বরগুনার আমতলীতে সেতু ভেঙে খালে পড়ে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন তিন ইউনিয়নের বাসিন্দারা। ফলে চলাচলের পাশাপাশি বিভিন্ন পণ্য পরিবহনে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন হলদিয়া, চাওড়া ও আমতলী সদর ইউনিয়নের অন্তত দুই লাখ মানুষ। গত ২২ জুন এই হলদিয়া সেতু ভেঙে মাইক্রোবাস খালে পড়ে মারা যান দুই শিশুসহ ৯ জন। এরপর থেকেই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন বাসিন্দারা।
স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বরগুনা জেলায় সব থেকে বেশি ফসল উৎপাদন হয় আমতলীর হলদিয়া ও চাওড়া ইউনিয়নে। এই দুটি ইউনিয়নের কৃষকরা চলতি বছর প্রায় ৪০০ কোটি টাকার শুধু তরমুজ বিক্রি করেছেন। ক্রিভুজ আকৃতির সুবন্ধি নদী বেষ্টিত এই দুটি ইউনিয়ন ও আমতলী সদর ইউনিয়নের অধিকাং কৃষক চলাচলের জন্য হলদিয়া সেতু ব্যবহার করতেন। সেতুটি ভেঙে পড়ায় বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। ফলে খেত প্রস্তুতের জন্য সার ও চাষাবাদের জন্য আমতলী শহর থেকে বীজ সড়ক পথে আনতে বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন তারা।
আরও পড়ুন: ভেঙে পড়া সেতু নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ, এলজিইডি প্রকৌশলী বললেন ‘সঠিকভাবে কাজ হয়েছে’
স্থানীয়রা জানান, সুবন্ধি নদের ওপরে প্রায় ২০টি সেতু আছে। একই সময়ে দুই জন ঠিকাদার দিয়ে নির্মাণ করা সব সেতুর কাজ হয়েছে নিম্নমানের। তাই চার থেকে পাঁচ বছরের মধ্যে সবকটি সেতু ঝূকিঁপূর্ণ হয়ে গেছে।
হলদিয়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মিন্টু মল্লিক বলেন, ‘হলদিয়া সেতুটি ঝূকিঁপূর্ণ ছিলো। কিন্তু এই সেতুটি অন্য সব সেতু থেকে কম ঝূকিঁপূর্ণ ছিল। তাই এই সেতু দিয়েই মানুষরা চলাচল করতেন। গত ২২ জুনের দুর্ঘটনার পর এখন যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন তিন ইউনিয়নের অন্তত ২ লাখ মানুষ।’
হলদিয়া এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহিম বলেন, ‘কী কমু বাবা। সেতুটি ভাঙার পর হইতে আমতলী যাইতে পারি নাই।’
আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে ৯ জন নিহতের ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন
একই এলাকার কৃষি উদ্যোক্তা আল আমিন বলেন, ‘আমাদের এই ইউনিয়নের বেশিরভাগ মানুষ কৃষির ওপর নির্ভরশীল। সেতুটি ভেঙে যাওয়ার পর থেকে এলাকায় সার, বীজ এবং কৃষি কাজে ব্যবহৃত অনন্য মালামাল আনা যাচ্ছে না। দুর্ভোগে আছি আমরা।’
চাওরা এলাকার বাসিন্দা নাসির বলেন, ‘ঠিকাদার ও এলজিইডি’র গাফিলতির কারণেই ভেঙেছে সেতু। ঘটেছে প্রাণহানি। কৃষিখাত বাঁচাতে এখানে গার্ডার ব্রিজ নির্মাণ করা উচিত।’
আরও পড়ুন: সেতু ভেঙে ৯ জনের মৃত্যু: ঠিকাদারের শাস্তি দাবিতে বিক্ষোভ
আমতলী উপজেলা এলজিইডি’র প্রকৌশলী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘বেশিরভাগ সেতুই ঝুকিঁপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। সেতুগুলো ভারী গাড়ি চলাচলের জন্য তখন নির্মাণ করা হয়নি। কম টাকায় মানুষের চলাচলের জন্য নির্মাণ করা হয়েছিল। জীবিকা নির্বাহের জন্য কৃষি পণ্য বোঝাই ভারী ট্রাক নিয়ে ব্রিজ পারাপার করেন স্থানীয়রা। সেতুর বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে জানিয়েছি।’
বরগুনা-১ আসনের সংসদ সদস্য গোলাম সরোয়ার টুকু রাইজিংবিডিকে বলেন, ‘ভাঙা সেতুটি অপসারণ করে অল্প সময়ের মধ্যে নতুন ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। আমি মন্ত্রণালয়ে কথা বলেছি। একটু সময় লাগছে। উন্নত মানের ব্রিজ নির্মাণের পরিকল্পনা আছে আমাদের।’
প্রসঙ্গত, গত ২২ জুন দুপুরে বরগুনার আমতলী উপজেলায় সেতু ভেঙে বিয়ের যাত্রী নিয়ে একটি মাইক্রোবাস খালে পড়ে যায়। পরে ওই মাইক্রোবাসে থাকা ৯ জনের লাশ উদ্ধার হয়। এদের মধ্যে ছিলেন একই পরিবারের ৭ জন। ২৩ জুন মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ভদ্রাসনের চরপাড়া গ্রামে মারা যাওয়া সাত জনের জানাজা ও দাফন সম্পন্ন হয়।