খেলাধুলা

একজন ভালো অধিনায়কই গুরুত্বপূর্ণ হাথুরুসিংহের কাছে

সাকিব আল হাসানের জন‌্য বাংলাদেশের অধিনায়ক নির্বাচিত হওয়া অনেকটা মিউজিক‌্যাল চেয়ার গেমের মতো। যেখানে কখনো সাকিব জিতে যান, কখনো হেরে যান। তিনি কখন অধিনায়ক হবেন, কখন পদ হারাবেন তা নিজেও বলতে পারেন না।

নানা পথ, অলিগলি পেরিয়ে, নানা নাটকীয়তা পর্ব শেষ করে দেশের ক্রিকেটের ধ্রুবতারা সাকিব এখন জাতীয় দলের তিন ফরম‌্যাটেরই অধিনায়ক। ভিন্ন ফরম‌্যাটে ভিন্ন অধিনায়ক যে তত্ত্ব সেই ধারা ভেঙে বাঁহাতি অলরাউন্ডার এখন দলনেতা।

তবে সাকিবের এই অধিনায়কত্বের পথ এতোটাও মসৃণ ছিল না। ২০০৯ সালে সাকিব যখন প্রথম বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেন তখন দল ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে। তিন ফরম‌্যাটে দলের অধিনায়ক তখন মাশরাফি বিন মুর্তজা। টেস্ট সিরিজে চোটে পড়লে সাকিব হয়ে যান অধিনায়ক। এক বছর পর আবার নিউ জিল‌্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে মাশরাফি চোটে পড়েন। সাকিব হয়ে যান ওয়ানডে অধিনায়ক। তার হাত ধরেই ঘরের মাঠে হয় নিউ জিল‌্যান্ড বধ।   ওই ইনজুরি থেকে ফিরতে লম্বা সময় মাশরাফিকে বাইরে থাকতে হয়। সাকিবের নেতৃত্বে দল খেলে ২০১১ বিশ্বকাপ। কিন্তু ওই বছরই তাকে সরিয়ে দেওয়া হয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণ দেখিয়ে।  মুশফিকুর রহিম পান জাতীয় দলের দায়িত্ব। মুশফিকুর রহিম তিন বছর দায়িত্ব পালনের পর তার থেকে ‘বোঝা’ কমায় বিসিবি। টেস্ট অধিনায়কত্ব রেখে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির অধিনায়ক করা হয় মাশরাফিকে। সীমিত পরিসরে মাশরাফির হাত ধরে বদলে যায় বাংলাদেশ।   ২০১৭ সালে মাশরাফি যখন টি-টোয়েন্টি থেকে অবসর নেন, তখন সাকিব পুনরায় অধিনায়ক নির্বাচিত হন। তখন তিন ফরম‌্যাটে তিন অধিনায়ক তত্ত্বে চলে যায় বিসিবি। মুশফিক টেস্টে, মাশরাফি ওয়ানডে এবং সাকিব টি-টোয়েন্টিতে।

সময়ের পরিক্রময়ায় মুশফিক টেস্ট অধিনায়কত্ব ছাড়লে সাকিব দায়িত্ব পান। এ সময়ে মাশরাফির অনুপস্থিতিতে সাকিব ওয়ানডেতে নেতৃত্ব দেন তিন ম‌্যাচে। সঙ্গে টি-টোয়েন্টিতে তার নেতৃত্বেই খেলতে থাকে বাংলাদেশ।

সবকিছু ঠিকঠাকই চলছিল। কিন্তু ২০১৯ সালে সব এলোমেলো হয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রিকেটে। স্পট ফিক্সিংয়ের প্রস্তাব লুকিয়ে নিষিদ্ধ হন সাকিব। সেখান থেকে টেস্টে মুমিনুল ও টি-টোয়েন্টিতে মাহমুদউল্লাহ হন অধিনায়ক। আর মাশরাফি ওয়ানডে অধিনায়কত্ব ছাড়ায় বিসিবি বেছে নেয় তামিমকে।

কিন্তু অধিনায়কত্বের সেই মিউজিক‌্যাল চেয়ার সাকিবের পিছু ছাড়েনি। ক্রিকেটে ফিরে সাকিব পেয়ে যান টেস্ট এবং টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্ব। সবশেষ গত ১১ আগস্ট তার মাথায় যোগ হয় ওয়ানডের অধিনায়কত্বও। সময়ের সেরা ক্রিকেটারকে বেছে নিতে বিসিবির চিন্তা করতে হয়নি খুব একটা। তিন অধিনায়ক থেকে দেশের ক্রিকেট আবার এক অধিনায়কের কাঁধে।

সাকিব যে এখন তিন ফরম‌্যাটে বাংলাদেশের অধিনায়ক তা কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহের পছন্দ হয়েছে বোঝা গেল তার কথায়,‘একজন ভালো অধিনায়ক থাকা সবসময়ই ভালো। সুতরাং, এটি তিনটি ফরম্যাট বা একটি ফরম‌্যাট কিনা তা কোন ব্যাপার না।’

তবে তিন সংস্করণেই সাকিব অধিনায়ক থাকবেন কি না বা বিশ্বকাপের পরও তাকে ওয়ানডের নেতৃত্বে দেখা যাবে কি না, এই সিদ্ধান্ত তার সঙ্গে আরও আলোচনা করে পরে নেওয়া হবে বলে জানান বিসিবি সভাপতি।

দেশের টেস্ট ও টি-টোয়েন্টি দলের নেতৃত্বে আগে থেকেই আছেন ৩৬ বছর বয়সী এই অলরাউন্ডার। তবে এই বয়সে তিন ফরম‌্যাটে নেতৃত্ব দেওয়া কঠিন তা বলতে দ্বিধা করেননি হাথুরুসিংহেম ‘বর্তমানে তিন ফরম্যাটের অধিনায়ক থাকাটাই খেলোয়াড়দের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। তাই বিভিন্ন ফরম্যাটে কোচ, অধিনায়ক এবং খেলোয়াড়দের মধ্যে যোগাযোগ সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’