অর্জন জিয়াউরের। দেশের হয়ে সর্বোচ্চ ১৪ জাতীয় লিগের পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। কিন্তু সব অর্জন, মানুষের ভালোবাসাকে পেছনে ফেলে অন্তিমের পথে চলে গেলেন।

তার এই প্রস্থানকে দাবার অপূরণীয় ক্ষতি বলছেন বাংলাদেশ দাবা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ শাহাবুদ্দিন শামীম, ‘অনেকেই টুর্নামেন্টের পুরস্কার ও নানা সুযোগ-সুবিধা কম হলে খেলতে চাইতেন না। জিয়াউর কখনোই এ রকম ছিলেন না। সব টুর্নামেন্টেই তিনি অংশগ্রহণ করতেন। যেন অন্যরা তার মাধ্যমে শিখতে পারে।’

জিয়াউরের স্মৃতি ধরে রাখার পরিকল্পনার কথাও জানান ফেডারেশন সাধারণ সম্পাদক, ‘জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ ভবনেই আলাদা একটি ফ্লোর পাওয়ার কথা ছিল আমাদের। সেখানে গ্র্যান্ডমাস্টার কর্নারের পরিকল্পনা ছিল। সেটা যতদিন না হয় আমরা বর্তমান দাবা ফেডারেশন ক্রীড়াকক্ষকেই জিয়াউরের নামকরণ করার উদ্যোগ নেব।’

দাবা ফেডারেশনের অন্যতম সহ-সভাপতি তরফদার রুহুল আমিন বলেন, ‘গতকাল মাননীয় মন্ত্রী (নাজমুল হাসান পাপন) এবং আজ আমাদের ক্রীড়াঙ্গনের আরেকজন অভিভাবক শাহেদ ভাই (বিওএ মহাসচিব) তার পরিবারের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন। একটি বড় আর্থিক অঙ্ক স্থায়ী আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট) করে পরিবারের একটি সাপোর্ট প্রদান করার জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ দাবা ফেডারেশন ও আমরা ব্যক্তিগতভাবে নেব।’ 

বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব সৈয়দ শাহেদ রেজা উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘জিয়াউরের অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই শোকাহত। তার যে পবিত্র স্থান, যে স্থানকে সে ভালোবাসত, সেখান থেকেই সে চলে গেল। দাবা খেলা অবস্থাতেই মারা গেল। ভালো একজন খেলোয়াড়কে হারিয়েছি আমরা।’