খেলাধুলা

নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ‘তারুণ্যের উৎসব’

অটোমেটিক মেশিনে ভর করে এগিয়ে আসছে ‘ডানা ৩৬’। দুই পাখা মেলে মুখে হাসি নিয়ে জানান দিচ্ছে, ‘আমি চলে এসেছি।’

‘ডানা ৩৬’- বিপিএলের অফিসিয়াল মাসকট। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের এগারোতম আসর আলাদা রং পাবে তা আগেই ধারনা ছিল। সেই মোতাবেক প্রথমবারের মতো বিপিএলে যুক্ত হলো মাসকট। ‘ডানা ৩৬’ মাসকটটি- ডানা বা পাখা প্রসারিত করা একটি ‘‘সাদা পায়রা’’ যা শান্তির প্রতীক এবং প্রতিপাশে ১৮টি করে মোট ৩৬টি রঙিন পালক উপস্থাপন করে ৩৬ শে জুলাই ২০২৪ পর্যন্ত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের অবিস্মরণীয় স্মৃতিকে, যা প্রতিটি স্বপ্নবাজ, উদ্যমী, অপ্রতিরোধ্য তরুণকে নতুন বাংলাদেশ গড়ার অনুপ্রেরণা যোগায়।

যার গড়ন, ব্যবহৃত রং ও অঙ্গভঙ্গি উপস্থাপন করে স্বাধীনতা, শান্তি, মুক্তি, তারুণ্য, প্রাণবন্ততা, উৎসব এবং সীমাহীন সম্ভাবনাকে। এখানে ‘‘ডানা’’ শব্দটি পাখা অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে, যা স্বাধীনতা ও মুক্তির প্রতীক।

‘এসো দেশ বদলাই, পৃথীবি বদলাই’ স্লোগানে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনায় ও বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ব্যবস্থাপনায় নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে শুরু হচ্ছে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’। যার আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হবে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বিপিএল দিয়ে এবং শেষ হবে ২০২৫ সালের ১৯ ফেব্রয়ারি সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী ফুটবলের ফাইনাল দিয়ে।’

বাংলাদেশ ক্রীড়াঙ্গনের একঝাঁক তারকা ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণে রাজধানীর একটি পাঁচ তারকা হোটেলে ‘তারুণ্যের উৎসব ২০২৫’ এর ঘোষণা দেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। এই সময়ে বিপিএলের মাসকট উন্মোচন করা হয়।

এই আয়োজনে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নারী ও পুরুষ দলের অধিনায়ক নিগার সুলতানা জ্যোতি ও নাজমুল হোসেন শান্ত। মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবাল, কায়সার হামিদ, হেমন্ত ভিনসেন্ট, তপু বর্মন, মাবিয়া আক্তার সীমান্ত ও জোবেরা রহমান লিনু বাড়তি রং দিয়েছেন।

আয়োজকরা এই আয়োজনে যুক্ত করতে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের। রাজধানীর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ এবং বিয়াম স্কুলের শিক্ষার্থীরা প্রতিনিধি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠান শুরুর আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের শহীদদের প্রতি সম্মান জানিয়ে, এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। এছাড়া আন্দোলনের সময়ের একটি প্রামাণ্যচিত্রও তুলে ধরা হয়।

উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেছেন, ‘‘জুলাই গণ অভ্যুত্থানের শোককে শক্তিতে রূপান্তরের জন্য ‘এসো দেশ বদলাই, পৃথিবী বদলাই’ স্লোগানকে সামনে রেখে আয়োজিত হতে যাচ্ছে তারুণ্যের উৎসব। আমরা সুখে, দুঃখে আনন্দ, বেদনায় সর্বদা গণ অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মরণ করতে চাই এবং তাদের এই ত্যাগের স্পৃহা বাস্তবায়নে কাজ করে যেতে চাই। খেলাধুলা আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে। বিশেষ করে ক্রিকেট আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ করে। ভিন্ন ক্ষেত্রে যত মতভেদ থাকুক না কেন খেলার ক্ষেত্রে আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে যাই। জাতীয় ঐক্য বজায় রেখে দেশ পুর্নগঠন ও রাষ্ট্র সংস্কারে এগিয়ে যাওয়াই এই তারুণ্যের উৎসবের অন্যতম উদ্দেশ্য। খেলাধুলাসহ নানা আয়োজনে তারুণ্যের উৎসব সারা দেশব্যাপি অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।’’

এই আয়োজন সফল করতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকায় অন্তর্বতীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মো. ইউনূসকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া। তার বক্তব্যের পর বিপিএলের মাসকট উন্মোচন এবং থিম সং পরিবেশন করা হয়।

যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব রেজাউল মাকসুদ জাহেদী বলেছেন, ‘‘যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়সহ আরও সাতটি মন্ত্রণালয় নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সারা দেশব্যাপি উৎসবমুখর পরিবেশে উদযাপিত হবে তারুণ্যের উৎসব ২০২৫। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের মঞ্চকে কাজে লাগিয়ে ছোট ছোট সৃষ্টিশীল উদ্যোগ বাস্তবায়ন করে আমরা তারুণ্যের উৎসব উদযাপন করতে চাই। নতুন আঙ্গিকের এই বিপিএলের লক্ষ্য,  ক্রিকেটের শক্তিকে কাজে লাগিয়ে দেশের তরুণ সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা। এতে গ্রাম, শহর, থানা সর্বোপরি পুরো দেশের তরুণ সমাজকে একত্রিত করে উদযাপন করা হবে তারুণ্যের উৎসব।’’

তারুণ্যের এই উৎসবে যা যা থাকবে- বিপিএল চলাকালীন ‘শহীদ মুগ্ধ কর্নারে’ বিনামূল্যে পানি পাবেন দর্শকরা। সেখানে থাকা কিউআরকোডের মাধ্যমে স্বেচ্ছায় জুলাই ফাউন্ডেশনে অনুদানও দিতে পারবেন তারা। পরিবেশ সংরক্ষণ ও রিসাইক্লিংয়ের সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে প্রতিটি ভেন্যুতে থাকবে ‘বর্জ্য-শূন্য’ জোন। দর্শকদের ভোগান্তি কমাতে বিপিএলের সব টিকেট অনলাইনে বিক্রির ব্যবস্থা করার চেষ্টাও করছে বিসিবি।

বিপিএলের তিন ভেন্যু ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটে ‘মিউজিক ফেস্ট’ নামে আয়োজন করা হবে তিনটি কনসার্ট। বিপিএল চলাকালে প্রতি শুক্র ও শনিবার একটি করে ছেলেদের ৮টি ও মেয়েদের ৮টি ফুটবল ম্যাচ আয়োজন করা হবে। এছাড়া ‘অনূর্ধ্ব-১৫ ন্যাশনাল কাপ’ এর আয়োজন করা হবে। প্রতিভা অন্বেষণে বিতর্ক প্রতিযোগিতা, কুইজ প্রতিযোগিতা, আন্তঃস্কুল ও কলেজ প্রতিযোগিতা, রচনা প্রতিযোগিতা, স্কিল প্রতিযোগিতা ও জুলাই-৩৬ বিষয়ক চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা আয়োজনের পরিকল্পনা রয়েছে।